মো. সবুজ হোসেন, নওগাঁ

  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

‘মহানুভবতার দেয়ালে’

বিদ্যালয়ের বারান্দায় দেয়ালে লেখা ‘যা তোমার প্রয়োজন নেই- তা রাখ, তোমার যা প্রয়োজন তা নাও’- নিচে ঝুলছে শিশুদের জন্য কয়েকটি পোশাক। অভাব অনটনের কারণে যাদের সন্তানদের কষ্ট করে পড়ালেখা করতে হয়-তাদের জন্য এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এই ‘মহানুভবতার দেয়াল’। আর এই উদ্যোগ নিয়েছেন নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মো. মাহফুজুল আলম। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের ‘সিরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই দেয়াল চালু হয়েছে।

ইউএনও আবু সালেহ মো. মাহফুজুল আলম বলেন, অনেক পরিবারে ছেলে-মেয়েরা এক বেলা কাজ করে স্কুলে যায়। আবার স্কুল থেকে ফিরেও কাজ করে। এরা অনেক সময় ভালো পোশাক পরে স্কুলে যেতে পারে না। তাদের সাধ থাকলেও পোশাক কেনার সাধ্য থাকে না। ফলে পুরনো ও ছেঁড়া জামা-কাপড় পরেই স্কুলে যেতে হয়। এসব দৃশ্য দেখেই এই চিন্তা মাথায় আসে। ‘যা তোমার প্রয়োজন নেই- তা এখানে রাখ, তোমার যা প্রয়োজন তা এখান থেকে নাও’- অর্থাৎ আমাদের অনেক পরিবারের সন্তানদের প্রয়োজনের তুলনায় পোশাক কিনে দিই। তাদের এ বাড়তি পোশাকগুলো অব্যবহৃত থাকে। কিন্তু যেসব গরিব পরিবারের সন্তানদের জন্য যেটুকু প্রয়োজন তা মেটানোও সম্ভব হয় না। তাই যাদের পোশাক লাগবে-তারা এখান থেকে নিতে পারবে। আর যাদের প্রয়োজন নেই- সেটা এখানে দিয়ে দেবে। আর এ নিয়মটি চালু হলে সবার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি শিশুদের মধ্যে সহানুভূতিশীল মনোভাবও জেগে উঠেবে।

উপজেলা সদর থেকে পশ্চিমে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরের এই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখো যায়, ‘মহানুভবতার দেয়ালে’ কয়েকটি হ্যাঙ্গার ঝোলানো আছে। আর তাতে ঝুলছে শিক্ষার্থীদের দেওয়া বিভিন্ন জামা, প্যান্ট, গেঞ্জি, পায়জামা, ফ্রক ও কামিজ। যেসব শিক্ষার্থী তাদের ভালো পোশাক কেনার সামর্থ্য নেই মূলত তারাই এসব পোশাক নিচ্ছে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই এই পোশাক নিচ্ছে তারা। আবার মহানুভবতার দেয়ালে তাদের অপ্রয়োজনীয় পোশাক ঝুলিয়ে রাখছে।

বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, ‘মহানুভবতার দেয়াল’ আমাদের জন্য খুবই সুবিধা দিচ্ছে। আমরা এত দিন ভালো পোশাক পরে স্কুলে আসতে পারতাম না। দেয়াল থেকে ভালো পোশাক নিয়ে স্কুলে এসেছি। খুব ভালো লাগছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবেরা খাতুন বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের এ বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী গরিব। তারা একই পোশাক পরে স্কুলে আসে এবং বাড়িতে ব্যবহার করে। ফলে সহজেই ময়লা হয়ে যায়। এখন থেকে স্কুল ড্রেস পরে স্কুলে আসবে এবং পুরনো পোশাক তারা বাড়িতে ব্যবহার করবে। ফলে উপকৃত হবে শিক্ষার্থীরা।

নিয়ামতপুর উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. মাহফুজুল আলম বলেন, মূলত গরিব শিশুদের জন্য ‘মহানুভবতার দেয়াল’ চালু করা হয়েছে। এসব শিশু অনেক সময় ছেঁড়া পোশাক পরে তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে মিশে খেলাধুলা করে। ছেঁড়া পোশাকে তাদের খারাপ লাগে। এই লজ্জা থেকেই তারা স্বাভাবিকতা থেকে ছিটকে পড়ে। সে জন্যই ‘মহানুভবতার দেয়াল’।

তিনি আরো বলেন, ইতিপূর্বে উপজেলা পরিষদ ল্যবরেটরি স্কুলে স্থাপিত ‘মহানুভবতার দেয়াল’ শিক্ষার্থীদের কন্ট্রিবিউশনে পূর্ণতা পেয়েছি। তাদের দেওয়া পোশাকগুলো সিরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মহানুভবতার দেয়ালে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের আর্থিকভাবে তুলনামূলক অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা পোশাক পেয়ে বেশ আনন্দিত। এ সময় উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সহকারী প্রকৌশলী মতিউর রহমানসহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close