সংসদ প্রতিবেদক

  ০৭ জানুয়ারি, ২০১৯

শপথ নিলেন এরশাদ

বিরোধীদলীয় নেতার উপ-প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দাবি

একাদশ জাতীয় সংসদের আইনপ্রণেতা হিসেবে শপথ নিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গতকাল রোববার দুপুরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী তার দফতরে সাবেক এই সামরিক শাসককে এমপি হিসেবে শপথ পড়ান। শপথ পরিচালনা করেন সংসদ সচিব জাফর আহমেদ খান। ৮৭ বছর বয়সী এরশাদ অসুস্থতার কারণে হুইলচেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে পারছিলেন না। পরে ছোট ভাই জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সাহায্য নিয়ে তাকে উঠে দাঁড়াতে দেখা যায়। শপথ শেষে স্পিকার এরশাদের সার্বিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। এদিকে শপথ শেষে বিরোধী দলের নেতাকে ‘উপপ্রধানমন্ত্রী’ মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব তুলবেন বলে জানিয়েছেন এরশাদ। সংসদ সদস্য হিসেবে স্পিকারের কাছে শপথ গ্রহণের পর জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার কার্যালয়ে বসে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

এরশাদ বলেন, ‘বিরোধী দলের নেতার পদকে উপপ্রধানমন্ত্রী ও দলের চিফ হুইপের পদকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার জন্য নতুন আইন করতে আমরা স্পিকারের কাছে অনুরোধ জানাব। বিরোধী দল হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রেখে সংসদকে প্রাণবন্ত করার চেষ্টা করব।’

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ফখরুল ইমাম, পীর ফজলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন তাদের নেতার শপথ অনুষ্ঠানে। পরে এরশাদ হুইলচেয়ারে করে সংসদ সচিবের কক্ষে গিয়ে সংসদ সদস্য বইতে সই করেন।

গত বৃহস্পতিবার এরশাদকে ছাড়াই শপথ নেন জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত ২১ জন সংসদ সদস্য। সেদিন এরশাদের আলাদাভাবে শপথ নেওয়ার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি সংসদে যেতে পারেননি। এর আগে গত শনিবার জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, দেশের ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ জাপা প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকছে।

গত শুক্রবার দুপুরে এরশাদ ঘোষণা দেন, একাদশ জাতীয় সংসদে তার দল জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকবে। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এবার তার দলের কোনো সদস্য মন্ত্রিসভায় থাকবেন না। ভোটের পর জাপার বাকি সংসদ সদস্য মহাজোট সরকারে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। তবে এরশাদের সিদ্ধান্তের পর জি এম কাদের বলেছেন, ‘ধরে নিচ্ছি এতে আমাদের ভালো হবে। এ সিদ্ধান্তে দলে কোন্দলের কোনো স্কোপ নেই।’

সাবেক সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদ জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন, পরে এ দলের মনোনয়ন নিয়ে দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুথানের মুখে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি ঢাকা-১৭ আসন থেকে নির্বাচিত হন।

২০১৪ সালে দশম নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে নানা নাটকীয়তার জন্ম দিলেও শেষ অবধি তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না হওয়ায় তিনি রংপুর-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দশম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলে থাকলেও ‘ঐকমত্যের সরকারে’ও ছিল জাতীয় পার্টি। তাদের কয়েকজন নেতা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন এরশাদের স্ত্রী ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। আর পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ ছিলেন মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। পরস্পরবিরোধী ওই অবস্থানের কারণে সংসদের মেয়াদের পুরোটা সময় সমালোচনায় বিদ্ধ হয় জাতীয় পার্টি। এরশাদের কথাতেও এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ পায় বিভিন্ন সময়ে।

একাদশ নির্বাচনে নিজ জেলা রংপুর ছাড়াও ঢাকা-১৭ আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন এরশাদ। পরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী চিত্রনায়ক ফারুককে সমর্থন দিয়ে ঢাকা-১৭ আসন থেকে তিনি সরে দাঁড়ান। ভোটের আগে ‘রক্তে হিমোগ্লোবিনের সমস্যায়’ ভুগতে থাকা এরশাদ সিঙ্গাপুর গিয়েও চিকিৎসা নিয়ে এসেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close