গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯

ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচন

চাঙ্গা আওয়ামী লীগ বিএনপিতে নীরবতা

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনকে ঘিরে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণায় নড়েচড়ে বসেছেন দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। দল ক্ষমতায় থাকায় নৌকার টিকিট পেতে তাই এখন মরিয়া অনেকেই। তবে গেল জাতীয় নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না তা নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে।

মেয়র আনিসুল হকের আকস্মিক মৃত্যুতে পদটি শূন্য হয়। তারপর ২০১৭ সালে জানুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তফসিল ঘোষণা করা হয়। পরে আইনি জটিলতায় নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। সে সময় ব্যবসায়ী নেতা আতিকুল ইসলামকে প্রার্থী ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। এবার ক্ষমতাসীন দল পুরনো প্রার্থীকেই আবার মনোনয়ন দেবে না নতুন কাউকে প্রার্থী ঘোষণা করবে তা নিশ্চিত নয়। এ পর্যায়ে নতুন মুখের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না দলের সূত্রগুলো। তবে বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি আতিকের সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের যোগাযোগ ভালো থাকায় প্রার্থী হওয়ার তালিকায় তিনিই এগিয়ে আছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অনেকটা নির্ভার আওয়ামী লীগ। আসন সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নজির স্থাপন করা দলটির আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। সেজন্য প্রার্থী নির্বাচনে নতুন কোনো বিবেচনা সামনে আসে কি না তা বিবেচনার দাবি রাখে। গেল জাতীয় নির্বাচনে অনেক হেভিওয়েট নেতাকে টিকিট না দেওয়ায় তাদের কাউকে নতুন করে প্রার্থী ঘোষণার ব্যাপারটিও উড়িয়ে দিচ্ছে না দলের সূত্রগুলো।

ক্ষমতাসীন দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, ব্যবসায়ী ওই প্রতিনিধি নৌকার টিকিট পেতে দলীয় মনোনয়নপত্র কেনার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায় ধানমন্ডির আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থেকে তার মনোনয়ন ফরমটি সংগ্রহ করেন। এদিকে ক্ষমতাসীন শিবিরে নির্বাচন নিয়ে যতটা উৎসব ও চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে ঠিক উল্টো চিত্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিতে। মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেও দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নির্বাচনকে ঘিরে কোনো উৎসাহ দেখা যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত দলীয় ফোরামে এ নিয়ে কোনো আলোচনা পর্যন্ত হয়নি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করা প্রসঙ্গটি এখনো আলোচনায় আসেনি বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, আগের নির্বাচনের (একাদশ জাতীয় নির্বাচন) সুরাহা হোক; পরে এসব নির্বাচন নিয়ে ভাবা যাবে। তাদের ভাষ্য মতে, স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে অনেকটা অনাগ্রহী বিএনপি। কারণ সম্প্রতি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপকভাবে পরাজিত হয়েছে দলটি। এ নিয়ে তাদের অভিযোগও রয়েছে বিস্তর। বর্তমান অবস্থায় দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তারেক রহমান বা খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপির রাজনৈতিক পথ এখন কোনদিকে ধাবিত হবে তা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে বিএনপির অপর একটি অংশ মেয়র নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত। বিশেষ করে সাবেক মেয়র প্রার্থী তাবিথ আওয়ালসহ দলের তরুণ নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আগ্রহী।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সংসদ নির্বাচনের পর পরই উপজেলা নির্বাচন ঘোষণা এসেছে। কিন্তু ওই নির্বাচন নিয়ে আমাদের এখনো কোনো অলোচনা হয়নি। সেখানে সিটি নির্বাচনের মেয়র পদে উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়টি আরো পরের প্রসঙ্গ। কারণ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যে ভোট-কারচুপির ঘটনা ঘটেছে তার সুষ্ঠু সমাধান মিললেই পরের নির্বাচনগুলোর প্রতি আগ্রহী হবে দলটি।

আর দলটির প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির বলেন, কিছু দিন আগে যে নির্বাচনটি হয়েছিল, সেটার ফল আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। এখন সিটি নির্বাচন নিয়ে ভাববার অবকাশ নেই। কারণ এখনো এ নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি; এমনকি দলীয় ফোরামেও। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে যে প্রক্রিয়াতে ভোট হয়েছিল এখনো বিশ্বব্যাপী তা নিয়ে চলছে গবেষণা।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান এমপি বলেন, জাতীয় এবং স্থানীয় সব নির্বাচনই আমাদের কাছে সমান গুরুত্বের। কেউ ভূমিধস পরাজিত হয়ে যদি অন্য নির্বাচন থেকে বিরত থাকে তাতে আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই। তারপরও বলব সবাইর উচিত নির্বাচন বর্জন না করে নির্বাচনের মাঠে থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখা।

ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদের উপনির্বাচনে আপনাদের প্রার্থী কে হচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সিটিতে উপনির্বাচন হচ্ছে। আনিসুল হকের মৃত্যুর পর নির্বাচন করার উদ্যোগ নিয়েও আইনি জটিলতায় ইসি তফসিল স্থগিত করেছিল। সে সময়ে একজন ব্যবসায়ীকে দলীয় প্রধান মনোনয়ন দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই সময়কার প্রেক্ষাপট এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্নতর। সবকিছুর পরও দলীয় প্রধান যে সিদ্ধান্ত নেবেন তার প্রতিই আস্থা রাখবেন নেতাকর্মীরা এটাই আমি মনে করি, যোগ করেন এই এমপি।

আর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, সিটির মেয়র পদের প্রার্থী কে হবেন এটা দলীয় বোর্ড রয়েছে সেখানে সিদ্ধান্ত হবে। এখনো আলোচনা শুরু না হলেও দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর নিশ্চয়ই সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে কোন প্রার্থীকে নির্বাচন করলে নৌকার জয় সুনিশ্চিত হবে।

ইসির তথ্য মতে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে এ পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটির সঙ্গে ১৮টি ও দক্ষিণ সিটির সঙ্গে ১৮টি মোট ৩৬টি সম্প্রসারিত ওয়ার্ডের তফসিল গত বছরের ৯ জানুয়ারি ঘোষণা করেছিল ইসি।

পরে পৃথক দুুটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের আদেশে গত বছরের ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি এ দুই সিটির নির্বাচন স্থগিত করে কমিশন। গত ১৬ জানুয়ারি উচ্চ আদালত রিট দুটি খারিজ করে দেন। এর পরই তফসিল ঘোষণা করল ইসি।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র ও কাউন্সিলর এবং দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলর, সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন পদে দাখিলের শেষ তারিখ ৩০ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র বাছাই ২ ফেব্রুয়ারি ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ফেব্রুয়ারি। মঙ্গলবার কমিশনের ৪৩তম সভায় এ তফসিল অনুমোদন করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close