বাকৃবি সংবাদদাতা

  ১৪ নভেম্বর, ২০১৮

বাকৃবি গবেষকদের সাফল্য

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং

পাট, মহিষ ও ইলিশের পর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এবং বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) একদল গবেষক। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের ঘোষণা দেন বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক ড. মো. জসিমউদ্দিন খান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ এম ইয়াহিয়া খন্দকারের নেতৃত্বে গবেষক দলের সদস্যরা হলেন পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্লা, পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম ভূঞা, বিএলআরআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল জলিল, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. গৌতম কুমার দেব, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. পণির চৌধুরী ও নূরে হাছনি দিশা।

গবেষণা প্রধান অধ্যাপক ড. এম এ এম ইয়াহিয়া খন্দকার জানান, এ বছরের জুলাই থেকে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পূর্ণ করার এ কাজ শুরু হয়। প্রথমে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) হতে বংশ ইতিহাস জানা ও সংরক্ষিত বিশুদ্ধ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের কানের টিস্যু সংগ্রহ করে বাকৃবির পোলট্রি বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জিনোমিক্স ল্যাব এবং অ্যানিমেল ব্রিডিং অ্যান্ড জেনেটিক্স ল্যাবরেটরিতে উচ্চ গুণগত মানের জিনোমিক ডিএনএ প্রস্তুত করা হয়। পরবর্তীতে জেনউইজ জিনোম সিকোয়েন্সিং সেন্টারে সংগৃহীত ডিএনএ থেকে প্রাথমিক নিউক্লিউটাইড তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এরপর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে সংগৃহীত প্রাথমিক ডাটা থেকে ছাগলের পূর্ণাঙ্গ জিনোম অ্যাসেম্বলি করা হয়। যেখানে পূর্ণাঙ্গ সিকোয়েন্স এনালাইসিস করে ২৬ লাখ ৫ হাজার ৩০০টি নিউক্লিউটাইড পাওয়া গেছে। এরপর ব্ল্যাক বেঙ্গল জিনোম তথ্যসমূহ আন্তর্জাতিক জিনোম ডাটাবেজেও (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) জমা করা হয়েছে এবং অনুমোদন পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের প্রয়োজনীতা সম্পর্কে প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. এম এ এম ইয়াহিয়া খন্দকার বলেন, ব্ল্যাক বেঙ্গল একটি ছোট জাতের বাংলাদেশি ছাগল। এটি দেশের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাণিসম্পদ, যা ‘গরিবের গাভী” বলেও পরিচিত। এ জাতের ছাগল দ্রুত প্রজননশীল, চামড়া উন্নত মানের এবং উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া উপযোগী। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর অবদান অপরিসীম। বিশেষ করে গ্রামীণ দুস্থ মহিলা, ভূমিহীন পরিবারের জীবন ও জীবিকায় ছাগল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ জিনোম সিকোয়েন্সিং ব্যবহার করে এখন ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের ওজন বৃদ্ধির হার, দুধ উৎপাদন, বাচ্চা উৎপাদন হার, রোগ প্রতিরোধ ও মাংসের গঠন সংক্রান্ত জিন আবিষ্কার ও তাদের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করা সম্ভব হবে; যা দেশের দারিদ্র্যবিমোচন, পুষ্টি সরবরাহ বৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলকে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close