নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়

সব প্রাথমিকে একই পাঠ থাকছে না বেতন বৈষম্য

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে একই পাঠ পরিকল্পনা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, যার মাধ্যমে একই সময়ে সব স্কুলে একই পাঠদান হবে। এছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের সন্তানদের কিন্ডারগার্টেন বা এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পড়া বন্ধ করতে আগের একটি নির্দেশনা আবারও চালু করতে যাচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য আর থাকছে না বলে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঢাকা জেলার সাভার, ধামরাই, দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং শিক্ষকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এ কথা জানান প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন ও সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন।

এ অনুষ্ঠানেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব বলেন, সারাদেশে একই লেসন প্ল্যানে পড়ানো হবে। নেপকে (জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি) দিয়ে লেসন প্ল্যান তৈরি করিয়েছি। এটা চূড়ান্ত করার পরে প্রত্যেক স্কুলে পাঠিয়ে দেব। অর্থাৎ ঢাকার নীলক্ষেত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে পাঠদান হবে পঞ্চগড়ের একটা প্রত্যন্ত স্কুলের বাংলায় সেই একই পাঠ হবে।

এতে মনিটরিং সহজ হবে জানিয়ে সচিব বলেন, স্কুলে গিয়ে কর্মকর্তারা মনিটরিং করবেন যে টিচারের কোনটি পড়ানোর কথা ছিল, তিনি কোথায় পড়াচ্ছেন। মনিটরিংয়ের মাধ্যমে করাপশনকে জিরো করার জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বন করেছি। রমজান মাসে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়মানুযায়ী সারাদেশে যেমন তারাবির নামাজ হয়, সে রকম।

মনিটরিং সুবিধার জন্য এমনটি করা হবে জানিয়ে সচিব বলেন, মনিটরিং কার্যক্রমটা জোরদার করতে হবে। উপজেলায় যেসব কর্মকর্তা আছেন, তাদের একেকটা স্কুলের মেনটর নিয়োগ করতে পারি। এই দায়িত্ব অর্পণ করা হলো।

তিনি বলেন, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা প্রত্যেক জেলায় একজন করে মেন্টর নিয়োগ করেছি। নিজের জেলা মাগুরা ও পাশের জেলা যশোরের দায়িত্বে সচিব। প্রত্যেক কর্মকর্তাকে নিজ জেলা অথবা তার পাশের জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাবনা জেলায় মহাপরিচালককে দায়িত্ব দিয়েছি।

সচিব বলেন, জিরো টলারেন্স অ্যাগেইনস্ট করাপশনÑ এটা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত নিশ্চিত করা হবে। আমাদের সার্কুলার আছে যে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তান যারা আছে, তারা প্রাথমিক বিদ্যালয়েই পড়তে হবে, আমরা সেটা আবারও তাদের স্মরণ করিয়ে দেব। অর্থাৎ আমরা আবার নিশ্চিত করব যে, কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিচারদের ছেলেমেয়েরা কিন্ডারগার্টেনে পড়তে পারবে না। এটা কঠিন হলেও আমরা করব।

ভিডি কনফারেন্সে ওপারের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি লক্ষ্য করছি, বাচ্চারা প্রাইমারিতে পড়ে না, খালি কেজি স্কুলের দিকে যায়। এটার হেতু কী? কেজি স্কুলের মাস্টাররাতো বেতনও পান না, আপনারা যতটা পান। আমার দাদা প্রাইমারির শিক্ষক ছিলেন, ভাঙা সাইকেল, বেড়ার সঙ্গে লাগানো থাকত। সব সাইকেল নিতাম, ওই মাস্টারের সাইকেল নিতাম না, কিছু দূর গেলে চেইন পড়ে যেত। আজকে আপনাদের সেই ভাঙা সাইকেল নেই। এখন সবার মোটরসাইকেল।

এ সময় কনফারেন্সের ওপাশ থেকে একজন বলেন, শুরু হয়ে গেছে। জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ধন্যবাদ আপনাদের। আর যে স্কুল এটা করতে পারবেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের পুরস্কৃত করব।

শিক্ষকদের উদ্দেশে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, বেতন বৈষম্য কেন থাকবে? আপনাদের অনেক সমস্যা আছে আমি জানি।

তিনি বলেন, আমি লক্ষ্য করেছি, আপনাদের বদলি নিয়ে টিও অফিসে ঝুট ঝামেলা হয়। অনেক দালাল-ফালাল আপনাদের পেছনে লাগানো আছে। আমি এগুলো টলারেট করব না। কোনো শিক্ষা কর্মকর্তা যদি আমার শিক্ষকদের হয়রানি করেন, আমি তাদের ‘মার্সি’ করব না। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনাদের মাথা তারা যেন নষ্ট করতে না পারেন। আমি দেখছি, এই শিক্ষককে এখানে বদলি করে, ওখানে বদলি করে, এর ভেতর দিয়ে টাকা পয়সা নেওয়া হচ্ছে। আবার শিক্ষকদের ভেতরে একটা শ্রেণি আছে, তারা টিও সাহেবের বগলে সুন্দরভাবে বসে আরেক শিক্ষকের কীভাবে ক্ষতি করা যায়Ñ করে না?

শিক্ষকদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, আমি সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তা না, আমি আপনাদের ভোটে নির্বাচিত লোক, সরাসরি আমার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলবেন। আমার দরজা সবার জন্য খোলা থাকবে। যে কোনো সমস্যা নিয়ে, আমার বিরুদ্ধে হলেও আমাকে বলবেন।

বেতন বৈষম্য প্রসঙ্গে সচিব বলেন, নির্বাচনি ইশতেহারে যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সেটি নিয়ে কাজ করছি। একটা কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। আমি এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, অর্থ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন যে, বেতন বৈষম্য দূরীভূত হওয়া দরকার এবং আমরা দ্রুত কার্যক্রম শুরু করেছি। এটা শেষ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেব এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ সমস্যা সমাধান করা হবে।

সচিব আরো বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সহকারী শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষদের নিয়োগ নীতিমালা অনুমোদন করিয়েছি। এটা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের আছে, আজকালের মধ্যে পাওয়ার কথা। এটা পাওয়া গেলে যেসব প্রধান শিক্ষককে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের সরকারি কর্মকমিশনের সুপারিশ নিয়ে দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close