কাইয়ুম আহমেদ

  ০৮ জানুয়ারি, ২০১৯

নতুন মন্ত্রিসভা

দল ও সরকারকে আলাদা রাখতে চায় আ.লীগ

দলকে সরকার থেকে আলাদা রাখার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন মন্ত্রিসভা গড়েছেন আওয়ামী সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে আরো গতি আনতে এবং সরকার ও দলের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় তিনি এই পরিকল্পনা বিবেচনায় নিয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সরকার থেকে দলের ‘আলাদা সত্তা’ বজায় রাখতে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নতুন মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি বলেও যুক্তি দেখিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেছেন, ‘কারো হারানোর কিছু নেই। নো বডি ইজ গোয়িং টুু লুজ অ্যানিথিং। আমার মনে হয়, এটা দায়িত্বের পরিবর্তন, দায়িত্বের রূপান্তর। আমাদের সরকারের মধ্যে দলটা হারিয়ে যাক, আমরা চাই না। সেখানে সরকার আর দলের যে আলাদা সত্তা আছে, সেটা রাখতে হলে রেসপন্সিবল লিডারদের একটা অংশকে দলের দায়িত্বে রাখতে হবে।’

দলের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেক এলাকায় দল সরকারের সঙ্গে মিশে গেছে। ফলে দিবসভিত্তিক কর্মসূচির বাইরে সাংগঠনিক তৎপরতা কম। এজন্য দল ও সরকারের মধ্যে স্পষ্ট সীমারেখা টানতে চাইছেন নীতিনির্ধারকরা।

দল ও সরকার করার এই প্রক্রিয়ায় মন্ত্রিসভায় দলের অভিজ্ঞদের স্থান না হওয়ার কারণ দেখছেন কেউ কেউ। আগামী কাউন্সিলের মাধ্যমে সরকার ও দল আলাদা করার ভাবনা বাস্তবে প্রয়োগ করতে গেলে যারা দলে সুযোগ পাবেন না, তাদের মধ্যে দু-একজনকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হতে পারে। আবার মন্ত্রিসভার কাউকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদও দেওয়া হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, এক ব্যক্তিকে একসঙ্গে সরকার ও দলে দুটি পদে না রাখার বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত আছে। তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় অনেক সময় তা সম্ভব হয় না। যেমন দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আবার তিনি মন্ত্রী না হলে সরকার সম্পর্কে না জানলে দল চালাবেন কীভাবে? এসব বাস্তবতা বিবেচনা করেই মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে।

গতকাল বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানের পর ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কেউ বাদ পড়েছেন, এটা আমি বলব না। কেউ সরকারে দায়িত্ব পালন করবেন, কেউ আরো বেশি করে দলের দায়িত্ব পালন করবেন। ’

আগের ধারাবাহিকতায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের যে চ্যালেঞ্জ, তা মোকাবিলা করতে হলে দলকে আমাদের শক্তিশালী করতে হবে।’

জোটসঙ্গীদের কাউকে নতুন সরকারে না রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই একসঙ্গেই তো আছি। ১৪ দল আমাদের সঙ্গে আছে। এখন মন্ত্রী থাকা না থাকার ওপর তো আমাদের অ্যালায়েন্স ভেঙে গেছে, এটা বলা যাবে না। মন্ত্রী তো পাঁচ বছরের ব্যাপার, মাঝে মাঝে এক্সপাংশন হবে, রিশাফল হবে, এর মধ্যে অনেকে যাবেন। আবার ভালো পারফরম্যান্স না থাকলে মাঝপথেও বিদায় নিতে হবে।’

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিষয়ে এক প্রশ্নে কাদের বলেন, জনগণের রায়ের প্রতি তাদের সম্মান থাকা উচিত। মানুষ তাদেরকে রায় যতটা দিয়েছে, সেটাকে সম্মান করা উচিত।

টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন, তাতে দলের প্রবীণ নেতাদের প্রায় সবাই বাদ পড়েছেন। গত মন্ত্রিসভার বেশির ভাগই ঠাঁই পাননি নতুন সরকারে।

আওয়ামী লীগের ১৫ সদস্যের সভাপতিমন্ডলীর মাত্র একজন আবদুর রাজ্জাক মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাদে সম্পাদকমন্ডলীর ৩২ জনের মধ্যে আটজনের ঠাঁই হয়েছে মন্ত্রিসভায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close