বদরুল আলম মজুমদার

  ১৯ অক্টোবর, ২০১৮

আসন বণ্টনে চাপ বাড়লেও এখনি ভাবছে না বিএনপি

তফসিল ঘোষণার আগেই আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতা চায় জোটভুক্ত দলগুলো। কে কত আসনের ভাগিদার তা নিয়ে জোটের দলগুলো দরকষাকষি করতে চাইলেও সেদিকে বিএনপির নজর নেই। তাদের নজর, আরো সম্ভাব্য দলকে জোটে অর্ন্তভুক্ত করা এবং কার্যকর আন্দোলন শুরু করা, পাশাপাশি নিজস্ব জরিপ চালিয়ে আসন দাবিকৃত জোট নেতাদের মাঠের অবস্থান খতিয়ে দেখা। আসলে কে কতটা আসনে জিতে আসার মতো অবস্থায় আছে, তা জানতে চাইছেন বিএনপির নেতারা। কারণ জোট গঠনের শুরুতেই বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতারা একমত হয়েছেন যে, নির্বাচনে জিতে আসার মতো প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, জোটভুক্ত দলগুলো তাদের দাবি দাওয়ার বিষয়ে কাজ শুর করেছে। কে কোন আসনে নির্বাচন করতে চান এ নিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে প্রার্থীর তালিকাও। দলগুলোর নেতারা আসন সমঝোতার জন্য রীতিমতো চাপও তৈরি করছে বিএনপির ওপর। তবে, বিএনপি তফসিল ঘোষণার আগে আসন সমঝোতা নিয়ে বসতে চায় না। দলটি মনে করছে, আরো কিছু দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার আলোচনায় আছে। কিছু দল যুগপৎ কর্মসূচি নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে রাজপথে থাকতে চায়। সে দলগুলোকেও আসন সমঝোতার আহবান জানাতে পারে বিএনপি। তবে বিএনপি কোনোভাবেই ১৩০টির বেশি আসনে ছাড় দিতে রাজি নয়।

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গে থাকা ২০ দলীয় জোটের নেতারা দাবি করছেন প্রায় ১৮০ আসন। অন্যদিকে, ঐক্যফ্রন্ট থেকে কম-বেশি ৭০-৮০টি আসন দাবি করা হতে পারে। এসব আবদার রক্ষা করতে হলে বিএনপিকে ছাড় দিতে হয় প্রায় সবগুলো আসনই। এ নিয়ে বিএনপির নেতারা সরাসরি কিছু না বললেও দলের শীর্ষ নেতারা ইতিবচাক মনোভাব ব্যক্ত করছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘সরকারবিরোধী একটি বৃহৎ প্ল্যাটফরম গঠনে কাজ করছে বিএনপি। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে অনেকে অনেক ধরনের দাবি পেশ করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এসব দাবি দাওয়ার বিষয়ে আমরা এখনই কোনো কথা বলতে চাই না। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি আদায়ের পর সকলের চাওয়া পাওয়া নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এ বিষয়ে এর বেশি কিছু বলার নেই আপাতত।’

তবে, বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, যেখানে যে প্রার্থীর জিতে আসার সম্ভবনা বেশি থাকবে দল থেকে তাকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সে প্রার্থী কোন দল বা কোন জোটের সে বিষয়টি বড় করে দেখা হবে না। এদিকে, ঐক্যফ্রন্টের দাবি দাওয়ার বিষয়ে বিএনপি এখনই কোনো কথা বলবে না। যদিও আসন নিয়ে দলটি এখনো কোন দাবি উপস্থাপন করেনি। প্রকাশ্যে কোনো কথা না বলতেও বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাদের সর্তক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানিয়ে প্রতিবেদককে বলেন, ‘ওনারা কিসের ভিত্তিতে এত আসন চান। আমরা তাদের যে কয়জন নেতাকে চিনি এবং যারা পার্লামেন্টে আসার যোগ্যতা রাখেন বা ইতিপূর্বে এমপি হয়েছেন এমন লোকের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকজন। তাহলে বাকি আসনগুলো তারা কাদের জন্য চাচ্ছেন। যেনতেন একজনকে মনোনয়ন দিয়ে আসনগুলো কি জিতে আসা যাবে?’ প্রশ্ন রেখে তিনি আরো বলেন, সরকারের বহুমুখী চক্রান্তের বিরুদ্ধে যেনতেন লোকের পক্ষে নির্বাচনে জিতে আসা সম্ভব নয়। সরকারের কাড়ি কাড়ি টাকার বিপরীতে নীতি কথা দিয়ে নির্বাচনে জিতে আসার দৃষ্টান্ত অতীতেও ছিল না, ভবিষ্যতেও হবে বলে মনে হয় না। তবে যদি ওনারা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন, তাহলে হয়তো ভিন্ন প্রেক্ষপট দাঁড়াতে পারে। এ নিয়ে আমরা নই, রাজনৈতিক সচেতন জনগণই কথা বলবেন।

২০ দলীয় জোট সূত্র জানায়, বিএনপির কাছে ২০০ আসন চেয়েও খুশি নন জোটের শরিক দলগুলো। তাদের দাবি, আসন নিয়ে বিএনপির কাছ থেকে কোনো আশ্বাসই মিলছে না। এ নিয়ে হতাশ জোটের শরিকরা। জোটের শরিক দলের একাধিক নেতা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই তারা বিএনপি জোট আঁকড়ে ধরে রয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের আসন বণ্টন নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে আছে, কোনো কথাই বলছে না বিএনপি। এটা তাদের এখনই স্পষ্ট করা উচিত।

এদিকে, জাতীয় ঐক্য তৈরির ধারায় ২০ দলীয় জোট ছেড়ে গেছে দুটি শরিক দল। বিষয়টি জাতীয় ঐক্য বিনষ্টে সরকারের ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছে বিএনপি। এরমধ্যেও আসন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করতে ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করছেন বিএনপি নেতারা। প্রতিটি দলকে যথাযথ মূল্যায়নের আশ্বাসও দিচ্ছে জোটের শীর্ষ দল বিএনপি। অন্যদিকে, নতুন মিত্র হিসেবে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে’ যোগ দিয়েও আসন বণ্টনের চাপেই রয়েছে বিএনপি। এরই মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তত ৮০টি আসনে বিএনপির কাছে মনোনয়ন চাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এ লক্ষ্যে গণফোরাম ২০, জেএসডি ২০ ও নাগরিক ঐক্য ১০ সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা করেছে। একই সঙ্গে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও ১০টি আসনে চাইতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close