কাইয়ুম আহমেদ

  ২২ জানুয়ারি, ২০১৯

উপজেলায় প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের পদবঞ্চিতদের ভিড়

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ এখনো কাটেনি। নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক হলো সবে। এখনো নির্বাচিত হননি স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সংসদ উপনেতা, চিফ হুইপ ও হুইপ পদে কেউ। এছাড়া চলছে সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী মনোনয়নের কাজ। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তোড়জোড়। দলীয় টিকিটে প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন অনেকে। বিশেষ করে পদবঞ্চিতদের ভিড় লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা। তবে যোগ্য প্রার্থী খুঁঁজতে দলের পক্ষ থেকে জরিপ চালানো হচ্ছে। তৃণমূল থেকেও নাম চাওয়া হবে।

আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাঁচ ধাপে উপজেলা নির্বাচন করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। মে মাসের মধ্যে বেশির ভাগ নির্বাচন শেষ করতে চায় নির্বাচন পরিচালনাকারী সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। সেই হিসেবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, এবার উপজেলা নির্বাচনে দীর্ঘদিনের ত্যাগী, নিবেদিত ও পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে গত সংসদ নির্বাচনে জনপ্রিয়তার জরিপে যারা এগিয়ে ছিলেন, কিন্তু মনোনয়ন পাননি, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে। তবে এমপির স্বজনদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এবার আওয়ামী লীগের লক্ষ্য তৃণমূলে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা।

দলীয় সূত্র মতে, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কয়েকটি মানদন্ডের ভিত্তিতে দলের মনোনয়ন দেবে। এর মধ্যে প্রধানতম হচ্ছেÑ দলীয় এমপিদের আত্মীয়-স্বজনকে দলের মনোনয়ন না দেওয়া। দ্বিতীয়ত, কমপক্ষে এক যুগ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে হবে। তৃতীয়ত, তৃণমূলে সর্বস্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা এবং দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে। দলের প্রার্থী বাছাইয়ে নির্দেশনা দিয়ে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তৃণমূলে চিঠি পাঠাবেন। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সপ্তাহে গণভবনে দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই নিয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি দলের এমপির আত্মীয়-স্বজনদের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার পক্ষে মত দেন।

দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা জানিয়েছেন, এক পরিবার থেকে এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যান বা পৌর মেয়র থাকলে অন্যরা বঞ্চিত হন। আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। দলে অনেক যোগ্য লোক আছেন, যাদের মূল্যায়ন করা দরকার। সে কারণেই এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় এমপির স্বজনদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। তবে দুই-চারটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে। কারণ সব মানদন্ডে যদি এগিয়ে থাকেন, তার চেয়ে অধিক যোগ্য লোক না পাওয়া যায় এবং তৃণমূল থেকে আপত্তি না থাকে তাহলে মনোনয়নে বিবেচনায় রাখা হবে। তবে মাদকের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত কাউকে কোনোভাবেই মনোনয়ন দেওয়া হবে না।

সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি এখনো নির্বাচনের বিষয়ে নীরব রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মহাজোটের শরিকদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে অনেক জায়গায় মহাজোটের শরিকদের সেভাবে অবস্থান নেই। বিএনপি নির্বাচনে না থাকলে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ আরো বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন না পেলে একটি বড় অংশ স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকতে চাইবে।

সাধারণত বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্র থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে বিএনপি নির্বাচনে না থাকলে নতুন প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ কী করবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার জন্য অনেক জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থিতার বিষয়টি উন্মুক্তও করে দেওয়া হতে পারে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেছেন, মহাজোটের শরিকরা নিজ নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, আমরা প্রতিটি নির্বাচনেই অধিক যোগ্য লোককে দলের মনোনয়ন দিয়ে থাকি। উপজেলায় প্রার্থী হওয়ার মতো দলের নিবেদিত, যোগ্য ও ত্যাগীদের পাওয়া গেলে দলীয় এমপির স্বজনদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না।

আওয়ামী লীগের উপজেলা পর্যায়ের নেতারা বলছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফল দেখে নেতারা মনে করছেন, মনোনয়ন পেলেই চেয়ারম্যান পদে জয় অনেকটা নিশ্চিত। ফলে এবার ভোট নিয়ে ক্ষমতাসীন দলে আছে বাড়তি আগ্রহ। জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আজিজুর রহমান বলেন, জাতীয় নির্বাচনের বিশাল জয়ে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। এ কারণে এবার উপজেলা নির্বাচনেও মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি।

এছাড়া পাবনা, সুনামগঞ্জ, বগুড়া, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, শেরপুরসহ দেশের প্রায় সব জায়গায় মাঠে সরব আওয়ামী লীগের নেতারা। সব উপজেলায় একাধিক নেতা মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। বিশেষ করে যারা জাতীয় নির্বাচনে বঞ্চিত হয়েছেন, তারাই এবার বেশি সরব হয়েছেন উপজেলায়। অনেকে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার-ব্যানার টানিয়েছেন, গণসংযোগ করছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close