প্রিন্স রাসেল

  ২২ অক্টোবর, ২০১৮

ইমরুল কায়েসের শতকে দারুণ জয় বাংলাদেশের

ইমরুল কায়েস স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলতে পারলেন। কালকের আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে বাঁ-হাতি ওপেনার যে দুইবার তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন প্রতিবারই হেরেছে বাংলাদেশ। ২০১০ সালে ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের পর বছর দুয়েক আগে ঢাকায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ইমরুলের দুইটি শতকই মাটি হয়ে গেছে দল হেরে যাওয়ায়। ১০ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে কাল তৃতীয়বার শতকের দেখা পেলেন ৩১ বয়সী ইমরুল। এবার অবশ্য সতীর্থরা তার সেঞ্চুরিটাকে ম্লান হতে দেননি। সফরকারী জিম্বাবুয়েকে আগাগোড়া চাপে রেখে মাশরাফিরা তুলে নিয়েছেন ২৮ রানের সহজ জয়। দারুণ এই জয়ের মধ্যমণি ইমরুল।

তার ক্যারিয়ার সেরা ১৪৪ রানের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৭১ রানের শক্তিশালী সংগ্রহ। জিম্বাবুয়ের কাছে লক্ষ্যটা প্রায় হিমালয়তুল্য হয়ে উঠেছিল ইনিংসের মাঝপথেই। মুস্তাফিজ-নাজমুল-মিরাজদের দুর্দান্ত বোলিং তোপে অলআউটের আশা জাগিয়েও পারেনি বাংলাদেশ। শেষ অবধি নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেটে করেছে ২৪৩ রান।

অল আউটের শঙ্কায় পড়েছিল বাংলাদেশ দলও। ৬৬ রানে ৩ এবং ১৩৯ রানে ৬ উইকেট খুইয়ে বসেছিল টাইগাররা। সেখান থেকে স্বাগতিক শিবির ঘুরে দাঁড়িয়েছে ইমরুল ও সাইফুদ্দিনের সপ্তম উইকেটে রেকর্ড ১২৭ রানের জুটির ওপর দাঁড়িয়ে। এই জুটি গড়ার পথে সাইফুদ্দিন পেয়েছেন ৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি। ৩টি চার ও ১ ছক্কায় সাজানো ছিল তার ৬৯ রানের ইনিংসটা।

টেন্ডাই চাতারাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সাইফুদ্দিন ক্যাচ তুলে দিয়েছেন সীমানা দড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্রেন্ডন মাভুতার হাতে। ততক্ষণে বাংলাদেশ পেয়ে গেছে প্রত্যাশিত রানের পুঁজি। বড় সংগ্রহের আসল নায়ক ইমরুল অবশ্য সাজঘরে ফিরে গেছেন আরো আগেই। আউট হওয়ার আগে ইমরুল উপহার দিয়ে গেছেন দুর্দান্ত একটা শতক। পরে ছাড়িয়ে গেছেন দেশের মাটিতে ওয়ানডেতে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম ইকবালকে (১৩২)।

ইমরুল ফিরতে পারতেন মাত্র ৭ রানেই। কিন্তু ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গেছেন তিনি। সেটার চরম মূল্য দিতে হয়েছে জিম্বাবুয়েকে। শুরুতেই বেঁচে যাওয়া ইমরুল ইনিংসের প্রায় পুরোটা সময় ভোগালেন সফরকারী বোলারদের। ১১৮ বলে ছুঁয়েছেন তিন অঙ্ক। পরের ৪৪ রান ইমরুল করেছেন ২২ রানে। টাইগার ওপেনারের ১৪৪ রানের ইনিংসটার শোভা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে ১৩টি চার ও ৬টি ছক্কার মার।

ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার পথে তিনজনের ভালোই সঙ্গ পেয়েছেন ইমরুল। প্রথম দুইটি জুটির স্থায়িত্ব অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটির পর মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে করেছেন ৭১ রানের যুগলবন্দি। মুশফিক ফিরেছেন ২০ বলে ১৫ রানে। মিঠুনের ব্যাট থেকে এসেছে ৪০ বলে ৩৭ রান।

