নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৬ নভেম্বর, ২০১৮

ইসিতে ঐক্যফ্রন্ট

তফসিল পিছিয়ে ভোটে সেনা মোতায়েনের দাবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে বিরত থাকতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অনুরোধ করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটে সেনা মোতায়েনেরও দাবি জানিয়েছে এই জোট। গতকাল সোমবার বিকেলে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলে এই দাবি জানিয়েছে। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রতিনিধিদলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনারদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে।

সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলের প্রতি মানুষের আস্থা আছে কিনা এ নিয়েই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় নয়, ভেতরে গলার আওয়াজ এমনই ছিল।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল জাসদের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম রবের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের অপর সদস্যরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বরকতউল্লা বুলু, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ ও সুলতান মো. মনসুর।

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। এ সময় অপর চার কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদত হোসেন চৌধুরী ও কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

তফসিল পেছানোর দাবিতে এর আগেও একবার ইসিতে চিঠি দিয়েছিলেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন।

বৈঠকে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বৈঠকে বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের প্রতি কোনো অনাস্থার কথা বলতে আসিনি। তবে এই নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা নেই।

মান্নার বক্তব্যের জবাব দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। তিনি বলেন, আপনাদের (রাজনৈতিক দল) ওপরও তো জনগণের আস্থা নেই।

সিইসির এই বক্তব্যের পর মান্না বলেন, ‘মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ।’

এরপর প্রতিনিধি দলের আগের সদস্য সুলতান মনসুর বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দেখা গেছে এক দলের নেতা আরেক জেলায় জেলে। এভাবে চলতে পারে না। তিনি ইসিকে সতর্ক করে বলেন, ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন আর করা যাবে না।

সূত্র জানায়, এর আগে প্রতিনিধি দলের প্রধান আ স ম রব নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে সেনা মোতায়েনের দাবি জানালে নির্বাচন কমিশনার শাহাদত হোসেন চৌধুরী বলেন, সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া অসাংবিধানিক। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়েন বিষয়ে কমিশনে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে দেখা গেছে অতীতের নির্বাচনগুলোতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।

পরে এক গণমাধ্যমকে দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে আ স ম রব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমাদের আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। আমাদের দাবিগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে তারা কথা দিয়েছেন যে, এগুলো তারা রক্ষা করবেন। আর কয়েকটি বিষয়ে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি তবে পরে জানাবেন বলেছেন।’ দাবিগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম দাবি ছিল সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা না করা। আমরা তাদের বলেছি, অতীতের বহু নির্বাচন হয়েছে বহুবার তফসিল পিছিয়েছে কিন্তু কোনো সমস্যা হয়নি। অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা না করে নির্বাচন হলে তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সংসদের মেয়াদ আছে। সুতরাং তফসিল পেছালে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না।’

আ স ম রব বলেন, ‘আমরা কমিশনকে বলেছি, পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয় না। কারা কথা দিয়েছে এজেন্টদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়া হবে। তারা রেজাল্ট শিট তৃণমূল পর্যায়ে বিতরণ করবে বলেও জানিয়েছে। আমাদের দাবি, ভোট গণনার আগে এজেন্টদের কাছে কোনো সই নেওয়া যাবে না। তারপর কমিশনকে আমরা বলেছি, আপনারা ২০১৯ সালেও বাংলাদেশে থাকবেন। সেটা বিবেচনায় নিয়েই নির্বাচন করবেন।’ ইভিএম না দেওয়া ও সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার দাবির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে পরে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে বলে জানান আ স ম রব। তিনি বলেন, ‘আলোচনায় মনে হয়েছে, তফসিল পেছানোর দাবিটি তারা বিবেচনায় নিয়েছেন।’

পরে ইসির সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ তাদের ব্রিফিংয়ে বলেন, ঐক্যফ্রন্ট দাবি জানিয়েছে ৭ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের যে সংলাপ আছে, সেখানে কি হয় না হয় সেদিকে ইসি যেন লক্ষ্য রাখে। আর সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন তফসিল না ঘোষণা করা হয়। তিনি বলেন, ‘সেনা মোতায়েনের বিষয়ে আমরা বলেছি, তফসিলের পর এ নিয়ে আলোচনা হবে। ঐক্যফ্রন্ট ইভিএম ব্যবহার না করার প্রস্তাব দিয়েছে, আমরা বলেছি সীমিত পরিসরে ব্যবহার করা হবে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আগামী ৮ নভেম্বর আমাদের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি আছে তবে এ বিষয়ে ওইদিন সকাল ১০টায় ইসির সভায় সিদ্ধান্ত হবে। এতে ৭ নভেম্বরের সংলাপের বিষয়টি প্রতিফলিত হতে পারে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close