বিশেষ প্রতিনিধি

  ১৪ অক্টোবর, ২০১৮

শুরুতেই হোঁচট, বি. চৌধুরী বাদ

বিএনপিকে নিয়ে যাত্রা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের

৭ দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্য ঘোষণা

দিনভর নানা নাটক ও শেষ পর্যন্ত ভাঙনের মধ্য দিয়েই আত্মপ্রকাশ করল দেশের নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নানা টানাপড়েন শেষে একেবাওে শেষ মুহূর্তে এসে গতকাল শনিবার বিকল্পধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে এই জোট। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন এই জোটে রয়েছে বিএনপি, গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও নাগরিক ঐক্য। এছাড়া এই ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত রয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল ইসলাম ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই নতুন জোটের ঘোষণা দেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। ফ্রন্টের ঘোষণায় নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে সর্বদলীয় গ্রহণযোগ্য সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবি করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে ৭ দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়।

নতুন ফ্রন্ট ঘোষণার সূচনা বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, এই ঐক্য কোনো দলের স্বার্থে নয়। জাতীয় স্বার্থে এই ঐক্য করা হয়েছে। আর মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে জাতীয় ঐক্য গঠনের চেষ্টা চলছিল। আজ (গতকাল) সফল হলাম। দেশ এখন দুঃশাসনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পেশাজীবীরা অনেক আগে থেকেই এটা উপলব্ধি করে আসছেন। আজ এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ঐক্য প্রক্রিয়ার সফল যাত্রা শুরু হলো।

এ সময় ড. কামালের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর, মোস্তফা মহসীন মন্টু, আ ব ম মোস্তফা আমিন, অ্যাড?ভো?কেট সুব্রত চৌধুরী, আবদুল মালেক রতন, অ্যাডভোকেট আলতাফ হো?সেন, অ্যাড?ভো?কেট জগলুল হায়দার, শ?ফিক উল্লাহ, মোস্তাক আহমদসহ ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্যান্য নেতারা।

গতকাল সকাল থেকেই নতুন জোট ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নানা ঘটনা ঘটতে থাকে। ভাঙনের কথা শোনা যায় নানাভাবে। এমনকি বি. চৌধুরীকে বাদ দিয়েই জাতীয় ঐক্য হচ্ছেÑ এমন আলোচনায় মুখর হয়ে পড়ে রাজনীতি। বিকেলে ভাঙন আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী বিকেলে ড. কামালের বাড়ি গিয়ে তাকে না পেয়ে ফিরে বি. চৌধুরীর বাড়িতে আলাদা সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেয় বিকল্পধারা। পরে ড. কামালের সংবাদ সম্মেলনের পরপরই পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে দলটি ঐক্য প্রক্রিয়া বিনষ্টের জন্য গণফোরাম সভাপতিকেই দায়ী করে। সেখানে মাহি বি. চৌধুরী বলেন, ঐক্যের জন্য তারা অনেক ছাড় দিলেও বারবার বাধা পেয়েছেন। ঐক্য গঠনের প্রতিটি পদে তাদের সঙ্গে লুকোচুরি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মাহি। মাহি বি. চৌধুরী এমনও বলেন, জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্য যদি হয় বিএনপিকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে ক্ষমতায় বসানো তাহলে তাদের সঙ্গে আলোচনায় আমরা নাই।

এর আগে বি. চৌধুরীসহ বিকল্পধারার নেতারা যখন বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাড়ির ফটকে ছিলেন তখন মতিঝিলে নিজের পেশাগত চেম্বারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আ স ম রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে বৈঠক করছিলেন ড. কামাল। বাড়ির ফটকে থেকে ফেরার সময় বিকল্পধারার মহাসচিব মাহি বি. চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মনে করি, এই ঐক্যটা না হওয়ার পেছনে কাদের ষড়যন্ত্র আছে, এটা আজ জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেল।

এর ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় ঐক্য ভাঙনের আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত সত্য হলো। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গঠনের পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা এর স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসছিলেন। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, এই ‘জগাখিচুড়ি ঐক্য’ টিকবে না। প্রক্রিয়া শুরুর মাস না গড়াতেই বি. চৌধুরী ও কামালের সম্পর্কের এই ফাটল দৃশ্যত আওয়ামী লীগ নেতাদের ভবিষ্যদ্বাণীর সঠিকতাই তুলে ধরল। এমনকি রাজনীতিতে বহুল আলোচিত এই জাতীয় ঐক্য যাত্রার শুরুতেই হোঁচট খেলো।

