প্রতীক ইজাজ

  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

রাজনীতিতে উত্তাপ

মাঠের শক্তি জানান দিতে চায় ১৪ দল

আগামী শনিবার রাজধানীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সমাবেশ। ক্ষমতাসীনরা সমাবেশকে নির্বাচনী প্রচারণা, মাঠ গোছানোসহ নির্বাচনী কর্মসূচির অংশ বলছেন। বিএনপি সমাবেশের মাধ্যমে আন্দোলনের চূড়ান্ত বার্তা দিতে চায়। আবার সর্বশক্তি নিয়ে মাঠ দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। বিএনপিও ভয় পাচ্ছে নেতাকর্মী সমাগম নিয়ে। শেষ পর্যন্ত কী হয়Ñসেদিকেই তাকিয়ে সবাই

পাল্টাপাল্টি কোনো কর্মসূচি নয়; নির্বাচনী প্রচারণা ও মাঠ গোছানোর অংশ হিসেবেই আগামী শনিবার রাজধানীতে সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এবার বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করতে পারেÑএমন আশঙ্কা থেকে গত ফেব্রুয়ারিতেই দেশব্যাপী সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে দলটি। বিশেষ করে যুক্তফ্রন্ট গঠন এবং যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের নেতৃত্বে নতুন জোট গঠনের খবরে গত ১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের এক সভায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে নির্বাচনী মাঠ দখলে রাখতে জোটগতভাবে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবেই শনিবারের সমাবেশ বলে জানান আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রগুলো।

পাঁচ দফা নির্বাচনী দাবির ঘোষণার মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যেই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া বৃহৎ আকারের জোট গঠনের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছে। গত শুক্রবার একটি নাগরিক সমাবেশও করেছে তারা রাজধানীতে। সেদিন থেকেই এই ঐক্যের রাজনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত রোববার নিউইয়র্কে এক নাগরিক সংবর্ধনায় অভিযোগ করেন, বিএনপিসহ ‘দুর্নীতিবাজদের’ সঙ্গে নিয়ে কামাল হোসেন ও এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সরকার উৎখাতের চেষ্টা করছেন। এর আগে শনিবার নাগরিক সমাবেশের পরপরই সেতুমন্ত্রী ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সমাবেশে বিএনপি অংশ নেওয়ায় এই জোটকে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষকদের সাম্প্রদায়িক ঐক্য বলে অভিহিত করেন। আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম ‘ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা আবার মাঠে নেমেছে’ বলে অভিযোগ করেন। তিনি এমনও বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভ-ুল করার লক্ষ্যে এই চিহ্নিত ব্যক্তিদের সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত জোট শনিবার তথাকথিত ঐক্যের মহড়া দিয়েছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই অশুভ শক্তির চক্রান্ত প্রতিহত করা হবে বলেও সেদিন মন্তব্য করেন তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি তাদের পূর্বনির্ধারিত সমাবেশের তারিখ দুই দিন পিছিয়ে আগামী শনিবার করবে বলে গতকাল হঠাৎ করেই ঘোষণা দেয়। একই দিন বিকেল ৩টায় মহানগর নাট্যমঞ্চে ক্ষমতাসীনদের পূর্বঘোষিত সমাবেশ রয়েছে। ফলে হঠাৎ করেই ডাকা বিএনপির সমাবেশকে ভালো চোখে দেখছেন না ক্ষমতাসীনরা। গতকাল এ ব্যাপারে ১৪ দলীয় মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম ঢাকা দখলে রাখার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, নেতাকর্মীরা এলাকায় প্রস্তুত থাকবেন। ওই অপশক্তি যেন মাঠে নামতে না পারে। ওদের মাঠে প্রতিহত করবেন, রাস্তায় প্রতিহত করবেন। তিনি এমনও বলেন, আগে থেকেই ঢাকা দখলে ছিল আমাদের, ইনশাআল্লাহ আগামীতেও ঢাকা আমাদের দখলে থাকবে। এমনকি সারা বাংলাদেশ শেখ হাসিনার দখলে থাকবে বলে ঘোষণা দেন নাসিম।

