বদরুল আলম মজুমদার
ঐক্যফ্রন্ট-বিএনপি টানাপড়েন শুরু
নির্বাচনের পরপরই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, নির্বাচিত এমপিরা এ সংসদে যাবেন না বা শপথ নেবেন না। কিন্তু মহাসচিব এটা পরিষ্কার করেননি তাদের জোটের মিত্র গণফোরামের নির্বাচিত দুই এমপি সংসদে যাবেন কি না। মহাসচিবের বক্তব্যের ঠিক দুদিন পরই ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন তার দলের এমপিদের শপথ নেওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ অবস্থায় গণফোরামের দুই সদস্য সংসদে যাওয়ার খবরে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কে ফাটল ধরেছে কি নাÑ তা নিয়ে গতকাল বিভিন্ন মহলে আলোচনার জন্ম হয়। ঐক্যফ্রন্ট যেখানে নির্বাচনের ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করেছে, সেখানে জোটের দুই এমপি সংসদে যাওয়ার বিষয়টি সাংঘর্ষিক বলে অনেকে মনে করছেন। এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে সম্পর্ক শেষ হতে চলেছে।
গতকাল বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বিএনপির দুই নেতার সঙ্গে, তারা বিষয়টিতে প্রকাশ্যে এখনো কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তারা মনে করছেন, বিষয়টি জোটের বৈঠকে আলোচনা হলেই কেবল বোঝা যাবে আসলে তারা কোন গ্রাউন্ডে সংসদে যেতে চান। এ বিষয়ে কথা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ড. কামালের অবস্থানের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তাদের দল যদি সংসদে যেতে চায় সে ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত কোনো মত থাকার কথা নয়। এটা নিয়ে জোটের বৈঠকে কথা হতে হবে। শুনেছি ড. কামালও বলেছেন এ নিয়ে তিনি জোটের বৈঠকে কথা বলবেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে। তিনি নোয়াখালী থেকে ঢাকার পথে থাকায় ফোন রিসিভ করেননি। তবে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সকালে ফোন দিতে পরামর্শ দেন। বহরে থাকা বিএনপির অন্য এক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কটাক্ষ করেই মহাসচিবকে বিষয়টি জানানোর কথা বলেন। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, সত্যিই যদি গণফোরামের দুজন সংসদে যেতে রাজি হন, তাহলে এটা হবে বিএনপির জন্য একটি রাজনৈতিক ধাক্কা। দলগতভাবে এ নির্বাচন বর্জনের জন্য বিএনপির সিনিয়রদের ওপর প্রচ- চাপ থাকলেও তারা সেটি এড়িয়ে গেছেন। এখন তারাই যদি সংসদে যেতে চান, তাহলে এটা বিএনপির রাজনীতির জন্য আরো একটি দৈন্য বলেই প্রমাণিত হবে।
এদিকে গণফোরামের সংবাদ সম্মেলন থেকে জানা যায়, বিএনপিকে রেখেই সংসদে যাচ্ছে গণফোরাম। এমনটিই ইঙ্গিত দিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট সাত আসনে জয় পায়। ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক গণফোরাম দুই আসনে জয় পায়। এর মধ্যে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সুলতান মনসুর এবং গণফোরামের নিজস্ব প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে মোকাব্বির খান নির্বাচিত হন। এ ছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ পাঁচজন নির্বাচিত হন। বিএনপির এ পাঁচজনকে রেখেই গণফোরামের দুই সদস্য এমপি হিসেবে শপথ নিচ্ছেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ড. কামাল।
গতকাল শনিবার রাজধানীর শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে গণফোরামের বর্ধিত সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ ইঙ্গিত দেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, সুনির্দিষ্ট আলোচনার মাধ্যমে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আমার নিজের ধারণা, সংসদে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি ঠিকই কিন্তু আমাদের প্রার্থীরা বিরোধী দল থেকে জয়লাভ করেছেন। এটা তাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। যে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে তারা নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন, এ জন্য আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। আমি আবার বলছি, তাদের সংসদে যাওয়ার বিষয়ে আমার চিন্তাধারা ইতিবাচক।
সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ঐক্যফ্রন্টের দ্বিধাবিভক্তি হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না আমাদের মধ্যে এমন কিছু হবে।’
ঐক্যফ্রন্ট থাকবে কি না জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা ঐক্যফ্রন্ট রাখার জন্যই করেছি। নীতিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি ঐক্যফ্রন্টের মধ্য দিয়ে সরকারকে চাপ সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে। নীতিগতভাবে আমরা ঐক্যফ্রন্ট রাখার পক্ষে। আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা তো আন্দোলন করেই যাচ্ছি। জনমত গঠন করাও এক ধরনের আন্দোলন। নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করাও এক ধরনের আন্দোলন। এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আন্দোলন আরো তীব্র হতে পারে। ড. কামাল হোসেন বলেন, তাদের দুই প্রার্থী নিজেদের অর্জনকে ধরে রেখে অর্থপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে গণফোরাম মনে করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু। সেখানে বলা হয়, তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে প্রতীক বরাদ্দের পর ঐক্যফ্রন্টসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে মাঠে নামতে দেয়নি ক্ষমতাসীনরা। সেনাবাহিনী নামার পর পরিবেশের উন্নতি হবে বলে মনে করেছিল গণফোরাম কিন্তু তা হয়নি। নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে, এ ঘটনায় জনগণের সাংবিধানিক অধিকার, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার ধর্ষিত হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ এনে নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানায় গণফোরাম।
"