সংসদ প্রতিবেদক

  ০৪ জানুয়ারি, ২০১৯

এমপিদের শপথ উৎসবমুখর পরিবেশে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। জাতীয় সংসদ ভবনের শপথ কক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার এ শপথ অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তিন দফায় উপস্থিত এমপিদের শপথ পাঠ করান।

শপথ নিয়ে এমপিরা ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করেন। এ উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশ এলাকায় ছিল কঠোর নিরাপত্তাবলয়। একই সঙ্গে নতুন এমপিদের শপথ ঘিরে সংসদ ভবন এলাকাজুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। শপথ অনুষ্ঠানের জন্য আগেই স্পিকার আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিলেন নবনির্বাচিতদের বরাবর এবং উপস্থিত থাকার জন্য সময় নির্ধারণ ছিল বেলা ১১টা। সময়ের প্রতি লক্ষ রেখে সকাল থেকেই নির্বাচিত এমপিরা একে একে সংসদ ভবনে আসতে থাকেন। নির্ধারিত সময়েই স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংবিধান ও কার্যপ্রণালিবিধি অনুযায়ী প্রথমে নিজে শপথ গ্রহণ এবং শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন। স্পিকার শপথবাক্য পাঠ করার পর প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত অন্য সদস্যরাও তাকে অভিনন্দন জানান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান।

এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের ২৫৫ জন সংসদ সদস্যকে শপথবাক্য পাঠ করান। এরপর তৃতীয় ধাপে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির তিনজন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) দুজন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ-এর দুজন, তরিকত ফেডারেশনের একজন, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) একজন এবং স্বতন্ত্র তিনজন সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণ করেন। চতুর্থ ধাপে বিরোধীদলীয় নেতা রওশনের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির ২১ জন সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণ করেন। শপথ গ্রহণ শেষে সকলেই শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

সংসদ সচিবালয় জানায়, নির্বাচন কমিশনের গেজেট অনুযায়ী নির্বাচিত ২৯৮ জন এমপির মধ্যে চারটি ধাপে ২৮৯ জন শপথ নিয়েছেন। অসুস্থতার কারণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শপথ নিতে পারেননি। তিনি বুধবার স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠিয়ে শপথের জন্য সময় চেয়েছেন। আর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের গতকাল বিকেলে শপথ গ্রহণের কথা থাকলেও তিনি পরে স্পিকারের কাছে সময় প্রার্থনা করেছেন। দু-এক দিনের মধ্যেই তিনি শপথ নেবেন বলে জানিয়েছেন। আর নির্বাচিত হলেও শপথ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাতজন সংসদ সদস্য।

এ বিষয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, সৈয়দ আশরাফ সাহেব শপথের জন্য সময় চেয়েছেন। উনি দেশে ফিরে আসার পর শপথ নিতে চান। এমনিতেই নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথের জন্য ৯০ দিন সময় পাবেন বলে তিনি জানান।

শপথবাক্যে নির্বাচিত এমপিরা আইন মেনে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে দেশের আইনসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করেছেন। শপথ গ্রহণকালে এমপিরা নিজ নিজ নাম উচ্চরণ করে স্পিকারের সঙ্গে সঙ্গে পড়তে থাকেন- ‘সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ (বা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা) করিতেছি যে, আমি যে কর্তব্যভার গ্রহণ করিতে যাইতেছি, তাহা আইন অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব; আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব এবং সংসদ-সদস্যরূপে আমার কর্তব্য পালনকে ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হইতে দেব না।’

শপথ পাঠ করানোর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে এমপিদের প্রথম সারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডান পাশে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আর বাঁ পাশে ছিলেন সাজেদা চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ নাসিম, আব্দুর রাজ্জাক। আর মাঝে নাজমুল হাসান পাপনের পাশে ছিলেন নতুন দুই সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা ও শেখ তন্ময়। শপথ শেষে সংসদের ভিআইপি ক্যাফেটেরিয়ায় নতুন এমপিদের জন্য ছিল চা চক্রের আয়োজন। এরপর সংসদ সচিবের দফতরে রক্ষিত সংসদ সদস্যদের রেজিস্ট্রার খাতায় তারা স্বাক্ষর করেন।

এদিকে শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে সংসদ ভবন ও আশপাশ এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সকাল থেকেই ওই এলাকায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি লক্ষ করা যায়। দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। গণমাধ্যম কর্মীদের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়। আর এই কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও পুরো সংসদ ভবনজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। শপথ অনুষ্ঠান সামনে রেখে সংসদ ভবনের অভ্যন্তরসহ আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। বাহারি রঙের ফুলের টব সারি সারি বসিয়ে সংসদ ভবনকে নতুনরূপে সাজানো হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী এমপিরা ৯ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close