গাজী শাহনেওয়াজ

  ০৭ জানুয়ারি, ২০১৯

নতুন সরকার : বড় জয়, বড় চ্যালেঞ্জ

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ এবার বিশাল জয় নিয়ে সরকার গঠন করছে আজ। ‘বড় জয়’ দলটির জন্য বড় দায়িত্ব হয়ে দেখা দিয়েছে। অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মহাজোটের বড় জয়; ফলে তাদের দায়িত্বও অনেক বেশি। তারা বলছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা সমুন্নত রাখতে সরকার পরিচালনায় নিরবচ্ছিন্ন স্থিতিশীলতা থাকবে হবে। বিরোধী রাজনীতিকদের আস্থায় রেখে সহিংসতা-জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখাও নতুন সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ।

এ ছাড়াও রয়েছে সুশাসন নিশ্চিত করা ও মাদকের ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ। জনগণ নতুন সরকারের কাছে দল-মত নির্বিশেষে সমান আচরণ প্রত্যাশা করে। শিক্ষা খাতের মানোন্নয়নের সঙ্গে প্রয়োজন রয়েছে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা বৃদ্ধি। এদিকে মেগা প্রকল্পগুলো সময়মতো বাস্তবায়ন করাটাও সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে এবার বিবেচনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু; যার ব্যয় ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা রেল সংযোগ, পায়রা বন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কক্সবাজার দোহাজারী রেলপথ প্রকল্প। এসব মেগা প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন দেখতে চায় দেশবাসী।

বিদ্যুৎ খাতের তথ্য মতে, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে রূপপুরের ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ যোগ হবে জাতীয় গ্রিডে। পরের বছর চালু হবে সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট। রূপপুরের প্রকল্প এলাকায় ১ হাজার ৬২ একর জমির ওপর এখন চলছে বিপুল কর্মযজ্ঞ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক জাকির হোসেনের মতে, এবারের নির্বাচনে প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ তরুণ ভোটার প্রথমবারের মতো তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তরুণদের একটি বড় অংশ সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছিল গত বছর। পরে সরকারি চাকরি থেকে সব ধরনের কোটা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোটা বাতিলের ফলে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হতে পারে। এজন্য অনগ্রসর গোষ্ঠীর কারো সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে পৃথক নীতিমালা করা হবে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তরুণরা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বিষয়ে একটা স্থায়ী সমাধান চায়। পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়েও তাদের প্রত্যাশা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে ইতিবাচক বলে জানা গেছে।

এদিকে, নতুন মন্ত্রিসভা আজ সোমবার শপথ নিচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে নতুন সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম টানা তৃতীয় মেয়াদে কোনো দল ও সরকারপ্রধান সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন। গত ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল গণরায় নিয়ে ক্ষমতায় আসা দলটির কাছে জনগণের প্রত্যাশাও অনেক। চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিতে সরকার আন্তরিক হবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা বিশ্লেষকদের।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, বিপুল বিজয়ের একটা বিপদ হলো ক্ষমতাসীন দল নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে ভুলে যায় অনেক সময়। তবে আশা করা যায়, আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে এ রকম কিছু ঘটবে না। তিনি আরো জানান, নতুন সরকারের জন্য মোটা দাগে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দুর্নীতি দমন করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, সব খাতে দুর্নীতি কমানোই হবে নতুন সরকারের মূল লক্ষ্য। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের বাইরে আরেকটি বড় রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি। আগামী ৫ বছর দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রাখতে ওই দলটিকে আস্থায় রাখতে হবে, যাতে দেশে জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির অপসংস্কৃতি আবার চালু না হয়।

সম্প্রতি রাজধানীর এক সম্মেলনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে অর্থনীতি ও রাজনীতি দুটি পরাশক্তি হিসেবে কাজ করে। তবে সব সময় রাজনীতিই অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সরকারকে অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিতে হবে। সেজন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে।

এদিকে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষকদের মতে, কোনো দল যখন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে; তখন সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটা দেখা দেয় তা হলো ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ। নতুন সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হবে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের আরো দায়িত্বশীল আচরণ করতে উৎসাহিত করা। আর আর্থিক খাতে আস্থা ফেরাতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। আওয়ামী লীগের গত দুই মেয়াদে শেয়ারবাজারে এবং ব্যাংকিং খাতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এর পরও দেশের প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বেড়েছে। শেয়ারবাজার ও ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফেরাতে সরকার শুরু থেকেই উদ্যোগ নেবে বলে প্রত্যাশা দেশের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, অর্থনীতি বহুমুখীকরণ করার দিকে আগামী সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে। দেশের অর্থনীতির আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ প্রযুক্তির সমন্বয় এবং শ্রমশক্তিকে বিশ্বায়নের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করতে হবে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দীন খান বলেন, আগামী ১০-১৫ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কে নিয়ে যেতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আর অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close