গাজী শাহনেওয়াজ

  ০৪ জানুয়ারি, ২০১৯

ক্ষমতা অর্থ-উপার্জনের হাতিয়ার নয়; সতর্ক করলেন এমপিদের

জাতীয় সংসদ নেতা পদে শেখ হাসিনার হ্যাটট্রিক

ফুটবল কিংবা ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক করার ঘটনা আহরহ শোনা যায়। কিন্তু রাজনীতিতে হ্যাটট্রিক করার খবর চাউর হওয়ার নজির শোনা যায় কালেভদ্রে। কারণ জনগণকে টানা খুশি রেখে বিজয় ছিনিয়ে আনা বেশ কষ্টসাধ্য। অথচ অসাধ্য ও চ্যালেঞ্জিং কাজটি করে দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরল অর্জনের মাধ্যমে হ্যাটট্রিক করে সংসদ নেতা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন বিশ্ব দরবারে নন্দিত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শপথ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনা সর্বসম্মতিক্রমে পুনরায় সংসদ নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। এ সময় তিনি ক্ষমতাকে অর্থ-অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করতে দলীয় এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আপনারা শুধু নৌকা মার্কার এমপি নন, এলাকার সব জনগণের এমপি। এটা মাথায় রেখেই জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে হবে। সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের এমপিরা খবরের এ সত্যতা নিশ্চিত করেন।

সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে টানা দ্বিতীয়বার নির্বাচিত এমপি ও মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংসদ নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন। এরপর দলের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য আমির হোসেন আমু সেই প্রস্তাব সমর্থন করেন। এরপর প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহীত হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা পুনরায় সংসদ নেতা নির্বাচিত হওয়ায় দলীয় এমপিরা করতালির মাধ্যমে তাকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী ক্যারিশমেটিক লিডার; তার দূরদর্শী চিন্তার কারণে আজ টানা তিনবার সরকারে আওয়ামী লীগ। এটা একজন এমপি হিসেবে সম্মানের ও গৌরবের।

সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল বলেন, নেত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেছেন, যারা বলেছিল আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়ে গেছে; বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে এ বিজয় অর্জন সমালোচকদের সমালোচনার সমুচিত জবাব। প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃত টেনে এমপি আরো বলেন, অনেক কষ্টে দলকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি বলে জানান নেত্রী। বলেন, লন্ডনে বসে নিরলস দল গোছানোয় কাজ করেছি, তার সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, অনেক সময় জয়ের টিউশন ফি দিতে পারিনি অর্থাভাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এমপি জানান, পুনরায় সংসদ নেতা নির্বাচিত হলেও আগামীতে এই দায়িত্ব পালনে আপত্তি জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি এবারের মতো দায়িত্ব নিলেও আর নয়। পরবর্তী সময়ে নতুন কেউ দায়িত্ব নেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে দায়িত্ব পালনে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

জাতীয় সংসদের সাবেক প্রধান হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ওই সভায় অন্য কেউ বক্তব্য রাখেননি। প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকে সংসদ নেতা বেশকিছু নির্দেশনা দেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ক্ষমতাকে অর্থ-উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে না বানানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বৈঠকের বিষয়ে কথা হয়, প্রথমবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য সিনিয়র সাংবাদিক শফিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী অর্থকে বড় করে না দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আপনারা শুধু নৌকার এমপি নন, কে নৌকায় ভোট দিয়েছে, কে দেয়নি, সেটা বিবেচ্য নয়। সবার উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।

সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের কাছে আমাদের যে ঋণ, সেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। উন্নয়নের মাধ্যমেই সেই ঋণ পরিশোধ করা হবে। তিনি বলেন, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। আমরা আজকে আছি, আগামীতে থাকব কি না কেউ বলতে পারে না। তাই ক্ষমতাকে কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করবেন না। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের আগে যেভাবে জনগণের কাছে গিয়েছেন। এখন শপথ নেওয়ার পর একইভাবে জনগণের কাছে যাবেন, সম্পর্ক ঠিক রাখবেন। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকলে ভবিষ্যতে হারবেন না। তাই সব সময় জনগণের পাশে থাকবেন।

সুখে-দুঃখে জনগণের কাছে থাকার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ যদি সঙ্গে থাকে তবে কেউ আমাদের রুখতে পারবে না। আপনাদের কাছে সেটাই আমার অনুরোধ। আপনারা জনগণের মাঝে থাকবেন। জনগণের সুখে দুঃখে আপনারা তাদের পাশে থাকবেন। জনগণের জন্য কাজ করে নিজেদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখার আহ্বান জানান তিনি।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে সেটা অব্যাহত রাখব। তিনি বলেন, গত ১০ বছরে আমরা উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করেছি। নির্বাচনের ফলে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। এই অর্জন ধরে রাখতে হবে। এদেশের মানুষ অতীতে বিএনপির দুর্নীতি ও সাম্প্রদায়িতকতার বিরুদ্ধে এবারের নির্বাচনে রায় দিয়েছে। আগামীতে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেন সংসদ নেতা।

নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবি প্রসঙ্গে সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য ও যুদ্ধাপরাধীদের মনোনয়ন দেওয়ার সমুচিৎ জবাব দিয়েছে জনগণ। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তারা মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে। নির্বাচন নয়, যেন তাদের লক্ষ্যই ছিল মনোনয়ন বাণিজ্য করা। এ কারণেই তারা ডুবেছে। জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের সমুচিত জবাব দিয়েছে।

ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মনে রাখবেন ষড়যন্ত্র শেষ হয়ে যায়নি। ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। তারা প্রত্যেকের নামে মামলা করতে পারে। এসব মামলা মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের যে অর্জন, যে বিজয় সেটা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিজয়। এই বিজয়কে নসাৎ করে স্বাধীনতাবিরোধীরা যাতে আর ফিরতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

উন্নয়নের গতি আরো বেগবান করা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নের যে অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছে, সেটা অব্যাহত থাকবে। ২১০০ সালকে সামনে রেখে আমরা উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলব। ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবার্ষিকী পালিত হবে। তখন যারা থাকবেন তারা একটা উন্নত সমৃদ্ধ দেশে স্বাধীনতার শতবার্ষিকী পালন করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সংসদীয় দলের সভায় একাদশ সংসদের উপনেতা নির্বাচনের কথা থাকলেও সে বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান জাতীয় সংসদের হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার। তিনি বলেন, আগামীতে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। বর্তমানে সংসদ উপনেতা আছেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close