নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯

স্বাস্থ্য অধিদফতরে দুর্নীতি

এবার তলব আবজালের ভাই ও তিন শ্যালককে

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার বরখাস্ত হওয়া হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেনের পাঁচ নিকটাত্মীয়কে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই পাঁচজনও স্বাস্থ্য অধিদফতরে কর্মরত। গতকাল বুধবার দুদকের উপপরিচালক সামছুল আলম তাদের তলব করে চিঠি দিয়েছেন। আগামী মঙ্গলবার তাদের দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে। যাদের তলব করা হয়েছে তাদের মধ্যে আবজালের দুই ভাই, ফরিদপুর টিবি হাসপাতালে ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট বেলায়েত হোসেন ও জাতীয় অ্যাজমা সেন্টারে হিসাবরক্ষক লিয়াকত হোসেন। আবজালের স্ত্রী রুবিনা খানমের তিন ভাইকেও তলব করা হয়েছে। এরা হলেনÑ স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালক রকিবুল ইসলাম, উচ্চমান সহকারী বুলবুল ইসলাম এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অফিস সহকারী শরিফুল ইসলাম।

দুদক সূত্র জানায়, আবজাল হোসেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার স্ত্রী রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদফতরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার সাবেক স্টেনোগ্রাফার। এখন তিনি রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে ব্যবসা করেন।

দুদকের তথ্য অনুসারে আবজাল বেতন পান সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকাও মতো। অথচ চড়েন হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের গাড়িতে। ঢাকার উত্তরায় তার ও তার স্ত্রীর নামে বাড়ি আছে পাঁচটি। আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ২৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট। দেশে-বিদেশে আছে বাড়ি-মার্কেটসহ অনেক সম্পদ। এসব সম্পদের বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি।

আবজাল দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমে গত বৃহস্পতিবার আবজালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। রুবিনা খানমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ বৃহস্পতিবার দুদকে হাজির থাকতে বলা হলেও তিনি সময়ের আবেদন করেছেন বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।

অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার আবজালকে সাময়িক বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। সে অনুসারে স্বাস্থ্য অধিদফতর ব্যবস্থা নিয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এর আগে আবজাল ও রুবিনার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুদক।

জানা যায়, আবজাল হোসেনের বাড়ি ফরিদপুরে। ১৯৯২ সালে তৃতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি তার। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের সুপারিশে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৫টি মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে অফিস সহকারী পদে অস্থায়ীভাবে যোগ দেন। ২০০০ সালে প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হলে তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ক্যাশিয়ার পদে বদলি হন। এই ধারাবাহিকতায় তিনি বর্তমান পদে যোগ দেন। সম্প্রতি তাকে সাতক্ষীরায় বদলি করা হলেও দুই মাসের মধ্যে ঢাকা ফিরে আসেন।

তার স্ত্রী রুবিনা খানম একই প্রকল্পে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে যোগ দেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে ব্যবসা শুরু করেন। মূলত স্বামী-স্ত্রী মিলে স্বাস্থ্য অধিদফতরে একচেটিয়া ব্যবসা করার জন্য তারা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

অফিস সহকারী বা কেরানি হিসেবে চাকরি নিলেও আবজাল হোসেন অল্প সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরে ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, বিএনপি আমলে নিয়োগ পেলেও সব আমলেই সমানভাবে প্রভাবশালী ছিলেন তিনি। নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, কাজ না করে বিল তুলে নেওয়ার মতো কাজগুলো করেছেন আবজাল। এর মাধ্যমে বিপুল বিত্তবৈভব গড়ে তুলেছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অভিযোগ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close