গাজী শাহনেওয়াজ

  ২১ নভেম্বর, ২০১৮

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইসির বৈঠক কাল

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুতসহ থাকছে এক ডজন নির্দেশনা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাল বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছে ইসি। নির্বাচনের মাঠের সমতল ক্ষেত্র (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) প্রস্তুত করার বিশেষ নির্দেশনা থাকবে এ বৈঠকে। সেই সঙ্গে থাকছে নিরাপত্তা ছক নির্ধারণসহ এক ডজনের বেশি নির্দেশনা। সেখানে আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ফোর্স মোতায়েন, রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা, সামাজিক সম্প্রীতি ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিরোধসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। ওই বৈঠকে এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কার্যপত্র।

এদিকে নির্বাচনে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব, অপপ্রচার ও ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ানো বন্ধ এবং নির্বাচনের সময়ে নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল সেবা অব্যাহত রাখতে একটি বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। আগামী ২৬ নভেম্বর এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া প্রশাসনের বিরুদ্ধে আসা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে ইসি। এরই অংশ হিসেবে মুন্সীগঞ্জের রিটার্নিং কর্মকর্তার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই জেলার লৌহজং থানার ওসিকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। আরো কয়েকজন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইসির সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের বৈঠক প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটি গ্রহণযোগ্য ও আইনানুগ নির্বাচন করতে চাই। পুলিশ কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনাই দেওয়া হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য কর্মকর্তাদের বলা হবে।’

জানা গেছে, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিরাজমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এ বিশেষ সভা ডেকেছে ইসি। এতে আইজি, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, উপমহাপুলিশ পরিদর্শক ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

ইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের সময়ে বক্তব্যে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছে ইসি। তবে পুলিশ প্রশাসনকে সরাসরি কোনো নির্দেশনা দেয়নি কমিশন। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কমিশন পুলিশের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরো জানান, সাধারণত প্রতীক বরাদ্দের পর আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক করে ইসি। এবারও ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় সভা শুধু পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যায়। আশঙ্কাজনক হারে বাড়ে বৈধ অস্ত্রের অপব্যবহার। এমনকি কিছু গোষ্ঠী বা আন্ডারগ্রাউন্ডের সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়ে যায়। শুরু হয় কালো টাকার প্রভাব। এ সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার মাত্রা বেড়ে যায়। এমন সব শঙ্কা রেখে বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়েছে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত, নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বাসভবন ও অফিস কার্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদার। এছাড়া রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা জোরদার করার বিষয়টিও আলোচ্য সূচিতে রাখা হয়েছে।

এ বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষেয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনপূর্ব শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে করণীয় স্থির করা। নির্বাচনী আইনের বিধান প্রতিপালনের পরিবেশ তৈরি করা। নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করা। বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, সব প্রার্থী যাতে প্রচারে সমান-সুযোগ পান সেজন্য কয়েকটি বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা যাতে নির্বিঘেœ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারেন সেজন্য পুলিশ ফোর্স দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে।

পক্ষপাতের কারণে পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা শুরু : এদিকে পুলিশ ও প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে ইসি। এরই মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন মহলের অভিযোগ জমা পড়ছে ইসিতে। এর মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের অভিযোগ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ইসি।

প্রসঙ্গত, ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। পরে পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হয় এবং সে অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ২ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর ও ভোট গ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close