শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি

  ১৫ অক্টোবর, ২০১৮

খুনি ও দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে ঐক্য ড. কামাল গংয়ের : প্রধানমন্ত্রী

* মাওয়ায় পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মোচন * রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে, অগ্নিসন্ত্রাস করে, যারা এতিমের টাকা মেরে খায় আজ তাদের সঙ্গে ঐক্য করেছেন কামাল হোসেন গং। তিনি নেতা মেনেছেন এমন একজনকে যিনি পলাতক, মানি লন্ডারিংয়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। মুখে নীতি কথা বলেন, অথচ এই নীতিবানরাই খুনি ও দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে ঐক্য করেছেন। গতকাল রোববার বিকেলে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকায় আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে যারা খুন করেছিল সেই খুনি মোশতাকদের পুনর্বাসন করেছিল জিয়াউর রহমান। আর ২১ আগস্ট আমাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে হামলা করেছিল খালেদা জিয়া। আইভি রহমানসহ অনেককে তারা খুন করেছে।

‘এমনই এই ভয়াবহ হামলার আলামত নষ্ট করে জজ মিয়া নাটক সাজায়। এরা খুনি, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালায়। মানুষের ওপর নির্যাতন করে। ২০১৪ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করে ৩ হাজার ৮০০’র মতো মানুষকে হত্যা করেছে। অগ্নিসন্ত্রাসে যারা বেঁচে আছে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে।’

‘জামায়াত-বিএনপি এক জোট’ উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, একাত্তর সালে জামায়াত এদেশে বর্বরতা চালায়। আর সুযোগ পেলেই এখনো এরা মানুষ হত্যা করে।’

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, দশ ট্রাক অস্ত্র আমদানির মামলা যার নামে সেই তারেক জিয়াকে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানিয়েছে এবং তাকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য বানিয়েছে।

পদ্মা সেতুর ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কৃষকদের বিনা জামানতে কৃষিঋণ দিচ্ছি। যুব সমাজের উন্নয়নে কর্মসংস্থার ব্যাংকের মাধ্যমে বিনা জামানতে ঋণের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, যাতে তারা ব্যবসায়-বাণিজ্য করতে পারে।’

বিডিআর হত্যাকা-ে বিএনপি-জামায়াত জড়িত মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের পেছনেও বিএনপি-জামায়াতের হাত ছিল। নয়তো এমনিতে খালেদা জিয়া ১২টার দিকে ঘুম থেকে ওঠেন আর ওইদিন তিনি ভোরেই ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যান। এতেই প্রমাণিত তিনি ওই ঘটনায় জড়িত।’

বিডিআর বিদ্রোহে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে দলের সভাপতি বলেন, এ ঘটনায় ৫৭ সেনা অফিসারের মধ্যে ৩৩ জনই আওয়ামী পরিবারের সঙ্গে জড়িত।

শেখ হাসিনা বলেন, ড. কামাল হোসেনকে সাবাস জানাই, তিনি আওয়ামী লীগের নৌকা ছেড়ে ধানের শীষের মুঠো ধরেছেন। কিন্তু ধান নয় চিটা ধরেছেন। তবে এক্ষেত্রে ঠিকই আছে- কামাল হোসেনও কালো টাকা সাদা করেছেন, তারেক জিয়াও করেছে। রতনে রতন চেনে।’

জনসভায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার প্রসাওে প্রত্যেক জেলা উপজেলায় স্কুল-কলেজ সরকারিকরণের বিষয়টিও তুলে ধরেন।

ভবিষ্যতেও উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে জনগণের প্রতি অনুরোধ জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ জনসভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুদ্দিন খানের সভাপতিত্বে জনসভায় দলের সভাপতিম-লীর সদস্য সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মাদারীপুর-১ আসনের এমপি নূরে আলম চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

পদ্মা সেতু হলে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত হবে

এর আগে প্রধানমন্ত্রী মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মোচন এবং সেতুর রেল সংযোগ নির্মাণ ও মাওয়া প্রান্তে নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেন। এরপর এক সুধী সমাবেশে বক্তৃতা দেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত হবে। বর্তমানে প্রবৃদ্ধি আছে ৭ দশমকি ৮৬ শতাংশ। পদ্মা সেতু চালু হলে বাড়বে আরো ১ দশমিক ২ শতাংশ। আর রেল সেতু হয়ে গেলে মোট প্রবৃদ্ধি বাড়বে ২ শতাংশ। ফলে ভবিষ্যতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত হওয়ায় কোনো সমস্যা হবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের কিছু লোক আছেন যারা দেশের স্বার্থ দেখে না, নিজেদের স্বার্থ দেখে।’ এ সময় ড. মুহাম্মদ ইইনূসের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ হারানোর পর তিনি পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে ভূমিকা রেখেছিলেন। এদের কোনো দেশপ্রেম নেই। এরা নিজেদের স্বার্থ দেখে দেশের স্বার্থ দেখে না।’

পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পের কর্মযজ্ঞে সন্তোষ প্রকাশ করেন। সুধী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে অন্যদের মধ্যে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বক্তব্য দেন।

এরপর পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি দেখতে মাওয়া পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। পরে সেখানে তিনি পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মোচন করেন।

মন্ত্রীবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সেনাবাহিনী প্রধান, সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা, পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক র্কমকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। দেশের অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও উন্নয়নের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

রেলওয়ে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু দিয়ে জাজিরা ও শিবচর হয়ে মাওয়া ও ভাঙার মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপিত হবে। এর মাধ্যমে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোরের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হবে।

চীন সরকার মনোনীত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লি. চীন জিটুজি ব্যবস্থায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ খাতে চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ২৬৬৭ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ২৩ কিলোমিটার এলিভেটেড রেলপথ নির্মিত হবে। এতে একাধিক এলিভেটরসহ দুটি প্ল্যাটফর্ম, একটি মেইন লাইন ও দুটি লুপ লাইন নির্মাণ করা হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি (বুয়েট) এই প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।

প্রধানমন্ত্রী পরে মাওয়া টোল প্লাজা সংলগ্ন মাওয়া গোলচত্বরে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close