বিশেষ প্রতিনিধি

  ২৩ অক্টোবর, ২০১৮

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচন হবে সময়মতো

* যারা নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী না * মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি * দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে * রাজনৈতিক জোট গঠনকে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানায়

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশে সময়মতো নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে যারা সংশয় প্রকাশ করছে তাদের উদ্দেশ্য সবাই জানে। যারা নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী না। তারা চায় না দেশে গণতন্ত্র থাকুক। নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তবে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আগামী সংসদ নির্বাচন হবে।

গতকাল সোমবার বিকেল ৪টায় গণভবনে সৌদি আরব সফরের বিষয় জানাতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন নিয়ে এ কথা বলেন। গত ১৬ অক্টোবর মঙ্গলবার থেকে ১৯ অক্টোবর শুক্রবার পর্যন্ত সৌদি সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লিখিত বক্তব্য পাঠের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েও নিজের ভাবনা তুলে ধরেন। জাতীয় সংসদের বিরোধী দল চাইলে নির্বাচনকালীন সরকার ছোট হবে, না চাইলে হবে নাÑ বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রসঙ্গে বলেন, খুনি, দুর্নীতিবাজ ও নারী কটূক্তিকারীদের ঐক্য হয়েছে। নতুন জোট সফল হলে অসুবিধা কোথায়? এ সময় তিনি নতুন জোটকে স্বাগত জানান। এছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা ও ১১ কর্মসূচি নিয়েও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

সময়মতো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে : আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশকে দেখতে চাই দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়াই লক্ষ্য। আমার লক্ষ্য, উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তিনি বলেন, আমি ক্ষমতায় থাকাকালে মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি, সারা জীবন কাজ করে যাব। বাংলাদেশের জনগণ যদি চাই তাহলে আবারও ক্ষমতায় আসব এবং জনগণের উন্নয়ন করব আর জনগণ না চাইলে ক্ষমতায় আসব না। জনগণ যা চাইবে তাই হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মেজরিটি পাওয়া সত্ত্বেও সব দল থেকে নিয়েই মন্ত্রিসভা গঠন করেছি। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।

নির্বাচনকালীন সরকার দরকার আছে কিনা দেখা যাবে : নির্বাচনকালীন ছোট মন্ত্রিসভা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদে বিরোধী দলগুলো চাইলে হবে, না হলে হবে না। ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় ছোট মন্ত্রিসভা ও তখনকার বিরোধী দলকে নিয়ে সব দলের সরকার গঠনের কথা বলেছিলাম। এখন এটা দরকার আছে কিনা সেটা দেখা যাবে। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ছোট করা হলে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আর তাছাড়া বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের মন্ত্রী আছে। সুতরাং ছোট না করলে কোনো অসুবিধা আছে কিনাÑ জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের মতো যেসব দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র আছে, কোথাও নির্বাচনের সময় মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনা হয় না।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা কেন পুনর্গঠন করা হয়েছিল, সে বিষয় ব্যাখ্যা করে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় বিরোধী দলে থাকা বিএনপি নির্বাচনে আসতে রাজি হচ্ছিল না বলে তখন তাদের নির্বাচনকালীন সরকারে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তারা যে মন্ত্রণালয় চায়, সেই মন্ত্রণালয় দেয়া হবে বলেছিলাম। তারা যখন আসেনি তখন বিভিন্ন দলগুলো নিয়ে ছোট মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা (দশম সংসদ নির্বাচনে) মেজরিটি পাওয়া সত্ত্বেও প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো থেকে মন্ত্রিসভা গঠন করেছি। এই মন্ত্রিসভায় জনগণের প্রতিনিধি যারা, তারা আছেন। যেহেতু সব দলের প্রতিনিধি আছে, জানি না এটাকে ছোট করার দরকার আছে কিনা। কাটছাঁট করা হবে কিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রিসভা ছোট করা হলে একজনকে কয়েকটা মন্ত্রণালয় চালাতে হবে। সেক্ষেত্রে কোনো কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দুই তিন মাসের জন্য থমকে যেতে পারে। এ বিষয়গুলোও ভাবতে হবে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে আওয়ামী লীগ দুশ্চিন্তা করছে না : ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চান সাংবাদিকরা। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতিতে স্বাধীনতা সবার আছে, জোট গঠনের অধিকারও আছে। রাজনৈতিক জোট গঠনকে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানায়। আমাদের দেশে সবক্ষেত্রে স্বাধীনতা আছে। আমি একে স্বাগত জানাই।