দুই দলের একই দিন সমাবেশ হওয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কোনো অবনতির আশঙ্কা রয়েছে কি নাÑজানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেন, কোনো ধরনের সহিংসতা বা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ প্রস্তুত রয়েছে। নেতারা জানান, শনিবারের সমাবেশ হঠাৎ করেই ডাকা কোনো কর্মসূচি নয়। দল ফেব্রুয়ারি থেকেই নির্বাচনী মাঠে নেমেছে। তখন থেকেই দলের ১৫টি টিম তৃণমূলে সভা-সমাবেশ করছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সমাবেশ শুরু করেন। জেলা নেতাদের মাঠ গোছাতে দেওয়া হয় ডেডলাইন। লক্ষ্য ছিল মাঠ গুছিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র’ প্রতিরোধে প্রস্তুত থাকা।

দলীয় সূত্রগুলো আরো জানায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই এবার নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি ও বিএনপি-জামায়াতের ‘নির্বাচন বানচাল ষড়যন্ত্র’ প্রতিহতে প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত জুন থেকেই অক্টোবর পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি উদ্ভূত পরিস্থিতি ঠা-া মাথায় মোকাবিলার কৌশল নেওয়া হয়েছে। ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি ও নির্বাচনকালীন সহিংসতা প্রতিরোধে দলের তীক্ষè দৃষ্টি রয়েছে।

গত ১ সেপ্টেম্বর ১৪ দলের সভায় তফসিল ঘোষণার আগে পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকার ঘোষণা দেয় ১৪ দল। সেদিন ১৪ দলের বৈঠকে তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়। একই সঙ্গে সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন ও নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তা দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাদের। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটের পক্ষ থেকেও তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। লক্ষ্য থাকবে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের আয়ত্তে রাখা। সেদিন নির্বাচন নিয়ে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে সেপ্টেম্বরের ১৮ তারিখ থেকে ১৪ দল মাঠে নামার তথ্য জানান জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম। তিনি জানান, পর্যায়ক্রমে সারা বাংলাদেশে বিভাগীয় সমাবেশ করা হবে। এ সমাবেশ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর জোটের শরিক দলগুলো যার যার মতো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তিনি সেদিন বলেন, আমাদের সামনে একটাই কাজ, ৭১-এর ঘাতক, ৭৫-এর খুনিদের পরাজিত করা। মাঠে-ময়দানে এবং নির্বাচনের মাঠে পরাজিত করা। নির্বাচন ঠেকানোর ক্ষমতা কারো নেই।’

সেই নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবেই শনিবারের সমাবেশ বলে জানান দলের নেতারা। দলীয় সূত্র মতে, সমাবেশে ব্যাপক শোডাউনের উদ্যোগ নিয়েছে ১৪ দল। বাধ্যতামূলক সবাইকে সমাবেশে আসতে বলা হয়েছে। এ জন্য স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্যদেরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শনিবারের সমাবেশের পর ১৪ দলের ধারাবাহিক কর্মসূচি রয়েছে। সব চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিটি বিভাগে অক্টোবরের মধ্যে সমাবেশ করা হবে।

এ ব্যাপারে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপির সমাবেশ ছিল ২৭ সেপ্টেম্বর। তারা মঙ্গলবার আমাদের সমাবেশ ঘোষণার পরপরই হঠাৎ করেই দুই দিন পিছিয়ে শনিবার সমাবেশ ডাকে। এটি তাদের নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। কিন্তু কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ মাঠ ছাড়বে না। নির্বাচন বানচালের কোনো ষড়যন্ত্র প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। এ জন্য দলের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন। যেকোনো অপশক্তিকে প্রতিহত করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close