আদালত প্রতিবেদক

  ১১ অক্টোবর, ২০১৮

মুফতি হান্নানের জবানবন্দি মামলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়

বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা এবং একের পর এক হামলার সঙ্গে যার নাম জড়িয়ে আছে তিনি মুফতি হান্নান। বাংলাদেশে যেসব শীর্ষ জঙ্গির নাম গত ২০ বছর ধরে আলোচনায় ছিল তাদের মধ্যে মুফতি হান্নানের নাম ওপরের দিকে। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে হত্যা, ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর সিলেটে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল মুফতি হান্নান। সিলেটে গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল জানিয়েছেন, ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে মুফতি হান্নানের এক জবানবন্দিতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পুরো দৃশ্যপট বদলে দিয়েছিল। ঘুরে গিয়েছিল এই মামলার মোড়। তবে মুফতি হান্নানের সে জবানবন্দি ‘জোর করে’ নেওয়া হয়েছিল বলে বরাবরই দাবি করেছেন তারেক রহমান এবং লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবীরা। বিএনপি নেতাদের

আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া রায়ের পর বলেছেন, মুফতি হান্নানকে ৪০০ দিন রিমান্ডে রেখে এ স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছিল। এমনকি মুফতি হান্নান সে জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছিল বলে দাবি করেন সানাউল্লাহ মিয়া। এই স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রথম চিন্তা মাথায় আসে মুফতি হান্নানের। এত বড় একটি রাজনৈতিক হত্যাকা- চালানোর জন্য জুতসই প্লাটফর্ম খুঁজছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে তৎকালীন বিএনপি সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দীনকে একটি প্রস্তাব দেয় মুফতি হান্নান। সে প্রস্তাব ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। মাওলানা তাজউদ্দীন এবং মুফতি হান্নান পরস্পর পরিচিত ছিল। ২০০৪ সালের প্রথম দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার সাত মসজিদে তাদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। সে বৈঠকে তারা তারেক রহমান এবং লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে দেখা করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোশারফ হোসেন কাজল জানান, মামলার সাক্ষ্য প্রমাণে বিষয়টি ওঠে এসেছে। মামলার অভিযোগপত্রের কথা উল্লেখ করে মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, ‘মাওলানা তাজউদ্দীন তাকে (মুফতি হান্নান) আবদুস সালাম পিন্টুর কাছে নিয়ে যায়। আবদুস সালাম পিন্টু লুৎফুজ্জামান বাবরের কাছে যায়। তখন লুৎফুজ্জামান বাবর এবং কায়কোবাদ মিলে হাওয়া ভবনে আসে। কায়কোবাদ তখন কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।’

মুফতি হান্নান তার জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, হাওয়া ভবনের বৈঠকে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, হারিছ চৌধুরী, লুৎফুজ্জামান বাবর, ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী এবং ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিম উপস্থিত ছিলেন।

তাদের উপস্থিতির কিছুক্ষণ পর তারেক রহমান সেখানে আসেন। এমনটাই জানা যাচ্ছে আদালতে দেওয়া মুফতি হান্নানের জবানবন্দি থেকে।

মুফতি হান্নান এবং তার সহযোগীরা যাতে হাওয়া ভবনে আর না আসে সেটি জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা বাবর সাহেব এবং আবদুস সালাম পিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করবেন।’ এমনটাই জবানবন্দিতে জানিয়েছেন মুফতি হান্নান। মুফতি হান্নান এবং মাওলানা তাজউদ্দীন বাংলাদেশকে উগ্র ইসলামপন্থি ধারায় পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মতো বানাতে চেয়েছিল বলে উল্লেখ করেন মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল। ‘তারা তারেক রহমানকে আশ্বস্ত করে যে আপনি সব সময় ক্ষমতায় থাকবেন,’ বলছিলেন মোশারফ হোসেন কাজল।

শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার সঙ্গে মুফতি হান্নান এবং তারেক রহমানের মিউচুয়াল ইন্টারেস্ট (পারস্পরিক স্বার্থ) জড়িত ছিল বলে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে।

‘মুফতি হান্নান ভেবেছিল এভাবে ছোট-ছোট কাজ করে কোনো লাভ হবে না। একবারে শেখ হাসিনাকে যদি হত্যা করা যায় তাহলে হয়তো বাংলাদেশে একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারবে তারা’ জানান, অ্যাডভোকেট কাজল। ঘটনার পর মাওলানা তাজউদ্দীনকে ভুয়া পাসপোর্টের মাধ্যমে পাকিস্তান পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে পাসপোর্টে তার নাম দেওয়া হয়েছিল বাদল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close