বাংলাদেশের মৎস্য খাতে পাঙ্গাস একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। দেশের মোট চাষ করা মাছের শতকরা ১৬ ভাগ আসে এই পাঙ্গাস উৎপাদন থেকে। দেশের বাইরে পাঙ্গাসের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এর হলুদ রং ও দুর্গন্ধের কারণে এ মাছ রফতানি সম্ভব হচ্ছে না। সাধারণত ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে সাদা মাংসের পাঙ্গাস বেশি

প্রচলিত। কিন্তু দেশে পানির গুণাগুণের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে যেমন দুর্গন্ধযুক্ত পাঙ্গাস উৎপাদন হচ্ছে তেমনি মাংসের রং হলুদ হচ্ছে। ফলে বিদেশের বাজার ধরতে পারছে না এই মাছ। যেখানে ভিয়েতনাম সাদা মাংসের পাঙ্গাস রফতানির মাধ্যমে ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে তাদের শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে।

গতকাল রোববার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সম্মেলন কক্ষে ‘পাঙ্গাস মাছের দুর্গন্ধ এবং মাংসের হলুদ রঙের বাহ্যিক কারণসমূহ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

সেমিনারে একোয়াকালচার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাকৃবির প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম, মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক, পিএইচডি গবেষক ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিএইচডি গবেষক শেখ রাজিবুল ইসলাম। তিনি ব্যাংফিশ প্রজেক্টের মাধ্যমে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাকৃবি এবং ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণ সহযোগিতায় পাঙ্গাস মাছের মান উন্নয়নের ওপর তার গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাকৃবি অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক ও কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. নিল ও জি জরজেনসন এর তত্ত্বাবধানে শেখ রাজিবুল ইসলাম গত ৩ বছর ধরে এ গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সেমিনারে শেখ রাজিবুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের পাঙ্গাস মাছের ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে মাছের দুর্গন্ধের পেছনে মূলত পুকুরের পানির গুণগত মান এবং মাছের মাংসের হলুদ রঙের জন্য দায়ী মাছের খাদ্যের উপকরণ। মাছের খাবারের মধ্যে থাকা জিয়াজেনথেন এবং লুটেইন নামক দুটি রাসায়নিক উপাদান মূলত হলুদ রঙের জন্য দায়ী। এ তথ্যের ভিত্তিতে বাকৃবিতে গবেষণা পুকুরে পানির সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন রকমের খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করে একটি গবেষণা করা হয়। গবেষণার ভিত্তিতে খুব শিগগিরই গুণগতমান সমৃদ্ধ পাঙ্গাস মাছ উৎপাদন এবং বহির্বিশ্বে রফতানি সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

"