‘তবে কারা ঐক্য করেছে তা খেয়াল রাখতে হবে। দেখতে হবে কার কী অঙ্গভঙ্গি, কার কী বাচনভঙ্গি সেটা দেখতে হবে। এদের একজন মেয়েদের প্রতি কী ধরনের কটূক্তি করেছে সেটাও দেখেছেন। ঐক্যফ্রন্টে এ গাছের ছাল ও গাছের বাকল যোগ দিয়েছে। আওয়ামী লীগ এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছে না’Ñ বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ মানুষ এটাকে কীভাবে দেখছে সেটাই দেখার বিষয়। তারা রাজনৈতিকভাবে জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারলে করুন। এখানে অসুবিধার তো কিছু নেই।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবি ও লক্ষ্য নিয়ে বসতে সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া হবে বলে জানা গেছে, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি বা আলোচনায় বসবেন কিনা? এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখনো কারো কাছ থেকে কোনো চিঠি পায়নি, আগে পাই তারপর দেখা যাবে। এ সময় তিনি বলেন, ড. কামাল কাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন সেটা আগে দেখতে হবে। যারা মানিলন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত, যারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত, যারা এতিমের অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত, যারা দ-প্রাপ্ত এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ড. কামাল।

যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, যারা আগুন দিয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তারাই এই গ্রুপে রয়েছে। এরা সবাই এক হয়েছে তাদের রাজনীতিটা কোথায়? প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী।

ড. কামাল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির দায়ে যারা অভিযুক্ত হয়েছেন তাদের সঙ্গে নিয়ে এক হয়েছেন ড. কামাল। তিনি তো সংবিধান প্রণেতা, সংবিধান তৈরি করেছেন। তিনিই তো ৭২ এর সংবিধান মানেন না।

নবগঠিত জোটের সাত দফা দাবি নিয়ে প্রশ্ন করলে শেখ হাসিনা বলেন, সাত দফা আর কত দূর যায় তার জন্য অপেক্ষা করে আছি। তারপর আমি আমার বক্তব্য দেব। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে বলেন, নিরাপদ সড়ক নিয়ে আন্দোলনের তিন মাসে ৯৪৭ জন নিহত হয়েছে তারা কি নিয়ম মেনে ছিল। চালকদের পাশাপাশি পথচারীদেরও ট্রাফিক আইন মানতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনের প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী তার লিখিত বক্তব্যে সৌদি আরব সফরের বর্ণনা দেন। তিনি সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে তার একাধিক বৈঠকে আলোচিত বিষয় নিয়ে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সাক্ষাতের সময় বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ সৌদি আরবকে আমার দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে উল্লেখ করেন। এ সময় সৌদি বাদশা বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেন। আর উন্নয়নের ধারাবাহিকতার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। এ সময় সৌদি আরবের বাদশা সালমান বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সৌদি সফরের সময় ১৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের সদ্য নির্মিত নিজস্ব ভবনের উদ্বোধন করেন। ১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী মহানবীর (সা.) পবিত্র রওজা মোবারক জিয়ারত করেন। ওই দিন তিনি মদিনা থেকে মক্কা যান এবং রাতে পবিত্র ওমরা পালন করেন। একই দিনে প্রধানমন্ত্রী জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের জন্য সদ্য কেনা জমিতে নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৬ সালের পর রিয়াদে এটি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌদি বাদশার দ্বিতীয় বৈঠক। এছাড়া ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর এটি প্রধানমন্ত্রীর চতুর্থ সৌদি সফর। এ বছরের এপ্রিলে সৌদি নেতৃত্বাধীন ২৩ দেশের যৌথ সামরিক মহড়া ‘গালফ শিল্ড-১’ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি সর্বশেষ সৌদি আরব গিয়েছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close