নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

নির্বাচনী ইশতেহার

সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ : আ. লীগ

‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ইশতেহারে গ্রামভিত্তিক উন্নয়ন তথা গ্রামে আধুনিক সুবিধার উপস্থিতি, শিল্প উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, জলবায়ু পরিবর্তন ও সুরক্ষা, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণসহ বিভিন্ন খাতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ। ইশতেহারে ২১টি অঙ্গীকার করেছে দলটি। সরকার পরিচালনায় দুই মেয়াদে সাফল্য ও অর্জন এবং আগামী ৫ বছরের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা তুলে ধরা হলো।

ইশতেহারে ২১টি অঙ্গীকার : ১. আমার গ্রাম, আমার শহরÑ প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ ২. তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি : তরুণ যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা এবং কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা ৩. দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ ৪. নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও শিশু কল্যাণ ৫. পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা ৬. সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল ৭. মেগা প্রজেক্টগুলোর দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন ৮. গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা ৯. দারিদ্র্য নির্মূল, ১০. সবস্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি ১১. সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা ১২. সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার ১৩. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ১৪) আধুনিক কৃষিব্যবস্থাÑ লক্ষ্য যান্ত্রিকীকরণ ১৫. দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন ১৬. জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ১৭. সমুদ্রসম্পদ উন্নয়ন ১৮. নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা ১৯. প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ ২০. টেকসই উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং ২১. সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি।

কৌশল ও পদক্ষেপ : বেসরকারি খাতে নতুন মূলধন সৃষ্টির হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০৪১ সালের মধ্যে বিনিয়োগের হার জিডিপির ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। পর্যাপ্ত অবকাঠামো সেবা সরবরাহ করতে হবে। রফতানি বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ব্যাংক ও বীমা খাতের সেবা সম্প্রসারণ, দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণ ও গভীরতা এবং পুঁজিপণ্য সরবরাহ ও বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। ইতোমধ্যে চীনা কনসোর্টিয়াম ঢাকা পুঁজিবাজারে কৌশলগত বিনিয়োগ করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা হবে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি মূলধনি কোম্পানির শেয়ার এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটালে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের লেনদেন দ্রুত নিষ্পন্ন করা হবে। দেশব্যাপী বিনিয়োগ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে। জনসংখ্যায় বয়স কাঠামোর সুবিধাকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে ২০১৫ সালে বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অনুপাত ছিল ৬৬ শতাংশ, ২০৩০ সালে যা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৭০ শতাংশ। ২০৩০-এর পর থেকে এই হার কমতে থাকবে। এই জনমিতিক সম্ভাবনার সুফল বাস্তবায়নের জন্য সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

শোভন কাজের পরিসর বৃদ্ধি করা হবে, শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ ও নতুন প্রযুক্তির বিকাশে গুরুত্বারোপ করা হবে, ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সঞ্চয়কে বিনিয়োগে রূপান্তরের সুযোগ তৈরি করা হবে।

কারিগরি শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে ১১৯ উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। অতিরিক্ত ৩৮৯টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপন করা হবে। শুধু ভৌত উপকরণের ওপর নির্ভর করে অব্যাহত প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়। শিল্পনির্ভর প্রবৃদ্ধির জন্য জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হবে।

রফতানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে রফতানি পণ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধি এবং নতুন বাজার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সীমিতসংখ্যক পণ্য ও বাজারের ওপর নির্ভর করে রফতানি সম্প্রসারণ দুঃসাধ্য। রফতানি বহুমুখীকরণের জন্য খাতভিত্তিক সমস্যাবলি সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শুল্ক, কর, মূসক রেয়াত, নগদ প্রণোদনা ইত্যাদির সামগ্রিক কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজন অনুসারে সংস্কার ও সমন্বয় করা হবে। জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প বিকাশের জন্য শুল্ক-কর সুবিধা ও প্রণোদনা বিশেষ বিবেচনা পাবে; যা প্রশিক্ষিত তরুণ ও যুবকদের শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট করবে এবং দক্ষ উদ্যোক্তা-শ্রেণি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে। প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০১৬-২০) কালপর্বে গড় প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০২১-২৫) কালপর্বে এ হার গড়ে ১০ দশমিক শূন্য শতাংশ ছুঁয়ে যাবে।

কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে আয়কর, ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানো হবে। মূসক আইন যুক্তিযুক্ত ও বাস্তবায়নযোগ্য করে বিদ্যমান ইস্যুগুলোকে সমাধান করা হবে। ভ্রান্ত পৌনঃপুনিক করারোপ (কাসকেডিং) পরিহার করা হবে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) ব্যবহার বৃদ্ধি করা হবে। নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও বিরোধ নিষ্পত্তির সাফল্য বিবেচনায় নিয়ে কর কর্মকর্তাদের পুরস্কার বা প্রণোদনা প্রদান কার্যক্রমকে অধিক কার্যকর করা হবে। আয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে আয়করের পরিধি ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হবে। কর কর্মকর্তাদের ব্যবসায়িক অর্থায়ন, হিসাববিজ্ঞান, বাণিজ্যিক আইন, ব্যাংকিং আইন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রভৃতি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। বাজেট প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয় সংস্কার করার লক্ষ্যে বিনিয়োগ ও কল্যাণমুখী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দক্ষতা প্রশিক্ষণ চলাকালীন প্রশিক্ষণার্থীদের মাসিক ভাতা প্রদান করা হবে। সামাজিক সুরক্ষাবেষ্টনীর জন্য প্রয়োজন অনুসারে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হবে; যার মধ্যে বয়স্ক পুরুষ জনগোষ্ঠীও অন্তর্ভুক্ত হবেন। দুস্থ, বিধবা ও বয়স্ক নারীদের জন্য বিদ্যমান কর্মসূচির আওতা ও ব্যয় বৃদ্ধি করা হবে।

অবকাঠামো উন্নয়নে বৃহৎ প্রকল্প (মেগা প্রজেক্ট) : দেশের উন্নয়নে নতুন গতি সঞ্চারের জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রকল্পের প্রয়োজন অপরিহার্য। মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ফলে অবকাঠামো খাতে বাধা দূর এবং সার্বিক অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হবে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মেগা প্রজেক্ট গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকায় দ্রুত গণপরিবহনের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ, এলএনজি ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট, মহেষখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম, পায়রা সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ এবং চট্টগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৯.৫ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন। আওয়ামী লীগ এসব মেগা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ ও ভূমিকা পালনে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধিত হবে এবং সেই সঙ্গে মানুষের কর্মসংস্থান, আয় ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে বহুগুণ।

প্রশাসন, নীতি ও বাজেট প্রণয়ন : একটি সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে জাতীয় যুবনীতি পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। তরুণদের কল্যাণ ও উন্নয়ন কাজে প্রশাসনিক গতি আনতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় গঠন করা হবে যুব বিভাগ। তরুণদের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করার জন্য গঠন করা হবে যুব মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘যুব গবেষণা কেন্দ্র’।

শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি : স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুগোপযোগী করতে কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অধিকতর বিনিয়োগ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য আর্থিক ও অন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অগ্রাধিকার পাবে। তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রসারিত করা হবে।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরীখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় ‘যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন করা হবে। বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি এই কেন্দ্রগুলোকে পর্যায়ক্রমে ‘তরুণ কর্মসংস্থান কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দুটি নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। ‘কর্মঠ প্রকল্প’র অধীনে ‘স্বল্প শিক্ষিত/স্বল্প দক্ষ/অদক্ষ’ শ্রেণির তরুণদের শ্রমঘন, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের উপযোগী জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ‘সুদক্ষ প্রকল্প’র অধীনে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে যে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে, তা দূর করতে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

জাতীয় পর্যায়ে স্বল্প, মধ্যম ও উচ্চশিক্ষিত তরুণদের তথ্যসংবলিত একটি ইন্টিগ্রেটেড ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রয়োজন ও তরুণদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির জন্য আবেদন করার আহ্বান জানাতে পারবে। কর্মসংস্থানে কৃষি, শিল্প ও সেবার অংশ যথাক্রমে ৩০, ২৫ ও ৪৫ শতাংশে পরিবর্তন করা হবে। ২০২৩ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। এ ছাড়া ওই সময়ে নতুনভাবে ১ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close