নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮

রোকেয়া পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

অধিকার আদায় করতে গিয়ে যেন অশান্তি না হয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মেয়েদের সব ক্ষেত্রে সুযোগ দিতে হবে। তারা যেন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে। তাহলে পরিবারেও তাদের গুরুত্ব বাড়বে। তবে অধিকার আদায় করতে গিয়ে যেন পরিবারে কোনো অশান্তি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল রোববার বেগম রোকেয়া দিবস ও রোকেয়া পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে গেছেন ‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করবার কেন নাহি দেবে অধিকার হে বিধাতা’। এই কান্না আমরা কাঁদতে চাই না। অধিকার আদায় করে নিতে হয়। অধিকার অর্জন করে নিতে হয়। তবে অধিকার আদায় করতে গিয়ে সংসারে যেন ঝামেলা না হয়, অশান্তি না হয়। সেটাও দেখতে হবে। এখানে সবারই একটা দায়িত্ব থাকবে। পরিবারেরও দায়িত্ব আছে। সমাজের প্রতিও দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্বটা থাকতে হবে। পরিমিতি বোধটা থাকতে হবে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পরিমিতি বোধ, সেটা আমি মনে করি।

কেউ কাউকে জায়গা দেয় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, জায়গা করে দিতে হবে, সুযোগ করে দিতে হবে আর সুযোগের সদ্ব্যবহারটাও করতে হবে। নারীরা দেশের উন্নয়নে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে সবক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন সংগ্রাম করেছেন তার পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছিলেন আমার মা। তিনি তার জীবনে যেই মহান আত্মত্যাগ করেছিলেন, তার সন্তান হিসেবে আমি তা জানি। তাই আজকের দিনে তাকে বারবার মনে পড়ছে। আব্বা থাকতেন কারাগারে বন্দি। মা একদিকে যেমন আমাদের সব ভাই বোনদের মানুষ করেছেন, আত্মীয়স্বজন বা পার্টির কেউ যদি অসুস্থ হতো তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা বা তাদের দেখা, যারা জেলে যেত প্রত্যেকটা পরিবারকে তিনি নিজে সহযোগিতা করতেন। পাশাপাশি দলকে সংগঠিত করা, আন্দোলন গড়ে তোলা এবং আব্বার জন্য মামলা-মোকাদ্দমা। একটার পর একটা তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হতো সেগুলোও একাধারে দেখার কাজ তিনি করে যেতেন।

শেখ হাসিনা বলেন, মাঝে মাঝে ভাবি কীভাবে তিনি এত কিছু করতেন। আমার বাবার রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন একজন উপযুক্ত সঙ্গী। যিনি সব সময় পাশে থেকে প্রেরণা জুগিয়েছেন। তিনি কোনো দিন বলতেন না যে সমাজে সংসারে কোনো অভাব অনটন বা কোনো অসুবিধার কথা নিয়ে মাকে কোনো দিন অভিযোগ করতে শুনি নাই। শুধু বলতেন তুমি তোমার কাজ করে যাও। ঘর সংসার নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।

এই যে পাশে থেকে প্রেরণা দেওয়া, যার কারণে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছি। সেই ৭ মার্চের ভাষণ, কতজন কত কথা বলেছে, শুধু মা বলেছে তোমার মনে যা আছে সেটাই তুমি বলবা। কারো কথা শোনার দরকার নাই।

নারীদের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হলে মেয়েদের কোনো স্থান সমাজে ও সরকারে থাকে না। এটাই প্রকৃত বাস্তবতা। সেটার দিকে নজর রেখে চাকরি থেকে শুরু করে নারীদের জন্য সরকার সব ধরনের সুযোগ করে দিয়েছে।

বেগম রোকেয়ার অবদান স্মরণ করে তিনি বলেন, আমরা নারী সমাজকে আজকে যতটুকু প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি তার পথ দেখিয়েছিলেন বেগম রোকেয়া। একটা অন্ধকার যুগ ছিল যখন মেয়েদের লেখাপড়া শেখা নিষিদ্ধ ছিল। সেই অচলায়তন ভেদ করেছিলেন বেগম রোকেয়া। তিনি লেখাপড়া শিখেছিলেন এবং তার স্বামী তাকে সহযোগিতা করেছিলেন। তার স্বপ্ন আমরা বৃথা যেতে দেইনি আর দেবও না।

অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close