টপ এবং মিডল অর্ডারের বাকি চার ব্যাটসম্যানÑ লিটন দাশ, ফজলে মাহমুদ রাব্বি, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং মেহেদি হাসান মিরাজ মিলে করেছেন ৫ রান! আরো বিস্ময়কর হচ্ছে দুই ওপেনার এবং সাইফুদ্দিন ছাড়া বাংলাদেশের বাকি পাঁচ ব্যাটসম্যানই আউট হয়েছেন উইকেটের পেছনে থাকা ব্রেন্ডন টেলরের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে! বাংলাদেশের পতন হওয়া ৮ উইকেটের চারটিই নিয়েছেন কাইল জারভিস। তিনটি শিকার টেন্ডাই চাতারার। অন্যটার মালিক মাভুতার।

দীর্ঘ ৯ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরেছে মিরপুরে। কানায় কানায় গ্যালারি ভর্তি করে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়েকে স্বাগত জানিয়েছেন দর্শকরা। ভরা গ্যালারির সামনেই ওয়ানডে অভিষেকের ক্যাপ পড়লেন ফজলে মাহমুদ রাব্বি। কিন্তু ম্যাচটা ভুলে যেতে চাইবেন তিনি। ১৩তম বাংলাদেশি হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচেই শূন্য রানে ফিরে গেছেন তিনি। তিনে নেমে মাত্র চার বল খেলেই আন্তর্জাতিক এবং ঘরোয়া ক্রিকেটের পার্থক্যটা বুঝে গেছেন রাব্বি। বাংলাদেশের দারুণ জয়ে অবশ্য তার ব্যর্থতা কিছুটা হলেও আড়াল হয়ে গেছে।

বড় সংগ্রহ পাওয়া বাংলাদেশ বড় ব্যবধানে জিতবে এমনটাই ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুরু ও শেষটা ভাবনাটা উবে গেছে। উদ্বোধনী জুটিতে উড়ন্ত সূচনা করে জিম্বাবুয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিয়েছিল। প্রথম ৭ ওভারে ৪৮ রান তুলে ফেলেছিলেন সফরকারী দুই ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও চেফাস জুয়াও। ব্রেক থ্রু এনে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। জিম্বাবুয়ের ইনিংসে কাটার মাস্টারের শিকার এই একটিই। তার দেখানো পথ ধরেই পরে হাঁটলেন মিরাজ, নাজমুলরা; চেপে ধরেন জিম্বাবুয়ের টুঁটি।

চাপে মুখে উইকেটে থিতু হয়ে ব্যাট করে গেছেন সফরকারীদের সাতজন ব্যাটসম্যান। প্রথম উইকেটের পতন ঘটতেই ধসে পরে জিম্বাবুয়ের ইনিংস। মাসাকাদজা (২১), জুয়াও (৩৫), গেইগ আরভিন (২৪), পিটার মুর (২৬), মাভুতা (২০) প্রত্যেকেই আউট হয়েছেন উইকেটে জমে যাওয়ার পর। ১৬৯ রানে ৮ উইকেট ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপরই শুরু হলো ঘুমপাড়ানি ক্রিকেট। নবম উইকেট জুটিতে টাইগারদের বেশ ভোগালেন শন উইলিয়ামস ও জারভিস। দুইজন মিলে ৬৭ রানের যে জুটিটা গড়েছিলেন তা বাংলাদেশের জয়টাই শুধু বিলম্বিত করেছে। উইলিয়ামস শেষ অবধি অজেয় থাকলেন ৫০ রানে। ৩৭ রানে ফিরে গেছেন জারভিস। বাংলাদেশের পক্ষে ৩ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। দুইটি শিকার ‘নাগিন ড্যান্সে’র জন্য বিখ্যাত নাজমুল ইসলাম অপু। মাহমুদউল্লাহ ঝুলিতে গেছে ১ উইকেট।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এ নিয়ে টানা ১১ ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। দারুণ জয়ে সিরিজ শুরু করা টাইগাররা পরশু চট্টগ্রামে ব্যবধানটা বাড়ানোর লক্ষ্যে দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে মাঠে নামবে।

বাংলাদেশ : ২৭১/৮

জিম্বাবুয়ে : ২৪৩/৯

বাংলাদেশ ২৮ রানে জয়ী

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close