নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ অক্টোবর, ২০১৮

আইয়ুব বাচ্চুর জানাজায় ঢল

শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা

বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীত জগতের কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম জানাজা গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় হাজারো মুসল্লি ও ভক্তরা অশ্রুসজল নয়নে অংশ নেন।

তার আগে আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি সর্বসাধারণের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তার লাশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়। শ্রদ্ধা জানানো শেষে আইয়ুব বাচ্চুর লাশ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে নেওয়া হয়। প্রথম জানাজার পর আইয়ুব বাচ্চুর লাশ মগবাজারে তার নিজের স্টুডিও এবি কিচেনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিকেল ৩টায় মগবাজারের কাজী অফিস গলির মসজিদের সামনে দ্বিতীয় জানাজা হয়। এরপর আইয়ুব বাচ্চুর তৃতীয় জানাজা হয় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে। তৃতীয় জানাজা শেষে এই শিল্পীর লাশ ফের হিমঘরে রাখা হয়।

অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকে আইয়ুব বাচ্চুর মেয়ে ফাইরুজ সাফরা আইয়ুব ও ছেলে আহনাফ তাজোয়ার আইয়ুব দেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তারা এলে চট্টগ্রামে আজ মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন আইয়ুব বাচ্চু। তার ভগ্নিপতি ওমর উদ্দিন আনসারী জানান, শনিবার (আজ) সকালে লাশ চট্টগ্রামে আনা হবে। এরপর বাচ্চুর নানাবাড়ি মাদারবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। পরে বাদ আসর চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে আরেক দফা জানাজা শেষে মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে।

গতকাল শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠানে আইয়ুব বাচ্চুর ভক্ত, অনুরাগীসহ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা শামিল ছিলেন। শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘ব্যান্ড সঙ্গীতকে তিনি এক অনন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আমার বিশ্বাস, নতুন প্রজন্ম তার দেখানো পথে চলে নবচেতনায় উজ্জীবিত হবে।’ সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি প্রতিটি কনসার্ট তিনি জাতীয় সংগীত দিয়ে শুরু করতেন।’ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

স্মৃতিচারণ করে শিরোনামহীন ব্যান্ডের সাবেক ভোকাল তানযীর তুহিন বলেন, ‘বাচ্চু ভাই আমাদের চেয়ে বড় হলেও সব সময় তরুণই ছিলেন। অকৃত্রিম ভালোবাসা দিয়ে তিনি ব্যান্ড মিউজিক করতেন। আমরা যেন সেটা ধরেই বেঁচে থাকি।’

ব্যান্ডদল ফিডব্যাকের ফুয়াদ নাসের বাবু বলেন, ‘উনার গিটার বাজানো দেখে দেশের হাজার হাজার তরুণ গিটার বাজাতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে, গিটার বাজানো শিখেছে।’

আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাজ করা জনপ্রিয় শিল্পী সুমনা হক বলেন, ‘সঙ্গীত সাধনা ও জনপ্রিয়তার চূড়ায় থাকাবস্থায় তিনি চলে গেছেন। এই যে হাজার হাজার মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা জানাতে তাদের উপস্থিতি এটাই তার বড় প্রাপ্তি।’

শিল্পী রবি চৌধুরী, কুমার বিশ্বজিৎ, সাফিন আহমেদ, নকিব খান, নাসিম আলী খান, তপন চৌধুরীদের মতো সতীর্থদের সামনে রাখা কফিনে সার বেঁধে শ্রদ্ধা জানানোর পর্ব চলে।

বাচ্চুর চট্টগ্রামের দিনগুলোর কথা স্মরণ করেন সেখানে তার সঙ্গে কাজ করা ব্যান্ডশিল্পী নাসিম আলী খান বলেন, ‘বাচ্চু আমাদের ছোটবেলার বন্ধু। আমরা চট্টগ্রামে হাঁটি হাঁটি পা পা করে সঙ্গীতের চর্চা শুরু করি। আমার প্রথম অ্যালবামের সঙ্গীত পরিচালকও ছিলেন তিনি। তার সঙ্গীতচর্চা তরুণ প্রজন্মের মাধ্যমে আজীন জাগরূক থাকুক।’

শিল্পী তপন চৌধুরী বলেন, ‘এখানে এসে আবার বুঝেছি, বাচ্চুর জন্য এত মানুষ পাগল! এটা একটা মানুষের অনেক বড় পাওনা।’ শিল্পী রবি চৌধুরী বলেন, ‘কিছু বলতে আসিনি। শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। বাচ্চু তার কর্ম দিয়ে আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ফুল নিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে উপ-উপাচার্য কবি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘সঙ্গীতের যে নতুন ধারা ব্যান্ড সঙ্গীত। সেখানে আইয়ুব বাচ্চু উজ্জ্বল নক্ষত্র। কনসার্ট শেষ করার আগে তিনি জাতীয় সঙ্গীত গাইতেন। এ থেকেই বোঝা যায় দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অগাধ।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close