চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২১ অক্টোবর, ২০১৮

মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় আইয়ুব বাচ্চু

ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু শায়িত হলেন মায়ের পাশে। চট্টগ্রামের বাইশ মহল্লা কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশেই তার মরদেহ সমাহিত করা হয়। এর আগে শিল্পীর শেষ জানাজা হয় শনিবার বাদ আসর চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে। জানাজায় লাখো মানুষ অংশ নেয়। ওই মাঠসহ আশপাশের সড়ক কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়।

জাতি-ধর্ম-দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন পেশার মানুষ আইয়ুব বাচ্চুকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে হাজির হন। বিকেল ২টা ৪০ মিনিটে মরদেহবাহী গাড়িটি জমিয়াতুল ফালাহতে পৌঁছায়। এর আগে বেলা ১২টার দিকে গাড়িটি পূর্ব মাদারবাড়িতে বাচ্চুর নানার বাড়িতে নেওয়া হয়। সেখানেও ভিড় করেন বন্ধু, স্বজন ও ভক্তরা।

শেষ জানাজায় ইমামতি করেন জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের খতিব অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ আবু তালেব মো. আলাউদ্দিন। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান, পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ও যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু প্রমুখ। জানাজায় আইয়ুব বাচ্চুর বাবা মোহাম্মদ ইছহাকও অংশ নেন।

জানাজার আগে জমিয়াতুল ফালাহ মাঠে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আইয়ুব বাচ্চুর অনুজপ্রতিম সোলস ব্যান্ডের জনপ্রিয় গায়ক পার্থ বড়–য়া। তিনি বলেন, ‘আমাকে হাতে ধরে গিটার শিখিয়েছেন বাচ্চু ভাই। জীবনে যা কিছু শিখেছি বা যা কিছুই হতে পেরেছি তার সবই বাচ্চু ভাইয়ের কাছ থেকেই। খুব তাড়াতাড়িই চলে গেলেন বাচ্চু ভাই।’

জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে গিয়ে আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান। মৌলবাদীদের সকল বাধা উপেক্ষা করে ২০০১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কনসার্ট করার কথা স্মরণ করেন তিনি। যখন তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিসি ছিলেন বলে জানান।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, সারা বিশ্বে বাংলা গানকে ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। যার কারণে সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন চট্টলার এই গর্বিত সন্তান।

এর আগে শনিবার সকালে আকাশপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছে আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ। মরদেহের সঙ্গে ঢাকা থেকে আসেন তার স্ত্রী, ছেলেমেয়েসহ ২৫ স্বজন। বিমানবন্দরে আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ গ্রহণ করেন চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

এরপর বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রাম শহরের পূর্ব মাদারবাড়িতে আইয়ুব বাচ্চুর নানার বাড়িতে মরদেহ আনা হয়। সেখানে আইয়ুব বাচ্চুকে এক নজর দেখতে ভক্তদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশ সদস্যদের।

এ সময় উপস্থিত আইয়ুব বাচ্চুর ছেলে আহনাফ তাজোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, সবার কাছে আমার একটাই চাওয়া, আপনারা আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন। তার যেন বেহেশত নসিব হয়। আর তাকে নিয়ে কারো মনে কোনো ক্ষোভ থাকলে মাফ করে দেবেন।

শনিবার মাদারবাড়িতে বাচ্চুকে একনজর দেখতে আসেন সোলসের প্রাক্তন সদস্য ও বাচ্চুর বন্ধু সুব্রত বড়–য়া রনি; তিনি বলেন, তিন দশকে দেশের সংগীতাঙ্গনকে দুহাত ভরে দিয়ে গেছেন আইয়ুব বাচ্চু। সমৃদ্ধ করেছেন ব্যান্ডজগৎকে। তবে তার ভাগ্যে জোটেনি কোনো জাতীয় পুরস্কার। এই কিংবদন্তিকে মরণোত্তর পুরস্কারে ভূষিত করা হোক। যাতে কিছুটা হলেও দায় শোধ হয়।

বাচ্চুর নানার বাড়িতে গিয়ে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, আইয়ুব বাচ্চু চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান। তার নামে চট্টগ্রামে যা যা করা দরকার সব উদ্যোগ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নেবে। আইয়ুব বাচ্চুর নামে চট্টগ্রামের মুসলিম হলের সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের নামকরণ করা হবে। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নাগরিক শোক সভারও আয়োজন করা হবে বলেও জানান মেয়র আ জ ম নাছির।

গত বৃহস্পতিবার সকালে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে আইয়ুব বাচ্চু মারা যান। তার আকস্মিক মৃত্যুতে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close