গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৭ অক্টোবর, ২০১৮

নির্বাচন পরিচালনায় দলসমর্থিত কর্মকর্তা নয় : ইসি

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের ব্যাপারে কড়াকড়ি করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যেই মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের (আঞ্চলিক জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা) এ ধরনের বার্তা দেওয়া হয়েছে। ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াকে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিতর্কমুক্ত রাখতে কমিশন থেকে এ ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। মাঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কমিশনের মতবিনিময় সভায় এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের এই বার্তা নিয়ে আজ থেকে মাঠে ফিরে যাচ্ছেন ইসির সারা দেশের আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা।

এদিকে কমিশনের কাছে মাঠ কর্মকর্তারা কিছু দাবিদাওয়া তুলে ধরেন। এসব দাবির মধ্যে প্রতিটি জেলায় ডিসিদের পাশাপাশি তাদের একজনকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে তাদের পদোন্নতি ও পদ উন্নীতকরণ এবং কেন্দ্রের গোপন কক্ষের সনাতন পদ্ধতির সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন মাঠ কর্মকর্তারা। তবে তফসিল কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

দেশের ১০টি আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও তাদের অধীনস্থ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়ে নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আরেক দফা মতবিনিময় করে কমিশন।

সভায় দেশের ১০ জন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাসহ দুজন করে ২০ জন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ সভায় বক্তব্য দেন। সিইসি, কমিশনার ও সচিবরা সভায় দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে সিইসি নুরুল হুদা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সময় সমগ্র জাতি একটা আবহ তৈরি করে। কারণ এই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়। ভোটারদের নিরাপত্তা, প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলা, সুশীল সমাজের পরামর্শ গ্রহণ করা, অন্য অংশীজনদের পরামর্শ গ্রহণ করা এবং আপনাদের বুদ্ধি-বিবেচনা কাজে লাগিয়ে প্রত্যাশিত নির্বাচনটি আপনারা জাতিকে উপহার দেবেন। কারণ নির্বাচন নির্বাচনের মতো করতে হবে।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘এই নির্বাচনের দিকে জাতি ও বিশ্ব তাকিয়ে আছে। আপনারা (আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা) কিন্তু মাঠের প্রাণ। জাতি কিন্তু আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন করা আপনাদের দায়িত্ব। ভোট জনগণের পবিত্র আমানত; সেটা যেকোনো মূল্যে মাঠ কর্মকর্তাদের রক্ষা করতে হবে।’

নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ভোটার তালিকা হতে হবে নির্ভুল ও বিতর্কমুক্ত। যদি মৃত ভোটার থাকে তাকে বাদ দেওয়া এবং জীবত ভোটার কেউ বাদ পড়ে থাকলে সরেজমিন তদন্ত করে তালিকাভুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, ছবিসহ এবং ছবিছাড়া যে ভোটার তালিকা মুদ্রণ করা হয়েছে, দুটি তালিকার সঙ্গে সমন্বয় রয়েছে কিনা, তা খুঁজে বের দেখতে হবে। কারণ ভোট দিতে এসে মানুষ যাতে বিভ্রান্ত্রির মধ্যে পড়ে নির্বাচন কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ না করতে পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

কমিশন সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, নির্বাচনের স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও বাক্সের লকগুলো সঠিক আছে কি না, তা ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বিতর্কিত কোনো ব্যক্তির বাড়ির কাছে কোনো ভোটকেন্দ্র থাকলে নির্বাচনের সময় ওই কেন্দ্রগুলোর প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে।

সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনে ভোট কর্মকর্তাকে (প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার) নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত করার আগে কার কী রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে, তা পরখ করে দেখতে হবে। বলা হয়েছে, কোনো অবস্থায় প্রশাসনের দলবাজ কর্মকর্তাকে নির্বাচনের কাজে যুক্ত করা সমীচীন হবে না। সভায় দুজন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জেলাওয়ারী আসনের বিপরীতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ডিসিদের করা হলে সেখানে অতিরিক্ত কমিশনের একজন নিজস্ব কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান।

রাজধানীর পাশের একটি জেলার একজন নির্বাচন কর্মকর্তা ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষ সনাতন আমলের চট, গামছা-তেনা ও বেড়া দিয়ে কক্ষ ঘেরা থাকে, এটা খুবই দৃষ্টিকটু- এ কথা উল্লেখ করে তার সংস্কার দাবি করেন। উল্লেখ্য, আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারি সময়ের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এখন পর্যন্ত ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে জোর প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে কমিশন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close