বদরুল আলম মজুমদার

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ঐক্য প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ

বিএনপিতে টানাপড়েন

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া বিএনপি অংশ নেবে কি নেবে নাÑ এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছিল দীর্ঘদিন থেকে। শেষ পর্যন্ত বিএনপির চার নেতা গত শনিবারের জাতীয় ঐক্যের সমাবেশে অংশ নিয়ে সেই জল্পনার অবসান ঘটিয়েছেন। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে দলের ভেতরেই। ঐক্যজোটে অংশ নেয়ায় ভালোভাবে নেননি অনেক নেতাই। গত শনিবার মহানগর নাট্যমঞ্চে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের ডাকে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিবসহ বিএনপির চার সিনিয়র নেতা। দলটির চারজন নেতা সমাবেশে উপস্থিত হওয়ায় জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গতি পেলেও খালেদাপন্থী হিসেবে পরিচিত নেতারা এ প্রক্রিয়া থেকে রয়ে যাচ্ছেন আড়ালে। খালেদার প্রতি নিবেদিত দলের কট্টর এই অংশটির সঙ্গে অঙ্গ ও সহযোগী দলের নেতারা এই ঐক্য প্রক্রিয়া ব্যাপারে কোনো কথা বলছেন না।

বেগম জিয়ার প্রতি অনুগত বা তৃণমূলের নেতারা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে একেবারেই চুপ রয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে দলের সেই কট্টর অংশটি ‘নো খালেদা, নো ইলেকশন’ নীতি নিয়ে অটল থাকলেও জাতীয় ঐক্যর মাধ্যমে উদারপন্থী নেতারা কি নির্বাচনের পথে হাঁটছেন?

এসব নিয়ে বিএনপির দুইজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা মনে করছেন এমন বিষয়ের অবতারণা হওয়ার সুযোগ নেই। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার যোগ দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে দলকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও। আর দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এই রকম একটি ঐক্যর ডাক অনেক আগেই দিয়েছেন। সুতরাং এখানে দ্বিমত, বিভক্তি বা এ জাতীয় কথা আসতে পারে না। তবে এটা ঠিক যে বর্তমান সরকারের অধীনে এবং বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। আগামী নির্বাচন বিষয়ে বিএনপি এমন অবস্থান থেকে সরে যায়নি। উদার অংশের নেতাদের নাগরিক সমাবেশের যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে তারা বলেন, দলের বৈঠকের সিন্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির এই প্রতিনিধিদল ড. কামালের নাগরিক সমাবেশে যোগ দেয়।

গত শনিবার গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে নাগরিক সমাবেশ। এই সমাবেশের বিএনপির সিনিয়র চারজন নেতার উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ড. মঈন খান। দলে আলোচনা আছে বিএনপির এই নেতারা যেকোনো মূল্যে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে।

এদিকে কট্টরপন্থী বলে পরিচিত বিএনপির নেতাদের যুক্তি হলো দলীয় সরকারের অধীনেই যদি এবার নির্বাচনে যাই তাহলে ২০১৪ সালে কেন গেলাম না। দুইটি মৌলিক বিষয় পূরণ না হলে তারা কোনোভাবেই নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষপাতী নয়। বিষয়গুলো হলো বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অর্জন। এই দুই দাবি পূরণ না হলে কোনোভাবেই বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত নয় বলে মত কট্টরপন্থী নেতাদের।

বিএনপির এই নেতারা মনে করেন ডা. কামাল-বি. চৌধুরীর ঐক্য প্রক্রিয়া হলো সরকারের আরেকটি ফাঁদ। তাদের মতে, এই ঐক্য শেষ পর্যন্ত নির্বাচনমুখী হবে এবং এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবেন বি. চৌধুরী। এ অংশের নেতারা বি. চৌধুরীকে কখনোই বিশ্বাস করতে পারছেন না। আর শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের এক পর্যায়ে যদি জোট ভেঙে যায় এবং এর একটি অংশ যদি নির্বাচনে যায় তখন সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি। আর এমনটি ঘটলে পরিস্থিতি হবে ২০১৪ সালের চেয়েও খারাপ। ২০১৪ সালে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচন বর্জন করেছিল। আর এবার জাতীয় ঐক্য করে অর্ধেক অংশ যদি নির্বাচনে যায় তাহলে সেটি হবে এক বড় প্রহসন। আর এই প্রহসনের মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া হবে সরকারকেই।

দলের উদার অংশের নেতারা যে নির্বাচনের পথে আছেনÑ এমন আশঙ্কার মাঝেই নেতাকর্মীদের সর্তক করেছেন খালেদাপন্থী হিসেবে পরিচিত দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি সর্বশেষ বিএনপির প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে দলের তৃণমূলের উদ্দেশ্যে বলেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া কেউ কেউ নির্বাচনে যাওয়ার চিন্তা করছে। খালেদা ছাড়া যারা নির্বাচনে যাওয়ার চেষ্ঠা করছেন এসব ষড়যন্ত্রকারীদের চিনে রাখার জন্য নেতাকর্মীদের সজাগ থাকারও পরামর্শ দেন তিনি।

দলীয় সূত্রগুলো জানায়, জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে এসব কট্টর অংশের নেতাদের অনাগ্রহের আরো একটি বড় কারণ হচ্ছে জামায়াত। যারা বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার ব্যাপারে শুরু থেকেই এক ধরনের চাপ দিয়ে আসছে। যদিও দলটির চেয়ারপারসন জেলখানা থেকেই বার্তা দিয়েছেন নিজের জোট ঠিক রেখে ঐক্য নিয়ে সামনে এগোতে। তাদের শঙ্কা হচ্ছে চেয়ারপারসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে বলেই ঐক্যের ব্যাপারে একবারে চুপ কট্টর অংশের নেতারা। জামায়াতকে বাদ দেওয়ার জন্য তারা বিভিন্নভাবে কাজও করছেন।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, সর্বশেষ খালেদা মুক্তির দাবিতে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে দাওয়াত ছাড়াই অংশ নেয় জামায়াত। দাওয়াত ছাড়া জামায়াতকে প্রোগ্রামে আসতে দলের এই কট্টর অংশটি মধ্যস্থতা করেছেন বলেও নিশ্চিত করেছে সূত্র। জামায়াত বিনা দাওয়াতে বিএনপির কর্মসূচিতে এমন এক সময় উপস্থিত হয়েছেন যখন জাতীয় ঐক্য নিয়ে মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা বিতর্কিত এ দলটিকে এক পাশে রাখার চেষ্টা করছিলেন। বিনা দাওয়াতে জামায়াত যেদিন বিএনপির অনুষ্ঠানে অংশ নেয় সেদিন মহাসচিব জাতিসংঘের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ উদার অংশের চারজন নেতা ঐক্য প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে গেলেও বিএনপির গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ অন্য নেতারা ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে যায়নি এবং জাতীয় ঐক্য নিয়ে কোনো আলোচনাতেই অংশ নিচ্ছেন না। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের শরিক তিনটি দলও জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে প্রকাশ্যে নেতিবাচক কথাবার্তা বলছেন। জোটের অন্য দলগুলো নাগরিক সমাবেশে অংশ নিলেও দাওয়াত পাওয়া সত্ত্বেও যায়নি কর্লেন অলির এলডিপি, বীরপ্রতীক ইবরাহিমের কল্যাণ পার্টি ও জেবেল রহমান গাণির বাংলাদেশ ন্যাপ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close