নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আজ ঢাকা ছাড়ছেন

রোহিঙ্গা সংকটের কথা জাতিসংঘে তুলবেন প্রধানমন্ত্রী

পাচ্ছেন দুই সম্মাননা

লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে সঙ্কট সামলাতে বিচক্ষণ ভূমিকা রাখায় দুইটি আন্তর্জাতিক সম্মাননা পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মাননা দুইটি হলো ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ও আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড। আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে এই সম্মাননা দুইটি তুলে দেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহদুদ আলী এই বিষয়টি জানিয়েছেন। জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর নিউইয়র্ক সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আজ শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে রওনা হয়ে লন্ডনে একদিন যাত্রাবিরতি করে রোববার নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন। অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকটের কথা জোরালোভাবে তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী, দেবেন কয়েকটি প্রস্তাবনাও। এবারের সফরে তিনি ৫০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।

মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আসা আরো প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বাংলাদেশ বহন করে চলেছে কয়েক দশক ধরে। কক্সবাজার হয়ে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী আশ্রয়স্থল। বিশ্বনেতারা মনে করেন, নিজেদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে উদারতার পরিচয় দিয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানবিক কারণে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে নজির স্থাপন করায় প্রেস সার্ভিস নিউজ এজেন্সি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এবার ইন্টারন্যাশনাল এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড দেবে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান ও বুট্রোস ঘালি এবং ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মার্তি আহতিসারি এর আগে এ সম্মাননা পেয়েছেন। দ্বিতীয় পুরস্কারটি দেবে দাতব্য সংগঠন ‘গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন’। রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন শেখ হাসিনাকে স্পেশাল রিকগনিশন ফর আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার জাতিসংঘে এবারের সাধারণ অধিবেশন শুরু হয়েছে। অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী মঙ্গলবার নিউইয়র্ক পৌঁছাবেন। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের এবারের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘মেকিং দি ইউএন রিলেভেন্ট টু অল পিপল : গ্লোবাল লিডারশিপ অ্যান্ড শেয়ারড রেসপনসিবিলিটিস ফর পিসফুল, ইকুইটেবল অ্যান্ড সাসটেইনেবল সোসাইটিস।’ রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য চ্যালেঞ্জগুলো এবারের সাধারণ অধিবেশনে তুলে ধরবে বাংলাদেশ।

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশন তিন কারণে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যু উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবারের সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে বেশ কয়েকটি ইভেন্ট হবে। যেখানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত নেওয়া উদ্যোগ এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরার সুযোগ পাবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রাধিকারভুক্ত বিষয়গুলোর একটি হলো বিশ্ব শান্তি ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রম। শান্তি বিনির্মাণ ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের নেওয়া উদ্যোগগুলোর ধারাবাহিকতায় এবারের অধিবেশনে শান্তিরক্ষা বিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কিত, বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে বেশকিছু উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে বাংলাদেশ অংশ নিয়ে নিজের অর্জন তুলে ধরার পাশাপাশি অন্য দেশের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় ও নিজের প্রাধান্য নিশ্চিত করার সুযোগ পাবে।’

এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের বিতর্ক পর্বে আগামী বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিবারের মতো এবারো তিনি বাংলায় বক্তব্য দেবেন। বক্তব্যে তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে গত বছর প্রস্তাবিত ৫ দফার ধারাবাহিকতায় পুনরায় কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, গণতন্ত্রের ধারা সমুন্নত রাখাসহ বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্য বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরবেন।

জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া জাতিসংঘে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা, নিরাপদ অভিবাসন, ফিলিস্তিন জনগণের অধিকারসহ সাম্প্রাতিককালের আলোচিত বিষয়গুলোর ওপর বক্তব্য দেবেন।

মাহমুদ আলী জানান, অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পযায়ের বৈঠকে যোগ দেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উদ্যোগে ‘গ্লোবাল কল অব অ্যাকশন অন ওয়ার্ল্ড ড্রাগ প্রবলেম’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন। এছাড়া জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের আমন্ত্রণে শরণার্থী বিষয়ক এক সভায় ও নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভায় যোগ দেবেন। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশি আয়োজিত সংবর্ধনায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে যুক্তরাষ্ট্র চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত গোলটেবিল মধ্যাহ্নভোজন বৈঠকেও যোগ দেবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী আগামী ১ অক্টোবর সকালে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন হয়ে দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close