নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২৩ অক্টোবর, ২০১৮

আদমজী ইপিজেড

শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী ইপিজেডের রফতানিমুখী একটি পোশাক কারখানার বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শ্রমিকরা। এ সময় বাধা দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষে ১২ পুলিশসহ অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ সময় শ্রমিকরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সোমবার সকালে আদমজী ইপিজেডের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয় সোয়াদ ফ্যাশনের শ্রমিকরা। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চাইলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পরে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে। সেখন থেকে তাদের সরিয়ে দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় শ্রমিকরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এতে তিন পুলিশ সদস্যসহ আহত হয় অর্ধশতাধিক। সেখান থেকে ৭ শ্রমিককে আটক করা হয়েছে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত শ্রমিকদের বিভিন্ন স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকদের অভিযোগ, গত ৩-৪ মাস ধরে তারা বেতন পাচ্ছেন না। এছাড়া বোনাস, ছুটির টাকা ও রিজার্ভ ফান্ডের টাকাও পরিশোধ করা হয়নি। এর মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার কর্মরত শ্রমিককে কিছু না বলে হঠাৎ করে কারখানাটি গত ২১ সেপ্টেম্বর বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ। পরের দিন ইপিজেডের প্রধান ফটকে বন্ধের নোটিশ দেখে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে। পরে শিল্প পুলিশ বন্ধ কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ২২ অক্টোবর বেতন-বোনাস পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমকিরা সড়ক অবরোধ তুলে নেয়। বেতন পরিশোধের পূর্বনির্ধারত তারিখ অনুযায়ী সোমবার ইপিজেড এলাকায় শ্রমিকরা গেলে পুলিশ তাদের ইপিজেড ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। এ সময় পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা শিমরাইল-নারায়ণগঞ্জ সড়কের ইপিজেড এলাকায় একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং যানবাহন ভাঙচুর করতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।

নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশ সুপার জাহিদুর রহমান জানান, শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকালে একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করে। এ সময় বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। পরে বেপজা কর্তৃপক্ষ, শিল্প পুলিশ সুপার জাহিদুর রহমান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আবদুস সাত্তার মিয়া, নাসিক প্যানেল মেয়র-২ মতিউর রহমান মতি বন্ধ ঘোষিত সোয়াদ কারখানার মালিক পক্ষের সঙ্গে বেলা ১১টার দিকে বৈঠক করেন। বৈঠকে আগামী ১৫ নভেম্বর শ্রমিকদের বকেয়া বেতনাদি পরিশোধের আশ্বাস দিলে তারা ৫ ঘণ্টা পর দুপুর ১টার দিকে সড়ক অবরোধ তুলে নেয়। তিনি আরো জানান, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ অভিযাগে ৩ শ্রমিককে আটক করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১২ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। তাদের নারায়ণগঞ্জের খানপুর হাসপাতলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ফিনিশিং অপারেটর সোহেদা আক্তার বলেন, আমরা নির্ধারিত তারিখে গতকাল সকালে বেতন নিতে আসলে ইপিজেটের মূল ফটকে আমাদের বাধা দেওয়া হয়। পুলিশ বিনা কারণে আমাদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল ও মারধর করে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক শ্রমিককে পিটিয়ে আহত করে। আহত শ্রমিকদের স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সুইং অপারেটর উর্মি আক্তার বলেন, আমরা না খেয়ে, না পরে, অর্ধহারে-অনাহারে, দিন কাটাচ্ছি আর বেতন নিতে এসে পুলিশের পিটুনি খেয়ে এখন খালি হাতে বাড়ি যেতে হচ্ছে।

এদিকে বিক্ষুব্ধ পোশাক শ্রমিকরা সকাল ৭টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ইপিজেড গেট সংলগ্ন শিমরাইল-আদমজী-নারায়ণগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখায় সকাল থেকেই সড়কের দুই দিকেই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে সড়কটিতে একেবারেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মতিউর রহমান মতিসহ শ্রমিক লীগ নেতাদের মধ্যস্থতায় শ্রমিকরা তাদের অবরোধ তুলে নেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close