নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

ক্ষমতার ভারসাম্য ডিজিটাল আইন বাতিলসহ ৩৫ দফা ঐক্যফ্রন্টের

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদসহ অনেক রাষ্ট্রীয় সংস্কারের আশা দেখিয়ে ৩৫ দফার ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এতে ১৪ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল সোমবার রাজধানীর হোটেল পূর্বাণীতে জনাকীর্ণ সুধিজনের উপস্থিতিতে এ নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন। গতকাল ঘোষিত ৩৫ দফা ইশতেহারে বলা হয়, পুলিশ ও সামরিক বাহিনী ছাড়া সরকারি চাকরিতে প্রবেশের কোনো বয়সসীমা থাকবে না। এ ছাড়া সরকারের দুর্নীতি তদন্ত করে বিচার করা, জেলা পরিষদ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন, পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা তুলে দেওয়া হবে। প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ। বিজয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনাসহ অনেক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে ফ্রন্ট। সব ধরনের প্রতিশ্রুতি সরকারের পাঁচ বছরের মেয়াদের মধ্যে পূরণের আশ্বাসও দিয়েছে দলগুলো।

প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে- জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সর্বদলীয় সত্যানুসন্ধান ও বিভেদ নিরসন কমিশন গঠন করা হবে। হত্যা ও গুম পুরোপুরি বন্ধ করা হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল করা হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের বিধান তৈরি করা হবে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ১২ হাজার টাকা। প্রথম বছরে গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে না। প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে,

১. প্রতিহিংসা বা জিঘাংসা নয়, জাতীয় ঐক্যই প্রধান লক্ষ্য : বিগত ১০ বছরে কল্পনাতীত স্বেচ্ছাচারিতা এবং পুলিশকে দলীয় ক্যাডার হিসেবে ব্যবহার করে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা, গুম, খুন, মামলার ঘুষ বাণিজ্য ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় লাখো পরিবার ক্ষুব্ধ ও বিপর্যস্ত। এ সমস্যা সমাধান করে সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী, আইনজীবী সমন্বিত সর্বদলীয় সত্যানুসন্ধান ও বিভেদ নিরসন (ঞৎঁঃয ধহফ জবপড়হপরষরধঃরড়হ) কমিশন গঠন করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অতীতের হয়রানিমূলক মামলা সুরাহার লক্ষ্যে খোলামনে আলোচনা করে ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে।

২. ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা, নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনী আইন ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার : রাষ্ট্রের মালিক জনগণের ভোটের অধিকার শতভাগ রক্ষা করার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় নাগরিকদের পছন্দের জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করার পূর্ণাঙ্গ অধিকার নিশ্চিত করা হবে। সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকারের বিধান তৈরি করা হবে। নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সহজ করা, প্রতিটি পর্যায়ের নির্বাচনে পেশিশক্তি, কালো টাকা এবং গণমাধ্যমের অপব্যবহার রোধ করার জন্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

৩. মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ : ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করা হবে। মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে মানুষ পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। গণমাধ্যমের ওপর কোনো রকম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। সামাজিক গণমাধ্যমে মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে সরকারি বিধিনিষেধ থাকবে না। সরকারি পদক্ষেপ এবং পদধারীদের বিরুদ্ধে সমালোচনা এমনকি ব্যঙ্গ-বিদ্রুপেরও অধিকার থাকবে। এসব ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে মানহানির মামলা তার নিজেকেই করতে হবে (অন্য কেউ করতে পারবে না) এবং এ ধরনের মামলা কোনোভাবেই ফৌজদারি মামলা হবে না।

৪. ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিতকরণ : দেশের বিচার ব্যবস্থা, বিশেষ করে নিম্ন আদালত এখনো কার্যত সরকারের অধীনেই আছে। সংবিধানের ১১৫ এবং ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে নিম্ন আদালতকে পুরোপুরি সুপ্রিম কোর্টের অধীনে দেওয়া হবে। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুধু অনাস্থা ভোট এবং অর্থবিল ছাড়া অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে দলীয় সংসদ সদস্য দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলেও তাদের সংসদ সদস্যপদ শূন্য হবে না, এমন সংশোধনী ৭০ অনুচ্ছেদে আনা হবে। সংসদের উচ্চকক্ষ সৃষ্টি করা হবে। সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উচ্চকক্ষের গঠন প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হবে। মন্ত্রিসভাসহ প্রধানমন্ত্রীকে সংসদের কাছে দায়বদ্ধ থাকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা হবে। পর পর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকা যাবে না।

৫. স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা এবং বিকেন্দ্রীকরণ : দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডের দায়িত্ব থাকবে নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের হাতে। বর্তমানে কমবেশি ৫ শতাংশ বাজেট স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ব্যয়ের পরিবর্তে প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বাড়িয়ে পাঁচ বছরে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ বাজেট স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ব্যয়ের বিধান করা হবে। বাজেটে প্রতিটি জেলার জন্য জেলা বাজেট এবং সেটা পর্যায়ক্রমে নিচের দিকে স্থানীয় সরকারের মধ্যে বণ্টন করা হবে। জেলা পরিষদ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবে।

