ঢাবি প্রতিনিধি

  ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

সাধারণ শিক্ষার্থীদের শঙ্কা

এবারের ডাকসু নির্বাচন কি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে

২৮ বছর পর হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন। দেশে মিনি-পার্লামেন্ট খ্যাত এ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়া নিয়ে এখনো শঙ্কায় সাধারণ ছাত্ররা। নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। কিন্তু এখনো বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে ক্রিয়াশীল অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো। এসব শঙ্কা কাটিয়ে নিজেদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারবেন এমন আশা সাধারণ শিক্ষার্থীদের। আর এখন কর্তৃপক্ষের প্রধান চ্যালেঞ্জ ডাকসু নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করা।

ডাকসু নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা মতামত সভায় বসে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। নির্বাচনের জন্য খসড়া প্রস্তুতি ও আচরণবিধি তৈরি করতে সিন্ডিকেট বৈঠক বসে। তখন ছাত্রদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। এছাড়া নিয়মিত ছাত্রদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার নীতিমাল বহাল, ক্যাম্পাসে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান ও একাডেমিক ভবনে নির্বাচনের প্রচারণা চালানোর অনুমতির দাবিও জানায় প্রায় সব কয়টি ছাত্র সংগঠন। তবে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এই দাবিগুলো তোলা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে সব দাবি উপেক্ষা করেই নতুন নীতিমালা তৈরি করেছে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন।

ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর অভিযোগ, বিশ^বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটি ছাত্র সংগঠন এককভাবে অবস্থান করছে। তাই হলের মধ্যে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করলে ছাত্ররা নিজেদের পছন্দমতো প্রর্থীকে ভোট দিতে পারবেন না। যেহেতু হলে অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর অবস্থান নেই; তাই একাডেমিক ভবনে প্রচারণাই তাদের একমাত্র অবলম্বন। আবার লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে কেবলমাত্র নিয়মিত ছাত্রদেরই প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন তাদের এসব যৌক্তিক দাবি উপেক্ষা করে নতুন নীতিমালা তৈরি করেছে। ফলে ডাকসু নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। তাই তারা আন্দোলন করে যাচ্ছেন।

ছাত্র সংগঠনের নেতারা জানান, ১৯৯৪ সালে যখন ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল তখন হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করার দাবি করেছিল ছাত্রলীগ। কিন্তু এই ছাত্রলীগই এবার হলের ভেতরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে।

অন্যদিকে ছাত্রলীগের নেতারা জানান, বর্তমানে যারা হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের বিপক্ষে তারাই একসময়ে হলের ভেতরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে ছিলেন। ছাত্রলীগও মনে করছে, তাদের দাবি যৌক্তিক। তাই তারা শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে হলের ভেতরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে। আর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ভিসি প্রসাশনের। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী এ বিষয়ে জানান, ভিসি প্রশাসন সাধারণ ছাত্রদের দাবিকে উপেক্ষা করে একমাত্র ছাত্রলীগের চাওয়া পূরণ করেছে। হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হলে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব না। তাই তারা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে এই বিষয়ে ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। কয়েকটি মিছিল-মিটিং ও সংবাদ সম্মেলনও করেছেন তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তারা নির্বাচনে যাবেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তাদের এখন মূল লক্ষ্য দাবি আদায়। তফসিল ঘোষণা হলে এবং দাবি না মানা হলে তখন ভেবে দেখবেন নির্বাচনে যাবেন কিনা।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন এ বিষয়ে বলেন, ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে তারা প্রস্তুত। যারা সাধারণ ছাত্রদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত তারা গুজব রটিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করছেন। তাদের দাবির কোনো ভিত্তি নেই। প্রথমবারের মতো ভিসি প্রশাসন আচরণবিধি তৈরি করেছে। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে কর্তৃপক্ষ। ১৯৯৪ সালে হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে থাকলেও বর্তমানে বিরোধী অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের পর বর্তমানে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে সব থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রয়েছে। তখন ছাত্রদলের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাদের অগ্রজরা। কিন্তু বর্তমানে তেমন পরিবেশ নেই।

উল্লেখ্য, উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেয় ঢাবি প্রশাসন। এ লক্ষে ১৩টি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে পরিবেশ পরিষদের বৈঠক করেন বিশ^বিদ্যালয় ভিসি ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।

নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ১৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের আচরণবিধি প্রণয়ন কমিটি করেন ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের ডিন ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল মোকাদ্দেম (এম এম আকাশ) এবং টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভুইয়া।

প্রধান রিটার্নিং অফিসারকে সহায়তার জন্য নিয়োগ পাওয়া পাঁচ রিটার্নিং অফিসারও নিয়োগ দেন ভিসি। তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. দিদার-উল-আলম, গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক অমল কৃষ্ণ হালদার, ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল বাছির এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close