আশুলিয়া প্রতিনিধি

  ০৯ জানুয়ারি, ২০১৯

সাভারে শ্রমিক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ নিহত ১, আহত অর্ধশতাধিক

সরকার ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে সাভারে বিক্ষোভের সময় পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, পুলিশের গুলিতে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশসহ অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত এবং তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সাভারের কয়েকটি স্থানে পুলিশ ও শ্রমিকদের পৃথক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার সাভারের কয়েকটি স্পটে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। সকালে হেমায়েতপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকজন আহত হন। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উড়াইল এলাকার আনলিমা গার্মেন্টসের সামনে বিক্ষোভের সময় গুলিতে আহত হন সুমন মিয়া (২২)। তিনি ওই গার্মেন্টরই একজন কর্মী। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সহকর্মীরা তাকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

গুলিবিদ্ধদের পুলিশ উদ্ধার করে এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করে। তারা হলেনÑ সাবিনা ইয়াসমিন (২৪), রুবিয়া আক্তার (২২), আঁখি আক্তার (৪৬)। বিষয়টি নিশ্চিত করে এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের মধ্যে সাবিনা ইয়াসমিন কাঠগড়া এলাকার টেক্সটাউন গ্রুপের শ্রমিক। এ বিষয়ে টেক্সটাউন (কাঠগড়া-জিরাবো) গ্রুপের পরিচালক মো. কাওসার হোসেন বলেন, এলাকার দুষ্কৃতকারী একটি চক্রের টেলিফোনে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে উত্তেজিত হয়ে ফ্যাক্টরির বাইরে চলে যান। তার আগে শ্রমিকরা সুষ্ঠুভাবে আগের মতোই কাজ শুরু করেছিলেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটে আমাদের এক নারী শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। অন্যদিকে সাভারের হেমায়েতপুরের পদ্মার মোড় বাগবাড়ি এলাকার স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের শামস স্টাইল ওয়্যারস লিমিটেডের গুলিবিদ্ধ হন আঁখি ও রুবিয়া আক্তার।

মজুরি কাঠামো পর্যালোচনায় কমিটি, কাজে ফেরার আহ্বান : পোশাকশিল্পের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় সদ্য বাস্তবায়নাধীন মজুরি কাঠামো পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এক মাসের মধ্যে মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করে নতুন সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেছেন নতুন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

মতিঝিলের শ্রমভবনে গতকাল মঙ্গলবার মালিক, শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মনুশি ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান।

বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মালিক পক্ষের ৫ জন, শ্রমিক পক্ষের ৫ জন এবং সরকারের বাণিজ্য সচিব ও শ্রম সচিবকে নিয়ে মোট ১২ সদস্যের কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে মজুরির অসঙ্গতিগুলো খতিয়ে দেখবে এবং সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেবে।’

তিনি বলেন, ‘মজুরি নিয়ে কোনো সমস্যা থাকলে তা আলোচনা করে এক মাসের মধ্যেই সমাধান করা হবে।’ এ সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের রাস্তায় বিশৃঙ্খলা না করে কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বানও জানান নতুন এ বাণিজ্যমন্ত্রী।

‘জানুয়ারি মাসে কোনো শ্রমিককে কম বেতন দেওয়া হবে না। কোনো গ্রেডে কারো যদি বেতন কমে যায়, তবে সেটা হিসাব করে সমন্বয় করা হবে। বকেয়া আকারে শ্রমিকরা সেই বেতন পেয়ে যাবেন’ বলেন টিপু মুনশি। বাইরের লোকের ইন্ধন আছে বলে নিজের সন্দেহের কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। শ্রমিকরা যাতে কোনো রকম গুজব কিংবা উসকানিতে পা না দেন, আমরা সেই অনুরোধ করছি। আজকের পর থেকে ইন্ডাস্ট্রিবিরোধী কোনো কর্মকান্ড করলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে।’

শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত শ্রমিকবান্ধব। তিনি নিজেই সুপারিশ করে পোশাকশ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। এখন নতুন মজুরি কাঠামোর কোথাও কোনো অসুবিধা থাকলে আলোচনা করে তা ঠিক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই আর কোনো বিশৃঙ্খলা নয়। সবাইকে কাজে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করছি।’

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে একই কথা বলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল ও জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন। বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ নেতা আব্দুস সালাম মুর্শেদী, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close