মুন্সীগঞ্জ ও শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি

  ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯

জাজিরায় বসল ষষ্ঠ স্প্যান

দৃশ্যমান হলো পদ্মা সেতুর ৯০০ মিটার

পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে বসানো হল আরো একটি স্প্যান; যার মধ্যে দিয়ে দুই প্রান্ত মিলিয়ে দক্ষিণ জনপদের মানুষের স্বপ্নের এ সেতুর ৯০০ মিটার অংশ দৃশ্যমান হলো।

গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় পদ্মা সেতুর ৩৬ ও ৩৭ নম্বর খুঁটির ওপর ধূসর রঙের স্প্যানটি বসিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়। এ নিয়ে সেতুর জাজিরা প্রান্তের মোট ছয়টি স্প্যান বসানো হল। এর আগে ৩৭ থেকে ৪২ নম্বর খুঁটিতে পাঁচটি স্প্যান বসানোর মধ্যে দিয়ে জাজিরা পাড়ের সঙ্গে পদ্মা সেতুর সংযোগ ঘটে।

এছাড়া মাওয়ার দিকে সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটির ওপর আরেকটি স্প্যান বসিয়ে রাখা হয়েছে গত বছর। ওই স্প্যানটি তৈরি করা হয়েছে ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটিতে বসানোর জন্য। কিন্তু নকশা জটিলতায় ওই দুটি খুঁটি তৈরি না হওয়ায় এবং ওয়ার্কশপে জায়গা না থাকায় অস্থায়ীভাবে সেটি ৪ ও ৫ নম্বর খুঁিট তুলে রাখা হয়। এখন নকশা জটিলতা কেটে যাওয়ায় ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটি তৈরি হলে স্প্যানটি সেখানে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

প্রতিটি ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে মোট ৪১টি স্প্যান ৪২টি খুঁটির ওপর বসিয়েই তৈরি হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু। দ্বিতল এ সেতুতে থাকবে রেল চলাচলের ব্যবস্থাও। এরই মধ্যে পদ্মা সেতুর প্রায় ৭২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছরের মধ্যেই সব স্প্যান বসিয়ে ফেলা যাবে বলে আশা করছেন তারা।

সেতু বিভাগের প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবীর জানান, জাজিরা প্রান্তের ষষ্ঠ স্প্যানটি আরো আগেই বসানোর কথা ছিল। কিন্তু কুমারভোগের ওয়ার্কশপ থেকে প্রায় তিন হাজার টন ওজনের স্প্যানটি নিয়ে বিশাল আকারের ভাসমান ক্রেইনের জাজিরা যাওয়ার পথে পানি নদীতে ছিল না। মাঝেরচর নামের বিশাল একটি চর কেটে সেতুর জন্য যে চ্যানেল করা হয়েছিল, তার প্রায় পুরোটায় গত বর্ষা মৌসুমে পলি জমে গভীরতা কমে যায়। সে কারণে চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির তিনটি ড্রেজার এবং স্থানীয় আরো চারটি ড্রেজার দিয়ে কয়েক দিন পলি সরানো হয়। চ্যানেলে প্রয়োজনীয় গভীরতা ফেরার পর ভাসমান ক্রেন তিয়ানি হাউ মুন্সীগঞ্জের কুমারভোগের ওয়ার্কশপ থেকে স্প্যানটি নিয়ে গত মঙ্গলবার জাজিরা পৌঁছায়। গতকাল ওই ক্রেন দিয়েই স্প্যানটি বসানো হয় খুঁটির ওপর। এদিকে নদীর নিচে মাটির গঠনের কারণে মাওয়া প্রান্তের ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটির নকশা জটিলতা তৈরি হয়েছিল। ফলে নদীর ওই অংশের কাজ অনেক দিন ধরেই থমকে ছিল। প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে যে নতুন নকশা তৈরি করা হয়েছে তা গত ১৫ জানুয়ারি অনুমোদন পেয়ে যাওয়ায় এখন ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটি বসানোর সমস্যাও মিটে গেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তবে সামনে বর্ষা মৌসুম থাকায় মাওয়া প্রান্ত আবারও খরস্রোতা হয়ে উঠবে। তখন সেখানে খুঁটি বসানোও কঠিন হয়ে যাবে। এ কারণে বর্ষা আসার আগেই মাওয়া প্রান্তের সব খুঁটির জন্য পাইলিংয়ের কাজ শেষ করে ফেলতে চাইছে কর্তৃপক্ষ।

মূূল সেতুটি তৈরি হবে মোট ৪২টি খুঁটির ওপর। এর মধ্যে ২০টি এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই আরো ১১টি খুঁটি দৃশ্যমান হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দোতলা এ সেতুর নিচতলায় চলবে ট্রেন। এরই মধ্যে খুঁটিতে বসানো স্প্যানগুলোতে রেলের স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। জাজিরা প্রান্তের স্প্যানগুলোকে এ পর্যন্ত ১২৮টি রেলওয়ে সø্যাব বসানো হয়েছে। পুরো সেতুতে এ রকম ২ হাজার ৯৫৯টি সø্যাব বসিয়ে তৈরি হবে রেলপথ। মাওয়ার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডেই স্প্যান ও সø্যাব বানানোর কাজ চলছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close