৬. তরুণদের কর্মসংস্থান : বেকার সমস্যার সমাধান হবে আমাদের সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারের একটি। সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতার ফলে ‘কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধির’ দুষ্টচক্র থেকে তরুণ সমাজকে বের করে আনতে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পুলিশ এবং সামরিক বাহিনী ব্যতীত সরকারি চাকরিতে প্রবেশের জন্য কোনো বয়সসীমা থাকবে না। সরকারি চাকরিতে শুধুমাত্র অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা ছাড়া আর কোনো কোটা থাকবে না। বড় নিয়োগ পরীক্ষাগুলো বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের মতো বিভাগীয় শহরগুলোতেও নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। ?সরকারি কর্ম কমিশনের কর্মক্ষমতা বাড়াতে জনবল বৃদ্ধি করে সরকারি সব চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।

৭. শিক্ষা : কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করা হবে। জাতির ভবিষ্যৎ যোগ্য নেতৃত্ব বিকাশের পথকে সুগম করার লক্ষ্যে প্রথম বছরেই ডাকসুসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা হবে। পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য নতুন ক্যাডার সার্ভিস চালু করা হবে।

৮. দুর্নীতি দমন : বৃহৎ প্রকল্পের দুর্নীতির সঙ্গে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মুখোমুখি হওয়া বিভিন্ন সেবা খাতের দুর্নীতি দমনকে আমাদের সরকার অগ্রাধিকারের শীর্ষে রাখবে। দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বর্তমান সরকারের সব দুর্নীতির তদন্ত করে তার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে। সংবিধান নির্দেশিত পথে ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে এবং সংবিধান নির্দেশিত সব দায়িত্ব পালনে ন্যায়পালকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হবে।

৯. স্বাস্থ্য : দেশের সব ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রসমূহ স্বাস্থ্য ক্যাডারের একজন সরকারি কর্মকর্তার উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। ৩১ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে পর্যায়ক্রমিকভাবে ৫০ শয্যাবিশিষ্টে রূপান্তর করা হবে। সব জেলায় একটি করে মেডিকেল কলেজ স্থাপনপূর্বক ৫০০ শয্যার হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে। তিন মাসের মধ্যে ওষুধ এবং ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার খরচ নির্ধারণ করে সেটা প্রয়োগের মাধ্যমে এসব খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানো হবে।

১০. খাদ্যে ভেজাল নিরোধ : বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩-এর যুগোপযোগী সংস্কার করা হবে এবং এর কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে খাদ্যে ভেজাল এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো পুরোপুরি বন্ধ করা হবে। দায়িত্বপ্রাপ্তির এক বছরের মধ্যে মানুষকে নিরাপদ খাদ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।

১১. মাদক নিয়ন্ত্রণ : দায়িত্বপ্রাপ্তির প্রথম দিন থেকেই মাদক নিয়ন্ত্রণকে সরকারের খুব গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারের তালিকায় আনা হবে। মাদক পরিবহন এবং বিপণনের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।

১২. আইনশৃঙ্খলা বাহিনী : বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড এবং গুম (এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারান্স) পুরোপুরি বন্ধ করা হবে। ইতোপূর্বে সংগঠিত এ ধরনের সব ঘটনার তদন্ত করা হবে। মানুষের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা শূন্যের কোটায় আনা হবে। পুলিশ সব অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে তদন্ত করতে বাধ্য থাকবে। চার্জশিট হলে আদালতে লিখিত অনুমতি দিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবে, তার পূর্বে না। বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না।

১৩. আদালত : বিভাগীয় সদরে স্থায়ী হাইকোর্ট বেঞ্চ থাকবে। হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা করাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১৪. কৃষি ও কৃষক : ক্রমাগত কমতে থাকা কৃষি ভর্তুকি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়িয়ে সার-বীজ এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা হবে। সরকারি ব্যাংক থেকে খুব সামান্য সুদে কৃষকদের ঋণ দেওয়া হবে।

১৫. শিল্পায়ন : শিল্পায়নের জন্য ভৌত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা নিরসন করার জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা এবং আইন ও বিধিমালা সহজ করা হবে।

১৬. শ্রমিক কল্যাণ : দুই বছরের মধ্যেই গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার টাকা করা হবে। সব খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হবে।

১৭. ব্যাংকিং খাত, শেয়ারবাজার, বাজেট : ব্যাংকিং খাতের এই বিশৃঙ্খলা এবং লুটপাটের কারণে এই খাতটি একেবারে ভেঙে পড়ার পর্যায়ে চলে এসেছে। শিগগিরই কঠোর ব্যবস্থার মাধ্যমে এই সেক্টরের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে।

১৮. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি : বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করার নামে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বছরের পর বছর চালিয়ে মানুষকে অত্যন্ত ব্যয়বহুল দামে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে। দায়িত্ব¡ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অতি দ্রুতগতিতে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইনডেমনিটি বাতিল করে এই খাতের সব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৯. সামাজিক নিরাপত্তা : গত দশ বছরে সরকারের নীতির কারণে সৃষ্ট ভয়ংকর বৈষম্য দূর করার জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীকে অনেক বেশি শক্তিশালী করা হবে।

