নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ অক্টোবর, ২০১৮

৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে জাতীয় পার্টি

১৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা

‘সুশাসনের লক্ষ্যে ও জাতির মুক্তির পথে’ ১৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মিলিত জাতীয় জোটের মহাসমাবেশ থেকে এ ১৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন। তার এই ১৮ দফার মধ্যে প্রাদেশিক সরকার গঠন করে প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ, নির্বাচন পদ্ধতি ও নির্বাচন কমিশনের সংস্কার ও পুনর্গঠন এবং সন্ত্রাস দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের ‘শক্তিমত্তার’ জানান দিতে সোহরাওয়ার্দীতে এরশাদ নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের এই মহাসমাবেশের আয়োজন। ইশতেহার পড়ে শুনিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা হলো মুক্তি পথ, দেশের মুক্তির পথ, জাতির মুক্তির পথ। দেশবাসীর কাছে কিছু বার্তা পৌঁছে দিতে চাই।’ মহাসমাবেশ মঞ্চে এরশাদের পাশে ছিলেন পার্টির সিনিয়র কো চেয়ারম্যান সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এছাড়া জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ প্রেসিডিয়াম সদস্যরা এবং জোটের শরিক বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয় ইসলামী মহাজোটের নেতারাও সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এরশাদ বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এসে প্রাদেশিক সরকার করতে চাই। আমরা প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ করতে চাই। আমরা পূর্ণাঙ্গ উপজেলা পরিষদ গঠন করতে চাই।’ নব্বইয়ের পর অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচন ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ হয়েছে মন্তব্য করে সাবেক সামরিক শাসক এরশাদ আবার ক্ষমতায় গেলে নির্বাচন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দেন।

এ বিষয়ে সমাবেশে বিস্তারিত না বললেও এর আগে বিভিন্ন সময়ে এরশাদ মোট ভোটের অনুপাতে সংসদে দলের আসন বণ্টনের পক্ষে নিজের অবস্থানের কথা বলেছেন। সমাবেশে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি ও সম্মিলিত জাতীয় জোট ক্ষমতায় গেলে ‘ধর্মীয় মূল্যবোধকে’ প্রাধান্য দেওয়া হবে। তবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণে তাদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা হবে। ক্ষমতায় গেলে বিচার বিভাগের ‘স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করার পাশাপাশি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ। তিনি বলেন, ‘আমরা শিল্পায়ন করব। তবে জ্বালানি ও বিদ্যুতের জন্য ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। এমনিতেই ফসলি জমি কম। নষ্ট করলে আমরা অনাহারে থাকব। আমরা খাদ্যে নিরাপত্তা আনব।’

জোটের এই সমাবেশে চলমান শিক্ষা ব্যবস্থারও সমালোচনা করেন এরশাদ। তিনি বলেন, বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতি জাতিকে ‘অন্ধকারের দিকে’ নিয়ে যাচ্ছে। তিনি এর সংস্কার চান, পরিবর্তন চান।

দেশে স্বাস্থ্য সেবা খাত এবং পরিবেশ নিয়ে নতুন নীতি প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি এরশাদ বলেন, ‘আমরা সড়কে নিরাপত্তা চাই। বাচ্চারা যখন বলে, সরকারের মেরামত প্রয়োজন, আমরাও সে কথা বলি।’

আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে নবম জাতীয় সংসদে নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। পরে ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি সংসদে প্রধান বিরোধীদলের তকমা পায়। দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান সংসদে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা হন। এরশাদ হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। মহাসমাবেশে এরশাদ বলেন, এবার তারা ‘জোটবদ্ধভাবে’ ৩০০ আসনে নির্বাচন করবেন। তবে একাদশ নির্বাচন কেমন হবে তা নিয়ে তার সংশয় আছে। একটি দল ৭ দফা দিয়েছে, সরকার তা মানতে রাজি নয়। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী মানা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় আগামী দিনগুলো স্বচ্ছ দিন হবে বলে মনে হয় না আমার। সরকার নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের যে প্রক্রিয়ার কথা বলছে, তাতে সব দলের সমন্বয় থাকতে হবে বলে মত দেন এরশাদ।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, জোটগতভাবে ৩০০ আসনে আমরা নির্বাচন করব। আমরা জাতীয় পার্টি সব সময় নির্বাচন করেছি। আজও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তবে দেশের স্বার্থে নতুন মেরূকরণ হতে পারে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে জাতীয় পার্টি অবশ্যই ক্ষমতায় আসবে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা চাই।’

নির্বাচন ঘিরে জাতীয় পার্টির গণসংযোগ এবং প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলার কথা জানিয়ে এরশাদ বলেন, ‘জোটের শরিকরা তাদের প্রার্থীর তালিকা দিয়েছেন। তবে আমি বলব, এখানে দলের চেয়ে প্রার্থীর যোগ্যতাই বেশি প্রাধান্য পাবে।’ নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত এরশাদ এই সমাবেশে নিজেকে বর্ণনা করেন দেশের ‘সবচেয়ে বর্ষীয়ান ও নিপীড়িত’ রাজনীতিবিদ হিসেবে।

তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পর এত নির্যাতন, নিপীড়ন, অত্যাচার সহ্য করেছি, পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো রাজনীতিবিদ সহ্য করেনি। ৯০ সালে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পর আমি আনন্দে ঘুমাতে পারি নাই। শঙ্কা ছিল, কখন জেলে যাব। এই শেষ জীবনে আমার জীবনটাকে দেশ ও জাতির জন্য উৎসর্গ করলাম। দেশবাসীর কাছে একটাই আবেদন, আমাকে দোয়া করবেন, যেন জাতীয় পার্টিকে আমরা ক্ষমতায় আনতে পারি।’

জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও সংসদে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ দলের নেতাকর্মীদের তৃণমূলে গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে জাতীয় পার্টির বার্তা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান।

রংপুরের ভাষায় ‘আসল মানুষ না চিনিয়া করছি আমি মস্ত ভুল’ এবং জাতীয় পার্টির থিম সং ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ব মোরা’ গান দুটির থেকে অংশবিশেষ তিনি মঞ্চে গেয়ে শোনান।

এরশাদ সরকারের নয় বছরে দেশে কোনো ‘গুম, খুন, হত্যা ছিল না’ দাবি করে দলের মহাসচিব ও সম্মিলিত জাতীয় জোটের মুখপাত্র হাওলাদার বলেন, ‘যদি আবার সেই সময়ে ফিরে আসতে চান, উন্নয়ন দেখতে চান, তবে সব দল মত নির্বিশেষে সম্মিলিত জাতীয় জোটের পতাকাতলে আসুন। আমরা আপনাদের আধুনিক বাংলাদেশ উপহার দেব।’

জাতীয় পার্টির নেতারা বলেছেন, ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করাই ছিল তাদের এ মহাসমাবেশের উদ্দেশ্য।

এই মহাসমাবেশ ঘিরে গত কয়েক দিন ধরেই দলীয় নেতাদের ছবিসহ ‘চলো চলো, ঢাকা চলো’ স্লোগানে পোস্টার ও ব্যানার দেখা যাচ্ছিল ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায়।

গত ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় পার্টির এক যৌথসভায় এরশাদ ৬ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দীতে এই মহাসামবেশ করার ঘোষণা দিলেও তার সিঙ্গাপুর সফর এবং বিভিন্ন জেলা ও মহানগরের সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে মহাসমাবেশের তারিখ পিছিয়ে ২০ অক্টোবর নতুন তারিখ রাখা হয়। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহাসামবেশের পর জাতীয় পার্টির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করবেন পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close