নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

সেনা নামবে ২৪ ডিসেম্বর

কাল থেকে রেকি

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাঁচ দিন আগে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে আগামীকাল শনিবার থেকে সারা দেশে রেকি করবেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তা ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গতকাল বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এই বৈঠকে করে নির্বাচন কমিশন। বৈঠকে অন্য কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ জানান, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিবেদন অনুযায়ী ভোটের নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিপত্রের মাধ্যমে তা জানিয়ে দেবে। কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়, ভোট কেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবেন সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল দেবেন। তারা ভোট কেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনা কক্ষে ঢুকতে পারবেন না। অবশ্য রিটার্নিং বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা চাইলে স্ট্রাইকিং ও মোবাইল টিমের সদস্যরা প্রয়োজনে ভোট কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন। সেনাবাহিনী ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। প্রতি জেলায় ছোট আকারে সেনাবাহিনীর একটি টিম পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়।

নির্বাচনের পূর্বে-পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে, মেট্রোপলিটন এলাকা, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে ও বিশেষ এলাকায় (পার্বত্য অঞ্চল, দীপাঞ্চল ও হাওর) পৃথকসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হবে। এ ছাড়া গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সহিংসতাপ্রবণ এলাকাগুলোর জন্য থাকবে আলাদা সতর্কমূলক ব্যবস্থা।

এর আগে সিইসি নুরুল হুদা গত ২২ নভেম্বর আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক সভায় পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, ‘১৫ ডিসেম্বরের পর সশস্ত্র বাহিনী ছোট ছোট দলে জেলায় জেলায় যাবে। এদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন। তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। অন্যান্য বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করবেন।’ এ বিষয়ে সচিব গত রাতে বলেন, ‘তারা কোথায় থাকবে, কী অবস্থায় থাকবে এসব বিষয়ে ১৫ ডিসেম্বর থেকে রেকি শুরু হবে।’ এদিকে, সেনাবাহিনী সূত্র জানায়, আজই সেনাবাহিনীর শীতকালীন মহড়া শেষ হচ্ছে। এবারের শীতকালীন মহড়াও হয়েছে সংক্ষিপ্ত। গত ২৫ নভেম্বর এ মহড়া শুরু হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সংসদ নির্বাচনে ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় সাধারণ এলাকা, মেট্রোপলিটন এলাকা এবং উপকূলীয়, দুর্গম ও পার্বত্য এলাকার ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য আলাদা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন থাকবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আদলে এবারও আইনশৃঙ্খলায় থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা ছক। ভোটকেন্দ্র পাহারার ক্ষেত্রে সাধারণ কেন্দ্রে একজন পুলিশসহ ১৪ জন, মেট্রোপলিটন এলাকার কেন্দ্রে তিনজন পুলিশসহ ১৫ জন এবং দুর্গম ও উপকূলীয় এলাকার কেন্দ্রে দুজন পুলিশসহ ১৪ জন রাখার বিষয়ে প্রাথমিক পরিকল্পনা রেখেছে ইসি।

তবে ভোটকেন্দ্র সুরক্ষিত রাখতে বাইরে থাকবেন সামরিক-আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা। এর মধ্যে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবেন সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। আর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্ট গার্ড ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল দেবেন। কিন্তু কেন্দ্রে প্রবেশে অনুমতি লাগবে রিটার্নিং বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের। এ ছাড়া নির্বাচনের বিধি ভঙ্গ, প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য, চরিত্র হননের অপচেষ্টা প্রতিরোধে মাঠে থাকবেন নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা। ইসির কার্যপত্রের তথ্যানুযায়ী, এবারের নির্বাচনে সব মিলিয়ে প্রায় সাত লাখের কাছাকাছি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকেবেন।

এসব বাহিনী ৩০০ সংসদীয় আসনের ৪০ হাজার ১৮০টি কেন্দ্র পাহারা এবং ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৩ জন ভোটারের নির্বিঘেœ ভোটদানে সহায়তা দিতে কাজ করবে। কমিশনের যুগ্ম সচিব খন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, জাতীয় নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ বেশি হলেও ভিআইপি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, থানা প্রশাসন শূন্য করে সব নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে এ কাজে যুক্ত করা যাবে না। ফোর্স মোতায়েন হলে কীভাবে সব কূল বজায় থাকবে, সেটিও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close