বদরুল আলম মজুমদার

  ১১ নভেম্বর, ২০১৮

নির্বাচনে যাবে ঐক্যফ্রন্ট

বিএনপির দুই শীর্ষ কান্ডারি নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেওয়ায় দলটির নেতারা সেই পথে হাঁটছেন। তবে শেষ ঘোষণা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ওপর ছেড়ে দিলেও আসল সিদ্ধান্ত আসে বিএনপির তরফ থেকে। সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল থেকে বিএনপি, ২০ দল ও ফ্রন্টের তিনটি বৈঠক শেষ করে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার করেছে দলগুলো। বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না করলেও দু-এক দিনের মধ্যেই এমন সিদ্ধান্ত জানাবে সরকারবিরোধী এ জোট। গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক, ২০ দলীয় জোটের বৈঠক এবং ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে এমনই মতৈক্য হয়েছে।

নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর ড. কামালের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে উভয় সঙ্কটে পড়ে। যদিও ঐক্যফ্রন্টের অধিকাংশ নেতা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক ছিলেন জোট গঠনের শুরুতেই। নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার সঙ্কট শুরু হয় মূলত বিএনপির তরফ থেকেই। দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ও তৃণমূলের সমর্থকরা খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনোভাবেই নির্বাচনে যেতে রাজি ছিলেন না। তাছাড়া শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গিয়ে সরকারকে বৈধতা দেওয়ারও বিরোধী ছিল দলের একটি অংশ। এমন অবস্থায় বিএনপিসহ ২৩ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৪টি দল দেশের রাজনীতির নতুন হিসাব ও আন্তর্জাতিক মহলের তাগিদেই মূলত নির্বাচনী ট্রেনে উঠেছে। বিএনপি ও জোটের সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

শুক্রবার রাজশাহীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের মাধ্যমেই এ জোটে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করে। জোট নির্বাচনে যাবে এমন কথা কেউ সরাসরি না বললেও আকার ইঙ্গিতে সেটিই পরিষ্কার করেছেন। আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের কৌশলের কারণেই মূলত নির্বাচনে পথে আছে ঐক্যফ্রন্ট। তাছাড়া নির্বাচনে না গেলে, সেই নির্বাচন বয়কট করার মতো অবস্থা গড়ে তোলার সুযোগ কম থাকায় জোটের নেতারা নির্বাচনের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। তাছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য চাপ আন্তর্জাতিকভাবেও বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদেশিরা এমন চাপ তৈরি করলেও জোট যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে এর কোনো যৌক্তিকতা থাকে না।

গতবারের অভিজ্ঞতার আলোকে বিএনপি এবার নির্বাচনে আসবে বলে মনে করেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা। গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ‘জাতীয় নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’ এ তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, যদি সব দল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) রাজি না হয় তাহলে তা করা উচিত নয়। জোর করে করলে অসুবিধা হতে পারে। শামসুল হুদা মনে করেন, রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া, ভাঙচুর এ ধরনের প্রথাগত আন্দোলনের সংস্কৃতি ফিরে আসার আশঙ্কা খুবই কম, এগুলো জনগণই প্রত্যাখ্যান করবে। এসব বিবেচনায় বিএনপির নির্বাচনের বাইরে থাকার সুযোগ কম।

এদিকে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বিকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিএনপির নেতারা নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সূত্র জানায়। বিশেষ করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও কারাবন্দি চেয়ারপারসন নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে গতকালের বৈঠকে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার লাভ-ক্ষতির আলোচনা থেকে বেশি প্রাধান্য পায় নির্বাচনী কর্মকৌশল। বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনের ইশতেহার, দলীয় মনোনয়ন, নির্বাচন পরিচালনাসহ মাঠে বিএনপির কৌশল কী হবে এমন বিষয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। তাছাড়া বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২৩ দল ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে আসন বণ্টনে বিএনপির সর্বশেষ অবস্থান কী হবে এমন আলোচনাও স্থান পায়। এর বাইরে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য অনেকেই চেষ্টা তদবির করছেন। এ অবস্থায় একক প্রার্থী নির্ধারণে জটিলতার বিষয়টিও আলোচনা হয়। তবে এক্ষেত্রে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হস্তক্ষেপই পরিস্থিতির সমাধান হতে পারে। নির্বাচনী মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষরের বিষয়ে আলোচনা শুরু হলেও এ বিষয়ে সিদ্ধান্তÍ লন্ডন থেকেই আসতে পারে বলে মত দেন নেতারা।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর ২৩ দলের সঙ্গে বৈঠক করেন জোট নেতারা। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বৈঠকটি শুরু হয়ে চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলির সভাপতিত্বে জোটের বৈঠকে নেতারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন। বৈঠক থেকে বের হয়ে ২৩ দলীয় জোটের সমন্বয়ক এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ বলেন, নির্বাচনে যাব কি যাব না এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আগামী দুই দিনের মধ্যে ২০ দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জাতির সামনে উপস্থাপন করবে বিএনপি। অলি আহমদ বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে তাহলে নির্বাচনের পরিবেশ ফিরে আসবে। এখন পর্যন্ত সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। এটা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।

জোটগত নির্বাচনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে চিঠির বিষয়ে সাংবাদিকের বলেন, অবশ্যই নিবন্ধনভুক্ত যেসব দল আছে তারা চিঠি লিখবে। চিঠির ভাষা এ রকম হবে, ‘যদি আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি, সেক্ষেত্রে আমাদের অনেকে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবেন। আবার অনেকে জোটগতভাবে নির্বাচন করবেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শনিবারের বৈঠকে ভোটে যাওয়ার বিষয়ে জোটের নেতাদের কাছে মতামত জানতে চায় বিএনপি। এ বিষয়ে অধিকাংশ জোট নেতা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন। এছাড়া দু-একজন পরিস্থিতি আরো ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছেন। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ২০ দলীয় জোটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচনের যাওয়ার ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমরা নির্বাচনে যাব কি যাব না তা দুই দিনের মধ্যে পরিষ্কার করব। তবে প্রতীকের বিষয়ে নিবন্ধনকৃত দলগুলো তাদের নিজ দলের ইচ্ছা জানিয়ে কমিশনে চিঠি দেবেন আজ। তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ এখনো সরকারের নিয়ন্ত্রণে তাই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলে দ্বিমত থাকা স্বাভাবিক। বিএনপি যেহেতু দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একটি জোটে আছে তাই অংশ নেওয়ার ব্যাপারে জোটের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close