শাহ্জাহান সাজু

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি

ডিসেম্বরের আগেই মামলার উদ্যোগ

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (নিউইয়র্ক ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় সে দেশের আদালতে মামলা দায়ের করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির পর এ-সংক্রান্ত মামলা করার কোনো আইনি বৈধতা থাকবে না বাংলাদেশ ব্যাংকের। ফলে এ বছরের ডিসেম্বরের আগেই এ মামলা রুজুর সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, সামনে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনের আগেই মামলার প্রস্তুতি শেষ করে ফাইল জমা দিতে চাইছে মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও মামলা করার প্রস্তুতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ল ফার্মকে মামলা পরিচালনার জন্য নিয়োগের কথা বলেছেন। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ডিসেম্বরের মধ্যেই এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করবে বাংলাদেশ। কিছুটা দেরিতে হলেও মামলার মাধ্যমে চুরি যাওয়া অর্থের পুরোটাই ফেরত আনা সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই কর্মকর্তা। এ মামলার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি জানান, আইন মোতাবেক এমন ঘটনায় মামলা করতে সর্বোচ্চ তিন বছর সময় পাওয়া যায়। সে হিসেবে আগামী ফেব্রুয়াারির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে আদালতে যেতে হবে।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হয়। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ওই বছরের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা। আগামী ২ অক্টোবর ওই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শেষ সময়সীমা। নির্দিষ্ট সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় দায়ী প্রতিষ্ঠান রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) জুপিটার শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক মায়া শান্তোস দেগুইতো জেল, অর্থদ-সহ উভয় দ-ে দ-িত হতে পারেন। তার বিরুদ্ধে চলমান মামলার রায় ঘোষণা হবে শিগগিরই। কেননা রিজার্ভ চুরি সংঘটনের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের চূড়ান্ত কনফারমেশন ছাড়াই তিনি অর্থ ছাড় করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। গত ৫ জুলাই বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের পক্ষ থেকে করা তদন্তের একটি প্রতিবেদন ফিলিপাইনের আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানেও ফিলিপাইনের আরসিবিসির কর্মকর্তাদেরই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। মানি লন্ডারিং কিংবা সে দেশের ব্যাংকিং আইনভঙ্গের অপরাধে শাস্তি পেতে যাচ্ছেন মায়া। এমনকি নিউইয়র্কের কোর্টে বাংলাদেশ মামলা করার আগেই মায়ার বিরুদ্ধে চলমান মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে। বাংলাদেশের সিআইডির দুই কর্মকর্তা প্রতিবেদনটি জমা দেন। পাশাপাশি তারা মৌখিক বক্তব্য দিয়েছেন আদালতে। কর্মকর্তা দুজন হলেন সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান ও ফাহিম হোসেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার ইতোমধ্যেই ফেরত এসেছে। আর ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায় ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে। তবে ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের কোনো হদিস মেলেনি এখনো। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষের বিষয়গুলো দেখভাল করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close