গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৪ নভেম্বর, ২০১৮

রিটার্নিং অফিসারদের ব্রিফিং অনুষ্ঠানে সিইসি

যেকোনো ধরনের চাপ শক্ত হাতে মোকাবিলা করুন

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দেশে প্রথমবারের মতো ইতিহাস সৃষ্টি করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নানা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কঠোর অবস্থানে থেকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রভাবশালীদের কাছ থেকে কোনো ধরনের চাপ এলে শক্ত হাতে তা মোকাবিলা করা এবং প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত বেশ কয়েকজন রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে জানতে চান নির্বাচনী এলাকায় প্রভাবশালীরা কোনো অনিয়মে জড়ালে কীভাবে তাদের প্রতিহত করা যাবে। এ বিষয়ে তারা কমিশনের নির্দেশনা চান। অনুষ্ঠানে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এমন প্রশ্নের তাৎক্ষণিক কোনো জবাব না দিয়ে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে তাদের আশ্বস্ত করা হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে গতকাল রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্বাচন-সংক্রান্ত ব্রিফিং অনুষ্ঠানে এসব নির্দেশনা দেন সিইসি। রিটার্নিং অফিসাররা করণীয় নির্ধারণ করে

দিতে কমিশনকে অনুরোধ করেন। দন্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র গ্রহণ-সংক্রান্ত বিষয়েও কমিশনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

নির্বাচন কমিশনের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, দন্ডপ্রাপ্ত আসামির বিষয়ে বিধিমালায় যা আছে, তাই করবেন। তার দন্ডের বিরুদ্ধে যদি কোনো স্থগিতাদেশ না থাকে, তাহলে আইনত খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিতে হবে।

এদিকে ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের তফসিল পেছানোর পুনঃদাবি জানালেও এই দাবি গ্রহণ করার কোনো অবকাশ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ইসি। আগামী ৩০ ডিসেম্বরই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে হবে জানিয়ে তফসিল না পেছানোর যৌক্তিক ব্যাখ্যাও তুলে ধরা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকে অযৌক্তিক দাবি থেকে সরে এসে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিতেও বলেছে ইসি।

নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে সিইসি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন নির্ধারিত হয়েছে। এরপর আর তারিখ পেছানোর সুযোগ নেই। নির্বাচনের পর ফলাফল আসবে, এরপর গেজেট করা। ৩০০ আসনের গেজেট করার জন্য সময় দরকার। দ্বিতীয়ত, টঙ্গীর ইজতেমা হবে জানুয়ারির ১১ তারিখে। ইসিকে চিঠি দিয়ে এটি জানানো হয়েছে। এ সময় সারা দেশ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আনতে হয়। যাতে কোনো সহিংসতা না ঘটে।

তিনি বলেন, ‘খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিনসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচনের বিষয়টি পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যেহেতু নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়েছে, এতে আমরা খুশি হয়ে তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভোটের দিন পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছি। কিন্তু ভোটের তারিখ আর পেছানোর সুযোগ নেই।’

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘আপনারা দেশি-বিদেশি সবস্তরের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। এ বছর নির্বাচনের পরিবেশ হবে ভিন্ন। আমাদের দেশে কখনো নির্বাচন হয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসিত নির্বাচন, কখনো সেনাবাহিনী, কখনো কেয়ারটেকারের অধীনে। কিন্তু অন্য নির্বাচন থেকে এই নির্বাচন সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ সংসদ বহাল থেকে, সরকার বহাল থেকে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৪ সালে এমন একটি নির্বাচন হয়। কিন্তু সেই নির্বাচনে সব দল অংশ নেয়নি। আমরা সেজন্য আনন্দিত যে, এই নির্বাচনে সব দল অংশ নিতে যাচ্ছে। সে কারণে আপনাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে।’

সিইসি বলেন, নির্বাচন হতে হবে সম্পূর্ণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। ভোট একটি উৎসব। ভোটের দিন ভোটাররা আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট দিতে যাবে। সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথ পালন করবে। ভোটের বুথ ছাড়া বাকি সব স্থানে পর্যবেক্ষকসহ সবাই যেতে পারবেন এবং তা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। নির্বাচন যেন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, সেই পরিবেশ রিটার্নিং কর্মকর্তাদেরই সৃষ্টি করতে হবে। এখন থেকে নির্বাচনের সব দায়িত্ব আপনাদের। কীভাবে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ করবেন, ভোটকক্ষ তৈরি করবেন, সব দায়িত্ব আপনাদের। সবাই আন্তরিকভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেন, তাহলে সামগ্রিকভাবে আমাদের ওপর জনগণের সন্দেহ হবে না।’

প্রার্থী এবং রাজনীতিবিদরা সম্মানিত ব্যক্তি উল্লেখ করে সিইসি বলেন, অনেকেই এমপি ছিলেন, আবার অনেকে আছেন, যারা এমপি ছিলেন না তারাও এলাকায় সম্মানিত ব্যক্তি। তাদের সঙ্গে যদি সুসম্পর্ক রাখেন, তাহলে কেউই নির্বাচনে সমস্যা সৃষ্টি করবেন না। তাদেরকে কখনো প্রতিপক্ষ হিসেবে নেবেন না। তাদের সহযোগিতা করলে তারাও আপনাদের সহযোগী বন্ধু হিসেবে কাজ করবে। বিরোধিতা করবে না। নিরপেক্ষতা হবে একমাত্র মাপকাঠি।’ কে এম নুরুল হুদা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, এবার নতুন আইনে এবং ভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন হবে। তাই জাতি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাই মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের থেকে চাপ এলে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, দায়িত্ব পালনে কোনো চাপের কাছে মাথা নত করবেন না। কমিশনের আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করবেন। অতি উৎসাহী আচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না।

নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি চালক হয়, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফল করতে হলে রিটানিং কর্মকর্তারা সেই গাড়ির ফুয়েল হিসেবে কাজ করে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জনগুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করবেন।

উল্লেখ্য, রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণের পুনঃতফসিল দেয় ইসি। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৮ নভেম্বর, বাছাই ২ ডিসেম্বর আর প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ ডিসেম্বর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close