শাহ্জাহান সাজু

  ১৯ অক্টোবর, ২০১৮

রাজস্ব আয়ের বড় উল্লম্ফন

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বা রাজস্ব আয় বাড়ানোর মাধ্যমে বিদেশি ঋণনির্ভরতা কমিয়ে আনার সরকারের যে পরিকল্পনা ছিল, গত কয়েক বছরে তা অনেকাংশে সফল হয়েছে। ফলে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প এখন নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রতি বছর বাড়ছে বাজেটের আকার। এর মূলে রয়েছে রাজস্ব আয়ের বড় উল্লম্ফন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) গত ছয় বছরের রাজস্ব আদায়ের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রাজস্ব আহরণ গড়ে ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ হারে বেড়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ১৫১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা।

এ বিষয়ে রাজস্ব প্রশাসন বলছে, আয়কর মেলাসহ এনবিআরের নানামুখী উদ্ভাবনীমূলক কর্মকান্ড রাজস্ব আহরণের সাফল্যের পেছনে চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করেছে। উল্লিখিত সময়ে রাজস্ব আয় বাড়ার পাশাপাশি করদাতার সংখ্যাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বর্তমানে ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (ই-টিআইএন) সংখ্যা ৩৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বিগত কয়েক বছরে করমেলার আয়োজন ,অটোমেশন কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া, ট্যাক্স ও ভ্যাট কার্ড প্রদান ইত্যাদি এনবিআরের নানামুখী উদ্ভাবনীমূলক কর্মকান্ডের কারণে দেশে রাজস্ববান্ধব সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এসব কারণে করদাতার সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজস্ব আয়ে ধারাবাহিক সাফল্য এসেছে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া আগে জনগণের মধ্যে যে করভীতি ছিল, বর্তমান সরকার জনসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে সেই ভীতি কাটাতে পেরেছে বলেও মনে করেন তিনি। এনবিআরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে রাজস্ব আহরিত হয়েছিল ১ লাখ ৯ হাজার ১৫১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ২০ হাজার ৮১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এক অর্থবছরের ব্যবধানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয় ১০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩৫ হাজার ৭০০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ বছর প্রবৃদ্ধি হয় ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫১৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে বড় সাফল্য আসে। ওই সময় রাজস্ব আহরিত হয় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি-১৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এনবিআর রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি করেছে। এ সময়ে ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। এ ক্ষেত্রে মোট রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। গত ছয় বছরে আহরিত রাজস্বের মধ্যে আমদানি ও রফতানি পর্যায় (শুল্ক খাত) থেকে রাজস্ব আয়ে অবদান ছিল ২৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ। স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট থেকে আসে ৩৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ এবং আয়কর খাতের অবদান ৩৫ দশমিক ২৭ শতাংশ।

এনবিআরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে যেখানে ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১২ লাখ, সেটা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ লাখের ওপরে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ এবং সরকারি-বেসরকারি খাতে কর্মকর্তা পর্যায়ে চাকরিজীবীদের রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করায় ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা দ্রুতই বেড়েছে। এতে করের আওতা সম্প্রসারিত হয়েছে।

এদিকে চলতি অর্থবছরের এনবিআরের নির্ধারিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। করদাতাদের সহায়তায় এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্টরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close