গতকাল নতুন জোট ঘোষণার পাশাপাশি জোটের ৭ দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়। এসব দাবি আদায়ে ধীরে ধীরে কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও নতুন জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি হলোÑ

১. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, আলোচনা করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।

২. নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা দেওয়া।

৩. বাক্, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

৪. কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন, সামাজিক গণমাধ্যমে মতপ্রকাশের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফারদের মুক্তি দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা।

৫. নির্বাচনের ১০ দিন আগে থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া।

৬. নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে তাদের ওপর কোনো ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ না করা এবং গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা।

৭. তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা এবং নতুন কোনো মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া।

একইভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষিত ১১টি লক্ষ্য হলোÑ

১. মুক্তিসংগ্রামের চেতনাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক নির্বাহী ক্ষমতা অবসানের জন্য সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, ন্যায়পাল নিয়োগ করা।

২. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ও সৎ- যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিশন গঠন করা।

৩. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা।

৪. দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা হবে। দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি কঠোর হাতে দমন ও দুর্নীতির দায়ে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা।

৫. বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান ও শিক্ষিত যুবসমাজের সৃজনশীলতা ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাকে একমাত্র যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা।

৬. জনগণের মৌলিক মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষক-শ্রমিক ও দরিদ্র মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সরকারি অর্থায়নে সুনিশ্চিত করা।

৭. জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতি ও দলীয়করণ থেকে মুক্ত করা।

৮. বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা আনা, সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা।

৯. জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ও নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক সৃজনশীল এবং কার্যকর ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা।

১০. ‘সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’ এই নীতির আলোকে পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা।

১১. প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমরসম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।

গত বছরের এপ্রিল মাসে বি. চৌধুরীর বিকল্পধারা, রবের জেএসডি ও মান্নার নাগরিক ঐক্য মিলে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। বি. চৌধুরী হন জোটের চেয়ারম্যান, মান্না হন সদস্য সচিব। শুরুতে আবদুল কাদের সিদ্দিকী এই জোটে থাকলেও পরে সরে যান। অন্যদিকে গণফোরাম সভাপতি কামাল কয়েক বছর আগে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করেন, যার সদস্য সচিব হন আ ব ম মোস্তফা আমীন।

গত কয়েক মাস আগে সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং ইসি পুনর্গঠনের ৫ দফা দাবিতে একসঙ্গে আন্দোলন চালাতে একমত হন বি. চৌধুরী ও ড. কামাল। গত ১৫ সেপ্টেম্বর একযোগে আন্দোলনের ঘোষণা দেন তারা। এরপর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কয়েকটি কর্মসূচিও একসঙ্গে পালন করেন। ৭ দফা দাবি তোলা বিএনপির নেতারাও একটি কর্মসূচিতে যোগ দেন।

এরপর বিএনপির জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার বিষয়টি আসে আলোচনায়। তখন এক পর্যায়ে বিএনপিকে জামায়াতে ইসলামীকে ছেড়ে আসার শর্ত দেয় বি. চৌধুরীর বিকল্পধারা। কিন্তু জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির কোনো স্পষ্ট বক্তব্য না আসার মধ্যেই ঐক্য প্রক্রিয়ার রূপরেখা চূড়ান্ত করতে প্রথমে গত শুক্রবার রবের বাসায় একটি বৈঠক হয়। সেখানে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না এলে পরে শনিবার বিকেলে কামাল হোসেনের বাড়িতে বৈঠকের সময় ঠিক হয়।

শনিবারের বৈঠকে বসার কথা ছিল যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও বিএনপি নেতাদের। বৈঠকে যোগ দিতে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বি. চৌধুরী বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় যান ছেলে মাহি বি. চৌধুরীকে নিয়ে। কিন্তু বাড়ির দরজা বন্ধ দেখে গাড়িতেই কিছুক্ষণ বসে থেকে ফিরে যান তারা। সেখানে মাহি সাংবাদিকদের বলেন, বাসায় দাওয়াত দিয়ে গেট খোলার কেউ নেই! একজন সাবেক রাষ্ট্রপতিকে এভাবে ডেকে এক রকম ব্যবহার কোনো শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করার কথা জানান তিনি। অথচ তখন মতিঝিলে নিজের চেম্বারে ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আ স ম রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে ড. কামাল বৈঠক করছিলেন। ওই বৈঠকেই বি. চৌধুরীকে ছাড়াই সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ভাঙনের মধ্য দিয়েই গতকাল যাত্রা শুরু করল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close