reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ

অনেক পরীক্ষার ম্যাচ আজ

ঠিক যেন বিরান ভূমিতে ফুল ফুটিয়ে বসে আছে শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়াম। সেই ফুলের প্রজাপতি হয়ে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। আবুধাবির পরিপূর্ণ গ্যালারির এই মাঠেই কাল সুপার ফোরের প্রস্তুতি সেরেছে বাংলাদেশ। আসলে অনুশীলন কিংবা প্রস্তুতি নয়; বাংলাদেশ খেলেছে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ। এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটির মর্যাদা শুধু এতটুকুই। এই ম্যাচের মূল্য হারিয়েছে গত বুধবারই; ঘটা করে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) টুর্নামেন্টের ‘সূচি ফিক্সিং’ করায়। ‘আনুষ্ঠানিকতা’এর ম্যাচের ভাগ্য যেদিকেই নির্ধারণ হয়েছে সেটার কোনো প্রভাব নেই ফাইনালে ওঠার রাউন্ডে। কিন্তু এই ম্যাচের ধকলটা কাটিয়ে ওঠার সময় পাচ্ছে না বাংলাদেশ। আজ বিকেলেই যে নতুন শুরুর জন্য নেমে পড়তে হচ্ছে টাইগার শিবিরকে! মহাগুরুত্বপূর্ণ এই লড়াইয়ে মাশরাফিদের প্রতিপক্ষ- চিরচেনা ভারত। টুর্নামেন্টের মাঝপথে সূচি ঢেলে সাজানোয় সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে এই দলটাই।

ভ্রমণক্লান্তি নেই। অন্যদের তুলনায় সেরা চারের মিশন শুরুর জন্য পর্যাপ্ত সময়ই পেয়েছে ভারত। আবুধাবি স্টেডিয়ামে এসেও খেলতে হচ্ছে না রোহিত শর্মাদের। টুর্নামেন্টে তাদের সবকটি ম্যাচের মঞ্চ দুবাই স্টেডিয়ামকে নির্ধারণ করে দিয়েছে এসিসি। আজ এখানেই ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। টানা তৃতীয়বার ফাইনালে ওঠার পথ সুগম করতে বাংলাদেশের ভাবনায় এখন শুধুই জয়।

তাই কালকের আফগান ম্যাচে কোনো রকম ঝুঁকি নেয়নি লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। নবি-রশিদ-আসগরদের বিপরীতে অনিয়মিত একদাশ নামিয়ে দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তাতে চোটের অস্বস্তিতে থাকা মুশফিকুর রহিম ও মুস্তাফিজুর রহমান পেয়েছেন বিশ্রাম। আগের ম্যাচের একাদশে থাকাদের মধ্যে বিশ্রাম বলতে এই দুজনেরই। বাকিদের কাল আবুধাবিতে কাঠফাটা রোদে ধৈর্য শক্তির চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে হয়েছে। পরীক্ষাটা আরো কঠিন হয়ে ওঠার কথা আজ ভারতের বিপক্ষে। আফগান ম্যাচ শেষ করে হোটেলে ফেরার কয়েক ঘণ্টা পরই যে দুবাইতে হাজির হতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে! এমনিতেই ব্যস্ত সূচি, তার ওপর প্রতিকূল কন্ডিশন। টাইগার শিবির যে যে মহাসংকটে আছে সেটা খোদ কাপ্তান

মাশরাফিই স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও স্বস্তির একটা ব্যাপার আছে। সূচি পরিবর্তন না হলে এবং গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলে সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচটা আজ আবুধাবিতে এসেই খেলা লাগত বাংলাদেশের। কিন্তু এসিসির বাণিজ্যিক ভাবনা এবং স্বাগতিক ভারতের অপরিবর্তিত ভেন্যু নির্ধারণ করায় দুবাইতেই নতুন শুরু করতে হচ্ছে টাইগারদের।

পর পর দুইদিনে দুই-দুইটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা অবশ্য বাংলাদেশের আগে থেকেই আছে। তাও আবার এশিয়া কাপের মতো বড় টুর্নামেন্টেই। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন; চলমান আসরের সঙ্গে আগের টুর্নামেন্টের পার্থক্যটা বিস্তর। এত সংকটের মধ্যে সুখবর আছে টাইগারদের জন্য। ভারতীয় দলে যে চোটের আগ্রাসন লেগেছে! ইনজুরি শেষ করে দিয়েছে হার্দিক পান্ডিয়া, অক্ষর প্যাটেল এবং শার্দুল ঠাকুরের এশিয়া কাপ। এই ত্রয়ীর চোট খুলে দিয়েছে দীপক চাহার, রবিন্দ্র জাদেজা ও সিদ্ধার্থ কৌলের দলে ফেরার দরজা।

রাহুর দশা প্রায় লেগেছিল বাংলাদেশ দলেও। টুর্নামেন্টের উদ্বোধন ম্যাচে লঙ্কান পেসার সুরঙ্গ লাকমালের বিধ্বংসী বাউন্সারে কব্জিতে চোট পেয়েছিলেন তামিম ইকবাল। যা তাকে ফেরত পাঠিয়েছে দেশে। ওই ম্যাচেই ১৪৪ রানের কলজয়ী ও ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলতে গিয়ে মুশফিক কাতরেছেন পাঁজরের ব্যথায়। উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের জন্য বিশ্রামটা জরুরি হয়ে পড়েছিল। চোট শঙ্কায় ছিলেন সাকিবও। শঙ্কার কালো মেঘ অবশ্য সরে গেছে। কাল আবুধাবিতে তার ঘূর্ণিতেই নাকাল হয়েছে আফগানিস্তান।

পরশু দুবাইয়ে ‘এ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচটাও নিরর্থক হয়ে পড়েছিল। ভারত-পাকিস্তানের নিরুত্তাপ ম্যাচের লড়াইটাও হয়েছে নিষ্প্রাণ। মহারণটাকে বড্ড একতরফা বানিয়ে ৮ উইকেটের বিশাল জয় তুলে নিয়েছে ভারত। ‘ঘুমপাড়ানি’ ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ১৬২ রানে গুটিয়ে দিয়ে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা জয়ের জন্য সময় নিয়েছিল মাত্র ২৯ ওভার! ভারতের জয়ের আনন্দ বাতাসে মিশে যেতেও সময় লাগল না। ইনজুরি যে গ্রাস করেছে তাদের!

একদিনের ক্রিকেটে ভারতের সঙ্গে ৩৩ বারের দেখায় ২৭ বারই হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোর মুখোমুখি লড়াইয়ের ফলাফল ওসবের ধার ধারছে না। প্রতিবেশী দলটির সঙ্গে টাইগারদের যে পাঁচটি জয় আছে সেসব সুখস্মৃতি এখনো তাজা। এই ভারত আবার লাল-সবুজ শিবিরকে দুঃস্বপ্নও উপহার দিয়েছে। পরপর দু-দুটি ফাইনালে বাংলাদেশ হেরেছে তাদের কাছেই। দুটোই অবশ্য ক্ষুদ্রাকৃতির ফরম্যাটে। এশিয়া কাপের শিরোপা নির্ধারণীয় ম্যাচের পর গেল ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে হেরেছে টাইগাররা। এসব দুঃস্মৃতির ক্ষতে প্রলেপ দিতে পারে মরুর দেশের চলমান টুর্নামেন্টের শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি। বাংলাদেশের চোখ সেদিকেই। শিরোপা জয় অবশ্য অনেক দূরের পথ, আপতত মাশরাফিদের ভাবতে হচ্ছে আজকের ম্যাচ নিয়েই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close