কক্সবাজার প্রতিনিধি

  ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯

কক্সবাজারে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান

৯ দিনে ৯ ইয়াবা কারবারি নিহত

কক্সবাজার জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অব্যাহত অভিযানে চলতি মাসের ৪ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯ দিনে ৯ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুজন, র‌্যাবের সঙ্গে দুজন, বিজিবির গুলিতে দুজন ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৩ জনের লাশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান জোরদারের ফলে মাদক কারবারিরা বেকায়দায় পড়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। এর আগে গত তিন মাসে শুধু টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ২৭ মাদক ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে দুয়েকজন গুলিবিদ্ধ ছাড়া অধিকাংশ পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।

পুলিশ বলছে, অভিযানে নিহতরা সবাই তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি। এদের সবার বিরুদ্ধে ইয়াবা, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির একাধিক মামলা রয়েছে।

কক্সবাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র মতে, গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দ্বিতীয় দফায় মাদকবিরোধী অভিযানে নামে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও অস্ত্র। নিহতদের মধ্যে কক্সবাজার শহরের একজন ছাড়া বাকি সব টেকনাফে নিহত হয়েছে। পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, গত ৪ জানুয়ারি সকাল ৭টার দিকে টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালীপাড়া সৈকত এলাকা থেকে সাজ্জাদ হোসেন ইমরান (২৪) নামে এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত যুবক চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া পশ্চিম আমিরাবাদের মাস্টারপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ কালামের ছেলে। পুলিশের ধারণা, ইয়াবার চালান পাচারের সময় দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের গুলিতে ওই ব্যক্তি নিহত হয়ে থাকতে পারেন।

একইভাবে গত ৫ জানুয়ারি সকালে ৯টার দিকে টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মেরিন ড্রাইভের নিকটবর্তী রাজারছড়া এলাকা থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন টেকনাফের উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকের মৃত কাশিমের ছেলে খাইরুল আমিন (৩৫) ও একই ব্লকের হাজী মুহাম্মদের ছেলে আবদুল্লাহ (৪৭)।

৮ জানুয়ারি ভোরে টেকনাফ উপজেলার দমদমিয়া এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৪০ হাজার পিস ইয়াবা, একটি বিদেশি রিভলবার, একটি ওয়ান শুটারগান ও একটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করেছে র‌্যাব-৭। নিহতরা হলেন ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার নগরকুন্ড এলাকার আবদুল মতিনের ছেলে হাফিজুর রহমান (৩৫) ও বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার বরবাড়িয়া এলাকার মো. ইব্রাহিমের ছেলে সাব্বির হোসেন (২৫)।

৯ জানুয়ারি সকাল ৬টার দিকে কক্সবাজার শহরের কলাতলী কাটাপাহাড় এলাকা থেকে জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত জাহাঙ্গীর আলম কক্সবাজার শহরের রুমালিয়ারছড়া এলাকার ফরিদ আলম ওরফে দারোয়ান ফরিদের ছেলে। এ সময় ২০০ পিস ইয়াবা ও একটি দেশে তৈরি এলজি উদ্ধার করা হয়।

গত ১০ জানুয়ারি রাত ২টার দিকে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের নাফ নদীর খুরের মুখ এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ (৪৭) ও আবুল কালাম (৩৫) নিহত হয়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি দেশীয় এলজি এবং ২২ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। তারা দুজনই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি পুলিশের।

সর্বশেষ ১২ জানুয়ারি (শনিবার) রাতে টেকনাফে সাঁতরিয়ে নাফ নদী পার হওয়ার সময় বিজিবির গুলিতে দুই ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়। এ সময় বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। তাদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়দের দাবি নিহতরা মিয়ানমারের নাগরিক।

এ ব্যাপার টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আসাদুদ-জামান চৌধুরী জানান, ‘রাতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের আনোয়ার প্রজেক্ট পয়েন্ট দিয়ে নাফ নদী সাঁতরে মিয়ানমার থেকে দুই ব্যক্তি বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এ সময় বিজিবি সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পরে ঘটনাস্থল তল্লাশি করে দুজনের লাশ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে টেকনাফ থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার এবং ইয়াবাগুলো জব্দ করেছে।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ জানান, ‘টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে যেসব ব্যক্তি নিহত হয়েছেন তারা সবাই ইয়াবা ব্যবসায়ী। এদের অধিকাংশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষে তারা মারা গেছে।’

র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, গত ৮ জানুয়ারি ভোরে টেকনাফ উপজেলার দমদমিয়া এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৪০ হাজার পিস ইয়াবা, একটি বিদেশি রিভলবার, একটি ওয়ান শুটারগান ও একটি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়। র‌্যাব পুরো জেলায় স্থল ও জলপথে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করেছে। এসব এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী ছাড়াও জলদস্যু ও সন্ত্রাসীদের আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

কক্সবাজার পিপলস ফোরামের সাধারাণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, সম্প্রতি জেলা মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অব্যাহত অভিযানেও অধিকাংশ মাদক ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় পড়লেও তালিকার বাইরে থাকা মাদক ব্যবসায়ীরা যথারীতি মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর দফতর হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা তালিকায় কক্সবাজারে ১১৫২ জনকে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র টেকনাফে রয়েছে ৯১২ জন। মাদক নির্মূলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসোবে কক্সবাজার জেলার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নড়েচড়ে বসে। শুরু হয় ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ীদের ধরপাকড়। এতে টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা কারবারিরা গাঢাকা দিলেও নির্মূল হয়নি সীমান্তের ইয়াবা পাচার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close