বদরুল আলম মজুমদার ও নাঈমুল হাসান, টঙ্গী (গাজীপুর)

  ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

ইজতেমা শুরু

লাখো মুসল্লি তুরাগতীরে

জুমার বৃহত্তম জামাত আজ

শান্তি-সৌহার্দ আর ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে আজ পবিত্র জুমার দিনে শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা। এবার ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মুসল্লি এরই মধ্যে টঙ্গীর তুরাগতীরে সমবেত হয়েছেন। তাঁবু টানিয়ে তার নিচে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির এই একসঙ্গে বাস-নাওয়া, খাওয়া সমাজে সম্প্রীতির কথাই বলে যায়। ফলে ইজতেমা ময়দান পরিণত হয়েছে বিশ্ব মুসলিমদের মিলনমেলায়। চলছে ইসলামের জ্ঞান-গরিমা, দাওয়াত, ভালোবাসা ও প্রীতির আদান-প্রদান। আগামীকাল শনিবার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম অংশ। দ্বিতীয় অংশ শুরু হবে ১৭ ফেব্রুয়ারি। ইজতেমায় অংশ নিতে গত বুধবার থেকেই মুসল্লিরা তুরাগ তীরে আসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার মুসল্লিদের ঢল আরো বাড়ে। এদিকে ইজতেমা উপলক্ষে মাঠের সব রকম প্রস্তুতি আগেই শেষ হয়েছে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

বিশ্ব মুসলিমের এই মিলনমেলা শান্তি করতে সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে র‌্যাবও। বিষয়টি জানিয়ে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ইউনিফর্ম পরিহিত পোশাকের চেয়ে দিগুণ থাকবে সাদা পোশাক পরিহিত র‌্যাব। এছাড়া প্রতিটি খিত্তায় সিসি টিভি ক্যামেরা থাকবে। পাশাপাশি হেলিকপ্টার, নদীতে বোট, রাস্তায় জিপ এবং সোটরসাইকেলে টহল দেবে র‌্যাব।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার কারওয়ান বাজারের বিএসইসি ভবনে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আসন্ন বিশ্ব ইজতেমা-২০১৯ উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, স্যোশাল মিডিয়ায় কেউ গুজব ছড়ালে তাৎক্ষণিক কেউ বিশ্বাস করে শেয়ার দেবেন না। না জেনে না শুনে এবং চেক না করে গুজব শেয়ার দিলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। তাবলিগের মুরুব্বি ও মুসল্লিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, আপনারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য এখানে উপস্থিত হবেন। কোনো অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা যেন না ঘটে। এজন্য আপনাদেরও দায় রয়েছে। কোনো অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের কাছে বলবেন। আমরা সব ব্যবস্থা নেব।

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, তৃতীয় পক্ষ যেন কোনো সুযোগ না নিতে পারে, কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য মুরুব্বিরাসহ আয়োজকদেরও সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিবারের মতো এবারও আমাদের সাধ্য অনুযায়ী বিনা পয়সায় পানি ও ওষুধ সরবরাহ করা হবে।

বিদেশি মেহমান : প্রতি বছরের মতো এবারও ইজতেমা ময়দানে শতাধিক দেশের বিদেশি মুসল্লি আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইজতেমা আয়োজক কমিটির একাংশের মুরব্বি ইঞ্জিনিয়ার আবদুন নূর জানান, বিশ্বের অন্তত ১৩০টি দেশের প্রায় ১০ হাজার বিদেশি মেহমান এবারের ইজতেমা ময়দানে অংশ নেবেন। গতকাল দুপুর পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার বিদেশি মেহমান এসেছেন।

পুলিশের ব্রিফিং : গতকাল সকালে ইজতেমাস্থলের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে টঙ্গীর টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস) মাঠে পুলিশ ব্রিফ করে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমানের ব্রিফিংয়ে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের ওসি মো. কামাল হোসেন ও পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ওয়াই এম বেলালুর রহমান জানান, ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব-পুলিশসহ এবার প্রায় ১২ হাজারের মতো নিরাপত্তাকর্মী কাজ করবেন। টঙ্গী ব্রিজ থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা, মন্নু গেট থেকে কামারপাড়া পর্যন্ত এবং তুরাগ নদসহ পুরো এলাকাকে পাঁচটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি সেক্টরে একজন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবেন।

বিশেষ বাস ও ট্রেন সার্ভিস : ইজতেমায় মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে সরকারের বিশেষ ব্যবস্থায় ২২টি ট্রেন ও ৩০০টি বিআরটিসির বাস চলাচল করবে।

টঙ্গী রেল জংশনের স্টেশনমাস্টার হালিমুজ্জামান জানান, ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে আজ জুমা স্পেশাল, কাল ঢাকা টঙ্গীর মধ্যে চারটি স্পেশাল ট্রেন চলবে। ১৭ ফেব্রুয়ারি লাকসাম-টঙ্গী ও জামালপুর-টঙ্গী, ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-টঙ্গী আটটি, টঙ্গী-ঢাকা আটটি, টঙ্গী-আখাওড়া ও টঙ্গী-লাকসামে একটি করে দুটি, টঙ্গী-টাঙ্গাইল দুটি ও টঙ্গী-ময়মনসিংহ চারটি ট্রেন চলাচল করবে। তবে আখেরি মোনাজাতের দিন ২২টি ট্রেন থাকবে, এমনকি প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেন টঙ্গী রেল জংশনে থামবে।

তবে তিন দিনের স্থানে একদিন বাড়িয়ে মোট চার দিনব্যাপী হতে যাচ্ছে এবারের ইজতেমা। ইজতেমার প্রথম দুদিন অর্থাৎ ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি তাবলিগের মুরব্বি মাওলানা মো. জোবায়েরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। পরবর্তী দুই দিন ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৬ সাল থেকে বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা হচ্ছে। শুরুতে ইজতেমা হতো ঢাকার কাকরাইল মসজিদে। এরপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্পে এবং ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা হয়। ইজতেমায় মুসল্লি বাড়তে থাকায় ১৯৬৬ সালে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর এখানেই বিশ্ব ইজতেমা হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close