হাসান ইমন

  ০২ নভেম্বর, ২০১৮

মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার

হস্তান্তরের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন, দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত দুই সিটি

৫ নভেম্বরের মধ্যে হস্তান্তর

রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার হস্তান্তরের জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। গত ২২ অক্টোবর এক সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ কমিটি ঘোষণা দেন। কমিটিকে ৫ নভেম্বরের মধ্যে এ ফ্লাইওভারটি হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এখন এ ফ্লাইওভারটির দায়িত্ব বুঝে নিতে প্রস্তুত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন) মো. মাহবুব হোসেনকে আহ্বায়ক করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী এবং এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এছাড়া মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত কুমার পালকে সদস্যসচিব হিসেবে কমিটিতে রাখা হয়েছে।

সভা সূত্রে জানা যায়, নকশা অনুমোদনের পর থেকেই মগবাজার মৌচাক-ফ্লাইওভার নিয়ে নানা ত্রুটি দেখা দেয়। এর মধ্যে ফ্লাইওভারে ট্রাফিক সিগন্যাল, বৈদ্যুতিক বাতি নষ্ট, বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, বাম দিকে স্টিয়ারিং, যানজট লেগে থাকা, ওঠা-নামার র‌্যাম্প জটিলতাসহ নামার লুপে যানজট লেগেই থাকে। যা ফ্লাইওভারের ওপরে চলাচলকারীদের জন্য ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় ময়লা পানি জমে পরিবেশদূষণ হচ্ছে।

সভায় প্রকল্প পরিচালক জানান, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্প ২০১৭ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কীভাবে ফ্লাইওভারটির রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীদের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় নথিপত্রও দেওয়া হয়েছে তাদের। সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব জানান, যানজট নিরসনে এ ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হয়। তাই ফ্লাইওভারটি সুশৃঙ্খল পরিচালনা করার জন্য রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।

সভায় সভাপতি বলেন, ফ্লাইওভারটি জনসাধারণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার জনস্বার্থ বিবেচনায় দেশি ও বিদেশি অর্থায়নে সুপরিকল্পিতভাবে নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ করেছে এবং নগরবাসী এর সুফল ভোগ করছে। এটির সুষ্ঠু পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দায়িত্ব গ্রহণ করুক।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও উড়াল সড়কটির প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারটির কাজ ২০১৭ সালে শেষ হলেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ওই সময় থেকে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ গত মাসে ফ্লাইওভারটি হস্তান্তরের জন্য ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করে দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

তিনি আরো বলেন, কমিটির কাজ চলমান রয়েছে। যে সমস্যাগুলো ছিল সেগুলো সমাধান হয়ে গেছে। সব ঠিকঠাক থাকলে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তাফা বলেন, পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি হয়েছে, সে কমিটি রিপোর্ট দিলে মন্ত্রণালয় ফ্লাইওভারের দায়িত্ব বুঝিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের চিঠি দেবে। তবে ফ্লাইওভারের দায়িত্ব নিতে এখন আমরা প্রস্তুত।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির অতিরিক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার হস্তান্তরের বিষয়ে গতকাল প্রাথমিক একটা সভা হয়েছে। সেখানে হস্তান্তরের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে যেহেতু মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছে অবশ্যই সিটি করপোরেশন সেটার দায়িত্ব নেবে।

জানা গেছে, মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়কটির বাংলামোটর, মগবাজার, তেজগাঁও, মালিবাগ রেলগেট, রামপুরা অংশ পড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতায়। আর বাকি অংশ মৌচাক, মালিবাগ মোড়, রাজারবাগ, শান্তিনগর অংশ পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতায়।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিন তলাবিশিষ্ট চার লেনের এই ফ্লাইওভারটির দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ৭ কিলোমিটার। এটি ১০ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল। ১২১৮ কোটি ৮৯ হাজার ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এর প্রতি মিটারে খরচ হয়েছে ১৩ লাখ টাকা। ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজ করা হয়েছে তিনভাগে। প্রথম অংশ সাতরাস্তা-মগবাজার-হলি ফ্যামিলি পর্যন্ত। এই অংশটি ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করেন। এই ফ্লাইওভারটির দ্বিতীয় অংশ হলো বাংলামোটর-মগবাজার-মৌচাক পর্যন্ত। এই অংশটি যান চলাচলের জন্য গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর উন্মুক্ত করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ফ্লাইওভারটির তৃতীয় অংশ শান্তিনগর-মালিবাগ-কাকরাইল-রাজারবাগ অংশ গত ২৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close