বিশেষ প্রতিনিধি, রাজশাহী

  ২১ অক্টোবর, ২০১৮

বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকে কাজ প্রদান : সরকারি অর্থের ক্ষতি

রাজশাহী গণপূর্ত অধিদফতরের একটি টেন্ডারে ফের বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দরপত্রের ঘোষিত ব্যয়ের চেয়েও ১০ ভাগ নিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে উচ্চ দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এতে ১৫ কোটি টাকার ওই কাজে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হবে দেড় কোটি টাকারও ওপরে। এই কার্যাদেশ দিতে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ আছে ঠিকাদারদের মাঝে। তবে রাজশাহী গণপূর্ত অধিদফতর ডিভিশন-২ এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এ টেন্ডারে কোনো অনিয়ম হয়নি। নিয়ম মেনে কাজ দেওয়া হয়েছে।

ঠিকাদারদের অভিযোগ, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে রাজশাহী গণপূর্ত অধিদফতরে এক চেটিয়াভাবে বাণিজ্য করে একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানকেই একের পর এক কাজ দেওয়া হচ্ছে। এতে করে বার বার দরপত্র জমা দিয়ে বড় ধরনের ক্ষতিরমুখে পড়ছেন ঠিকাদাররা। আবার সরকারকেও গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। সেই অর্থ হচ্ছে ভাগ-বাটোয়ারা। পাশাপাশি কাজের মানও হচ্ছে নিম্নমুখী।

রাজশাহী গণপূর্ত অধিদফতর সূত্র মতে, এই দফতরের আওতায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য গত ৪ জুলাই টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তাতে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই কাজের টেন্ডারে অংশ নিতে শিডিউল কেনেন অন্তত ১০ জন ঠিকাদার। টেন্ডারটি আহ্বান করার পরে সংশোধনী দিয়ে টেন্ডারে অংশ নেওয়া ঠিকাদারদের তিন লাখ টাকা মূল্যের একটি জেনারেটর ও প্রায় ৬০ হাজার টাকা মূল্যের একটি ট্রান্সফরমার সরবরাহ কাজে অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। ফলে শিডিউল সংগ্রহ করেও পরে মাত্র দুইজন ঠিকাদার ছাড়া কেউ টেন্ডরে অংশ নিতে পারেনি।

ঠিকাদারদের অভিযোগ, পাবনার সাজিন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দিতেই ওই অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। ফলে শেষ পর্যন্ত দুটি দরপত্র জমা পড়ে। এর মধ্যে ব্রাদার্স কন্সট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ১০ ভাগ কম দর দেয়। আর সাজিন এন্টার প্রাইজ দর দেয় সরকারি নির্ধারিত মূল্যের সমান। নিময় মতে, টেন্ডারে অংশ নেওয়া ঠিকাদারদের মধ্যে যিনি কম দর দিবেন তাকেই সাধারণত কাজটি দেওয়া হয়। যাতে সরকারি অর্থ সাশ্রয় হয়। কিন্তু সাজিন নামের ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে নানা টালবাহানা শুরু করেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। ফলে সরকারি দরের চেয়ে কম দর দিয়েও কাজ পাননি ব্রাদার্স কন্সট্রাকশন। এতে করে সরকারকে অন্তত দেড় কোটি টাকা বেশি খরচ করতে হবে ওই কাজে।

সবমিলিয়ে মাত্র ছয় মাসের মধ্যে সাজিন এন্টারপ্রাইজকে প্রায় ৬৫ কোটি টাকার কাজ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই কাজগুলোর একটিও ওই প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত শুরু করতে পারেনি। ফলে প্রতিষ্ঠানটি কাজ পাওয়া কয়েকটি কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শুরু করতে না পারায় এরই মধ্যে কার্যাদেশ বাতিলের পর্যায়েও গেছে। কিন্তু সেই বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকেই একের পর এক কাজ দিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয়ের চেষ্টা চলছে।

ঠিকাদারদের অভিযোগ, সাজিন এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে অলিখিতভাবে চুক্তি রয়েছে গণপূর্ত দফতরের একজন ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলীর। ফলে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তাকেই বিপুল অঙ্কের বাণ্যিজের মাধ্যমে কাজ দেওয়া হচ্ছে।

সূত্র মতে, পাবনার এই সাজিন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডকে একের পর এক কাজ দিতে মনগড়া অভিজ্ঞতা চাওয়া হয় বড় বড় কাজে। ফলে অন্য ঠিকাদাররা সেই কাজে অংশ নিতে না পারায় সরকারের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি করে সাজিন এন্টারপ্রাইজকেই কখনো অতিরিক্ত দরে আবার কখনো সমদরে কাজ দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে একজন ঠিকাদার ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অভিযোগও করেছেন। আরেকজন ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন গণপূর্ত অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে। এসব অনিয়ম নিয়ে দুদকেও একাধিকবার অভিযোগ করেছেন ঠিকাদাররা।

আরেকটি সূত্র জানায়, পিপিআর অনুযায়ী টেন্ডার ক্যাপাসিটি লঙ্ঘন করেই অতিরিক্ত কাজ দেওয়া হচ্ছে একই প্রতিষ্ঠানকে। যে কারণেই সম্প্রতি সাজিন এন্টারপ্রাইজকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ থেকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। ফলে এই প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত রাজশাহী গণপূর্ত দপতরে একটি কাজও শুরু করতে পারেনি। এর মধ্যে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার ভবন নির্মাণ, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ভবন সম্প্রসারণ, মোহানপুরে টিটিসি ভবন নির্মাণকাজও রয়েছে। এই কাজগুলোর একটিও শুরু করতে পারেনি ওই প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি কাজগুলো এরই মধ্যে বিক্রি করে বা সরকারি আগাম অর্থ উত্তোলন করে শুরু করার চেষ্টা করছেন সাজিন এন্টারপ্রাইজ।

এ বিষয়ে রাজশাহী গণপূর্ত অধিদফতর ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফেরদৌস শাহ নেওয়াজ কান্তা বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শক্রমে ওই টেন্ডারটির সংশোধনী দেওয়া হয়। যেহেতু বড় কাজ তাই, সবকিছু বিবেচনা করেই সংশোধনী দেওয়া হয়।’ একজন ঠিকাদারকে কাজ দিতে মনগড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘সেটি ঠিক নয়। নিয়মের মধ্যে থেকে যা হবে, সেটিই করা হয়েছে। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে যিনি কাজ পাওয়ার যোগ্য তাকেই দেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।’ অপরদিকে, এই কাজের তদারককারী রাজশাহী গণপূর্ত অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান বলেন, ‘শুনেছি কাজটি সাজিন এন্টারপ্রাইজ পেয়েছে। তবে কীভাবে পেয়েছে বলতে পারব না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close