কক্সবাজার ও উখিয়া প্রতিনিধি

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

টেকনাফে ১০২ ইয়াবা কারবারির আত্মসমর্পণ

* সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবা ও ৩০ অস্ত্র জমা * দেওয়া হয়েছে ৯ শর্ত

সরকারের দেওয়া ৯ শর্তে গতকাল শনিবার আত্মসমর্পণ করেছেন কক্সবাজারের সাবেক এমপি বদির তিন ভাইসহ ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ী। এর মধ্যে ৩৫ জন গডফাদার রয়েছেন। এ সময় তারা ৩ লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা ও ৩০টি দেশীয় পিস্তল জমা দেন। দুপুর ১২টার দিকে টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন তারা।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন, উখিয়া টেকনাফের সংসদ সদস্য শাহিন আক্তার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও জেলা পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ও টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ আইশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এছাড়াও চকরিয়া-পেকুয়ার সংসদ সদস্য জাফর আলম, কক্সবাজার-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, মহেশখালী কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে কয়েকজন হলেন রবিউল ইসলাম, মনসুর আলী, খালেদ হোসেন, মো. আলম, মো. রাসেল, নুরুল আমিন, বোরহান উদ্দিন প্রমুখ। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘সেফহোম’ থেকে শীর্ষ ইয়াবাকারবারিদের কক্সবাজারের টেকনাফে আত্মসমর্পণ মঞ্চে আনা হয়। আত্মসমর্পণকারীদের দেখতে তাদের স্বজন ও এলাকার হাজারো মানুষ ভিড় জমান। তালিকাভুক্ত কয়েকজন ইয়াবা কারবারিকেও অনুষ্ঠানস্থলে দর্শক হিসেবে কাছে দেখা গেছে।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, আত্মসমর্পণকৃতদের বিরুদ্ধে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধারের মামলা হবে। আত্মসমর্পণকারীদের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দেয়া হয়েছে ৯ শর্ত। শর্তগুলো হলো ১. নিজের হেফাজতে থাকা সব ইয়াবা ও অবৈধ অস্ত্র পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। ২. আত্মসমর্পণের আগে দায়ের হওয়া মামলা ও বিচার কার্যক্রম স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। ৩. ইয়াবা ব্যবসায় নিজের/পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়স্বজনের নামে-বেনামে অর্জিত সব সম্পদ দুদক, সিআইডির মানিলন্ডারিং শাখা ও এনবিআরের মাধ্যমে যাচাই করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ৪. আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় দায়ের হওয়া মামলায় সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে সহায়তা প্রদান করা হবে। ৫. যেসব মাদক ব্যবসায়ী এখনো সক্রিয় তাদের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে। ৬. আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত হলে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকায় মাদকবিরোধী কর্মকা- করতে হবে। ৭. ভবিষ্যতে কখনো মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত অপরাধে জড়িত হওয়া যাবে না। ৮. আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে যে মামলাটি রুজু হবে, সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে তাদের আইনগত সুবিধা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। ৯. মাদক ব্যবসার মাধ্যমে নিজের পরিবারের আত্মীয়স্বজনের নামে ও বেনামে অর্জিত সব স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি যাচাইয়ের জন্য দুদক, (সিআইডি মানিলন্ডারিং শাখা) এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সব সংস্থার কাছে তাদের তথ্যাদি প্রেরণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থার মাধ্যমে তাদের অর্জিত সব স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি যাচাই সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে কক্সবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির তিন ভাইসহ ৮ স্বজন রয়েছেন। তারা হলেন বদির ভাই আবদুশ শুকুর, আমিনুর রহমান ওরফে আবদুল আমিন, মো. ফয়সাল রহমান ও শফিকুল ইসলাম, ভাগিনা সাহেদ রহমান নিপু, ফুফাতো ভাই কামরুল হাসান রাসেল, খালাতো ভাই মংমং সেন ও বেয়াই শাহেদ কামাল। এ সময় তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেনের সভাপতিত্বে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের প্রতি দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব সহায়তা করা হবে এবং প্রয়োজনে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে যে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন সেটাতে আমরা অবিচল থাকব।

প্রধান আলোচক আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের সাধুবাদ জানাই এবং যারা করেন নেই তাদের নিস্তার নেই। তারা কোনো পার পাবে না। তাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ। প্রতিটি জেলায় এ ধরনের আত্মসমর্পণ কার্যক্রম চলবে বলে জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন অ্যান্ড ক্রাইম) মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ, কক্সবাজার জেলার চারটি আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, আশেকউল্লাহ রফিক, সাইমুম সরওয়ার কমল, শাহীন আক্তার চৌধুরী, বিজিবির রিজিওনাল চিফ, ব্যাটালিয়ন চিফ, জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মুুজিবুর রহমান রহমানসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতারা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দুই শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী টেকনাফর সদরের ইউপি সদস্য বহুল আলোচিত এনামুল হক ও মো. সিরাজ।

প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেন, ইয়াবা পুরো দেশের যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এতে চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে দেশের নতুন প্রজন্ম। এ জন্য ইয়াবা ব্যবসায় জড়িতরা দায়ী। অন্যদিকে ইয়াবা ব্যবসার কারণে টেকনাফসহ পুরো কক্সবাজার জেলার মানুষ সারা দেশের মানুষের কাছে ছোট হয়ে আছে। যেখানে যাই টেকনাফের মানুষ পরিচয় দিলে ঘৃণার চোখে দেখে। অনেক সময় ঢাকা-চট্টগ্রামে হোটেল বা বাসা ভাড়াও দেয় না।

তারা আরো জানান, আমাদের সন্তানদের ভর্তি করাতে গেলে ভর্তি করান না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব কিছু বুঝতে পেরে আমরা দেশকে ইয়াবার আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close