নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯

ইসিতে প্রস্তুতি

ডিএনসিসি উপজেলায় ভোট একই সময়ে

সারা দেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচন একই সময়ে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাঁচ ধাপে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করবে কমিশন। এ জন্য ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে চায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। আর উপজেলা নির্বাচনের পাশাপাশি সুবিধামতো সময়ে ডিএনসিসি উপনির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন।

এ ব্যাপারে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘উপজেলা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উভয় নির্বাচন নিয়েই ইসি প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে মার্চ মাস থেকে পাঁচ ধাপে নির্বাচন করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাচন আরো একধাপ বাড়তে পারে।’

ইসি সচিব বলেন, ‘ডিএনসিসির নির্বাচনের বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের কপি এখনো আমাদের হাতে পৌঁছায়নি। রায়ের কপি পাওয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে উপজেলা নির্বাচনের পাশাপাশি ডিএনসিসি নির্বাচনের প্রস্তুতি কমিশনের রয়েছে।’

এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা গত বুধবার আগামী মার্চ মাসে ডিএনসিসি নির্বাচনের ভোটগ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তাড়াতাড়ি ডিএনসিসি নির্বাচন করে ফেলব। মার্চে শুরু হওয়া উপজেলা পরিষদের মধ্যেই এ নির্বাচন করা হবে। তবে এ বিষয়ে কমিশনে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

সিইসি আরো বলেন, ‘ডিএনসিসি নির্বাচনের তফসিল করা হবে। সে জন্য কমিশনের বসতে হবে। এটি তাড়াতাড়ি করে ফেলব। এই নির্বাচন উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না। এর মাঝখানেই করে ফেলব।’

পঞ্চম উপজলো পরিষদ নির্বাচনে সদর উপজেলাগুলোয় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভএিম) ভোট করা হব। আর এ ক্ষেত্রে সদর উপজেলার সব কেন্দ্রেই ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিষয়ে গত ১৪ জানুয়ারি ইসির ৪২তম কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইসি। এ প্রথমবারই উপজেলা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে।

দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন

২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আইনত নির্দলীয় হলেও আইন সংশোধনের ফলে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে হচ্ছে। যদিও উপজেলায় দলীয় প্রতীকে প্রথম ভোট হয়েছিল ২০১৭ সালের মার্চে। তখন তিনটি উপজেলায় দলীয় প্রতীকে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ায় ভোটে অংশ নিয়েছিল। চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম তিন পর্বে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ীদের মধ্যে সংখ্যায় বিএনপি এগিয়ে ছিল। তবে পরের তিন পর্বে তাদের ছাড়িয়ে যান আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা।

১৯৮৫ সালে এরশাদ সরকারের আমলে উপজেলা পরিষদ চালু হয়। প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয় ১৯৮৫ সালে এরশাদ সরকারের আমলে। একই সরকারের আমলে ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় দফায় উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হয়। পরে ১৯৯১ সালে বিএনপির খালেদা জিয়ার সরকার ক্ষমতায় এসে উপজেলা পরিষদ বাতিল করে দেয়। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে আবার উপজেলা পরিষদ চালু করা হয়। ২০০৯ সালে আবার তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম তিনটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সারা দেশে এক দিনে অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে ২০১৪ সালে রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশনের আমলে ছয় ধাপে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ছয় দিনে সারা দেশের প্রায় ৫০০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়। বর্তমানে দেশে ৪৯২টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। এবার পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে পাঁচ ধাপে।

আইন অনুযায়ী, কোনো উপজেলা পরিষদের মেয়াদপূর্তির আগের ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দশম সংসদ নির্বাচনের পরপরই হয়। এবারও পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরপরই হচ্ছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর ১৯ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কাজী রকিবউদ্দিন আহমদের কমিশন। একই বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মোট ছয় ধাপে নির্বাচন হয়।

ডিএনসিসি নির্বাচন

সীমানা জটিলতা নিয়ে ডিএনসিসি উপনির্বাচন স্থগিত চেয়ে করা রিট গত ১৬ জানুয়ারি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি গোবিন্দচন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটকারীর আইনজীবীরা অনুপস্থিত থাকায় নির্বাচনে স্থগিতাদেশ ও রুল খারিজ করে দেন। এই নির্বাচন অনুষ্ঠানে আর কোনো আইনি বাধা রইল না। এর আগে ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি ডিএনসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ১৭ জানুয়ারি ডিএনসিসি উপনির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিতের আদেশ দেন বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্টের বেঞ্চ।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়। কিন্তু নির্বাচনের আড়াই বছর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়র আনিসুল ইসলাম লন্ডনে মারা যান। পরে ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি ইসি ডিএনসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসি নির্বাচনের কথা ছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close