কূটনৈতিক প্রতিবেদক

  ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

দিল্লি থেকে ফিরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রোহিঙ্গা ইস্যুতে নতুন প্রস্তাব

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিস্তা চুক্তি নিয়ে আমরা আশাবাদী। আর রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ভারতকে নতুন প্রস্তাব দিয়েছি। প্রস্তাবে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ‘সেফ হেভেন’ বা নিরাপদ এলাকা তৈরি করে সেখানে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার কথা বলেছি। গতকাল শনিবার দিল্লি সফর শেষে ঢাকায় ফিরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা শুধু তিস্তা নয়, ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান চাই। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারতের সহায়তা চেয়েছি। আমরা চাই রোহিঙ্গারা তাড়াতাড়ি নিজ দেশে ফিরে যাক।

ভারত সফরের বিষয়ে আবদুল মোমেন বলেন, ভারত সফর সফল হয়েছে। সেখানে খুব আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সব বৈঠকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ভারতকে দেওয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ‘সেফ হেভেন’ বা নিরাপদ এলাকা তৈরি করে সেখানে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক। ওই এলাকায় রোহিঙ্গারা নির্ভয়ে, নিরাপদে, টেকসই জীবন নির্বাহ করতে পারছেন কি না, তা দেখভালের দায়িত্ব নিক মিয়ানমারের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো। সেই রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে থাকুক ভারত, চীন ও আশিয়ান সদস্যভুক্ত দেশ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বন্ধু রাষ্ট্ররা রোহিঙ্গাদের দেখভালের দায়িত্ব নিলে, রাখাইনে ফেরত গিয়ে তারা ভালো আছে কি না পর্যবেক্ষণ করলে, মিয়ানমার তা মেনে নিতে পারে। কারণ, ভারত, চীন বা আশিয়ান সদস্যরা মিয়ানমারের বন্ধুরাষ্ট্র।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই সমাধান সূত্র শুনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘উদ্ভাবনী (ইনোভেটিভ) প্রস্তাব।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন তার প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে ভারতকে বেছে নিয়েছেন। তিন দিনের এই সফরে তিনি বাংলাদেশ-ভারত যুগ্ম পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) পঞ্চম বৈঠকে যোগ দেন। এর আগে গত শুক্রবার ভারতে এক নৈশভোজে নতুন প্রস্তাবের কথা জানিয়ে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমি সুষমা স্বরাজকে বিস্তারিত সব বলি। উনি জানতে চান, কথাটা আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে বলেছি কি না। উত্তরে আমি বলি, বলেছি, তবে সংক্ষিপ্তভাবে। শুনে মোদি ইনোভেটিভ প্রপোজাল বলে মন্তব্য করেছেন। সুষমা তখন বলেন, মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো আপনার বন্ধু। প্রস্তাবটা তাকে দিচ্ছেন না কেন? জবাবে বলি, বন্ধু ঠিকই, কিন্তু প্রস্তাবটা ভারতের কাছ থেকে গেলে মিয়ানমার বেশি গুরুত্ব দেবে।

জেসিসি বৈঠকে মোমেন তিস্তাসহ সব অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনের বিষয়েও গুরুত্ব দিয়েছেন। এই নদীগুলোর মধ্যে কয়েকটি আবার চীন থেকে প্রবাহিত। সে ক্ষেত্রে পানিবণ্টনের মীমাংসা কীভাবে হবে, দ্বিপক্ষীয় না বহুপক্ষীয়, সে বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-ভারত যুগ্ম নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা তা ঠিক করবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রথম সফরে আবদুল মোমেন যে অভিভূত, বারবার সে কথা তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তিনি যখন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি, তখন সমুদ্রসীমা চুক্তির বিষয়টি ওঠে। আশঙ্কা ছিল, ভারত মেনে নেবে কি না। কিন্তু দুই দেশের শীর্ষ নেতার পরিণত নেতৃত্ব অসাধ্য সাধন করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক ঠিক থাকলে ছোটখাটো সমস্যা বড় হয়ে ওঠে না। মিটমাট হয়। কিন্তু সম্পর্ক ঠিক না থাকলে ছোট সমস্যাও বড় হয়ে ওঠে।’

প্রসঙ্গত, দিল্লিতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ পরামর্শক কমিশনÑ জেসিসি বৈঠকে যোগ দিতে গত বুধবার দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন ড. মোমেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close