২০. বায়োবৃদ্ধ : ৬৫ ঊর্ধ্ব বয়োবৃদ্ধরা অর্ধেক ভাড়ায় যানবাহনে ভ্রমণের সুবিধা পাবেন। সব বয়োবৃদ্ধ মাসিক ২০০ টাকায় জাতীয় স্বাস্থ্যবীমার আওতায় শুধু ওষুধ ছাড়া অন্য সব চিকিৎসা ও পরিসেবা বিনা খরচে পাবেন। তারা ওষুধ পাবেন অর্ধেক দামে।

২১. নারীর নিরাপত্তা এবং ক্ষমতায়ন : সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হবে। তবে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের জন্য সব রাজনৈতিক দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ন্যূনতম ২০ শতাংশ নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকবে।

২২. নিরাপদ সড়ক, যাতায়াত এবং পরিবহন : কিছুদিন আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিশু-কিশোররা যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন গড়ে তুলছিল তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে তাদের দাবিকৃত ৯ দফা দাবির আলোকে সড়ক আইন সংশোধন করা হবে।

২৩. প্রবাসী কল্যাণ : প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে। সব দেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী কর্মীদের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হবে। মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী কর্মীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে মরদেহ সম্পূর্ণ সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশে আনা হবে এবং বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে।

২৪. গণমাধ্যম : একটি স্বাধীন প্রেস কাউন্সিলের অধীনে সব প্রকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। সাংবাদিকদের মজুরি বোর্ড নিয়মিত করা হবে। ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমকে উৎসাহিত করা হবে। এসব ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। সংবাদপত্রকে শিল্প ঘোষণা করা হবে এবং এতে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেওয়া হবে। সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার করা হবে।

২৫. ডিজিটাল প্রযুক্তি : মোবাইল ফোনের কলরেট ও ইন্টারনেট খরচ কমানো হবে। দেশের প্রতিটি প্রান্তে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি নিশ্চিত করতে মোবাইল অপারেটরদের বাধ্য করা হবে।

২৬. সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ : সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হস্তে দমন করবে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে এসব বিষয়ে ছাত্রদের শিক্ষা পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং সমাজের সব শ্রেণির জনগণকে সচেতন ও সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে দেশের আলেম-ওলামাদের দ্বারা মোটিভেশন প্রোগ্রাম চালু করা হবে।

২৭. ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী : সংখ্যালঘুদের মানবিক মর্যাদা অধিকার নিরাপত্তা এবং সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় ন্যূনতম ঘাটতি খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংখ্যালঘুদের ওপর যে কোনো রকম হামলার বিচার হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে।

২৮. ক্রীড়া ও সংস্কৃতি: দেশের ক্রীড়া সংস্থাগুলোকে রাজনীতির বাইরে পেশাগতভাবে গড়ে তোলা হবে। ক্রিকেটকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২৯. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : গত ১০ বছর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কোনো গুরুত্বই আমরা দেখতে পাইনি। বাংলাদেশের মতো এত ক্ষুদ্র আয়তনের একটা দেশে এত বড় জনসংখ্যা আমাদের অসংখ্য সংকটের জন্য দায়ী। তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণকে আবার খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রাধিকারে পরিণত করা হবে।

৩০. জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ : বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যেসব দেশের ওপর সবচেয়ে বেশি পড়েছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।

৩১. বর্তমান সরকারের সময়ের উন্নয়ন প্রকল্প : বর্তমানে চলমান কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করা হবে না, তবে বর্তমান সরকারের শেষ দুই বছরে তড়িঘড়ি করে নেওয়া প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনা করার জন্য কমিটি গঠন করা হবে। বর্তমানে চালু থাকা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ব্যয় নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

৩২. মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা : যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলমান থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার চেতনা নিয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলা হবে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হবে।

৩৩. প্রতিরক্ষা : রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে একটি জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন করা হবে। সব বিতর্ক এবং রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রেখে সশস্ত্র বাহিনীকে একটি দক্ষ এবং পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত থাকবে। শুধু প্রতিরক্ষা বিষয়েই ডিজিএফআইয়ের কর্মকান্ড সীমাবদ্ধ থাকবে।

৩৪. পররাষ্ট্রনীতি : ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব ও কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ নীতিতে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হবে। সার্কসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক এবং উপআঞ্চলিক জোটসমূহ আরো শক্তিশালী করার ভূমিকা রাখা হবে। সমতার ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো শক্তিশালী করায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

৩৫. অন্যান্য : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আরো শক্তিশালী করা হবে। সম্ভাব্য ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধারকাজের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দ্রুত সংগ্রহ করা হবে। দেশের নানা প্রান্তে নতুন নতুন খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান এবং বর্তমানে প্রাপ্ত খনিজ সম্পদ উত্তোলনের সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করে উত্তোলন করা হবে। বঙ্গোপসাগরে নতুন ভূমি উদ্ধারের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close