নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস

আইনের ৮টি ধারার বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের আপত্তি আমলে না নিয়েই ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস করেছে জাতীয় সংসদ। বিলে কোনো ব্যক্তি দেশের বাইরে থেকে দেশের কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাহায্যে দেশে প্রস্তাবিত বিধানের অধীন কোনো অপরাধ করলে তা দেশে হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। এছাড়া কোনো ব্যক্তি দেশে থেকে দেশের বাইরে এ বিধানের অধীন কোনো অপরাধ করলে তা দেশে হয়েছে বলেও বিবেচিত হবে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিতে সংসদের ২০তম অধিবেশনে গতকাল বুধবার ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল ২০১৮ পাস করা হয়েছে। ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০২১ : ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণেও লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ নিরাপদ ব্যবহার আবশ্যক। বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে এর সুফলের পাশাপাশি অপপ্রয়োগও বৃদ্ধি পেয়েছে। সাইবার অপরাধের মাত্রাও বাড়ছে। তাই জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ডিজিটাল অপরাধসমূহের প্রতিকার, প্রতিরোধ, দমন, শনাক্তকরণ, তদন্ত এবং বিচারের উদ্দেশ্য আইন প্রণয়ন আবশ্যক।

বিলে বলা হয়েছে, যদি কেউ একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার সংঘটিত করেন তাহলে যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা ১ কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। আইনে পুলিশকে বিনা ওয়ারেন্টে তল্লাশি ও গ্রেফতারের পাশাপাশি ক্ষতিকর তথ্য উপাত্ত ব্লক বা অপসারণের বিধানও রাখা হয়েছে। এছাড়া এই আইনের অধীনে কৃত সব কাজকে দায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এমনকি জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিলের মহাপরিচালককে প্রয়োজন বোধে নিজ ক্ষমতা এজেন্সির কোনো কর্মচারী এবং অন্য কোনো ব্যক্তি বা পুলিশ কর্মকর্তাকে অর্পণ করারও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ফলে জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিলের মহাপরিচালকের অনুমোদন ছাড়াই পুলিশ যেকোনো স্থানে প্রবেশ, তল্লাশি করতে পারবে এবং বাধাপ্রাপ্ত হলে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে।

বিলের ৮ ধারায় বলা হয়েছে, জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিলের মহাপরিচালকের নিজ অধিক্ষেত্রভুক্ত কোনো বিষয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য উপাত্ত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি করলে তিনি ওই তথ্য উপাত্ত অপসারণ, ক্ষেত্রমতো ব্লক করার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবেন। একইধারায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় মহাপরিচালকের মাধ্যমে একইভাবে তথ্য উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আইনের এ ধারায় সরকারকে অবহিত করে বিটিআরসিকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রাপ্ত অনুরোধ কার্যকর করার সক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

বিলের ২১ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রপাগান্ডা ও প্রচারণা চালান বা তাতে মদদ দেন তাহলে ১০ বছরের কারাদন্ড ও এক কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার সংঘটিত করেন তাহলে যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা ৩ কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।

২৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে (ক) ইচ্ছা করে এমন কোনো তথ্য উপাত্ত প্রেরণ করেন, যা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক অথবা মিথ্যা বলে জানা থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্ত বা হেয়প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে কোনো তথ্য উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করেন বা (খ) রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণœ করার বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর বা তদুদ্দেশ্যে অপপ্রচার বা মিথ্যা বলে জানা থাকা সত্ত্বেও কোনো তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করতে সহায়তা করেন তাহলে তিনি ৩ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৩ লাখ টাকা অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। উক্ত একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার সংঘটিত করেন তাহলে ৫ বছরের কারাদন্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার বা উসকানি প্রদানের অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন, যা ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধে আঘাত করে তাহলে তিনি ৫ বছরের কারাদন্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার সংঘটিত করেন তাহলে ১০ বছরের কারাদন্ড বা ২০ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। ২৯ ধারায় বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে প্যানাল কোডের ৪৯৯ ধারায় বর্ণিত মানহানিকর কোনো তথ্য প্রচার বা প্রকাশ করেন তাহলে তিনি ৩ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। তবে একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার সংঘটিত করেন তাহলে ৫ বছরের কারাদন্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান যা বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটানোর উপক্রম হয় তাহলে তিনি ৭ বছরের কারাদন্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। তবে একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার সংঘটিত করেন তাহলে ১০ বছরের কারাদন্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি (অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট ১৯২৩-এর আওতাভুক্ত) কোনো অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটন করেন বা করতে সহায়তা করেন তাহলে তিনি ১৪ বছর কারাদন্ড বা ২৫ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। যদি একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার সংঘটিত করেন তাহলে যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা ১ কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। ৪৩ ধারায় বলা পুলিশকে গ্রেফতারি পরোয়ানা ব্যতিরেকে তল্লাশি, মালামাল জব্দ ও গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এক্ষত্রে জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিলের মহাপরিচালকের অনুমোদন ছাড়াই পুলিশ যেকোনো স্থানে প্রবেশ, তল্লাশি করতে পারবে এবং বাধাপ্রাপ্ত হলে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে। কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম ও নেটওয়ার্কসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ও দলিলাদি জব্দ ও ওই ব্যক্তি গ্রেফতার করতে পারবে। তবে তল্লাশি সম্পন্ন করার পর এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালকে প্রতিবেদন দিতে হবে।

বিলের ৫৪ ধারায় ট্রাইব্যুনালের আদেশ অনুসারে এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ সংঘটনে জড়িত কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, ফলপি ডিস্ক, কম্প্যাক্ট ডিস্ক, টেপ-ড্রাইভ বা অন্য আনুষঙ্গিক উপকরণ বাজেয়াপ্ত হবে। বিলের ৫৫ ধারায় এই আইনের অধীনে সংঘটিত কোনো অপরাধের তদন্ত ও বিচারের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিধান রাখা হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, প্রয়োজন হলে ‘অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পারিক সহায়তা আইন ২০১২-এর বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে। আইনের ৫৬ ধারায় জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিলের মহাপরিচালক প্রয়োজনবোধে এই আইনের বলে তার ওপর অর্পিত যেকোনো ক্ষমতা বা দায়িত্ব লিখিতভাবে এজেন্সির কোনো কর্মচারী এবং অন্য কোনো ব্যক্তি বা পুলিশ অফিসারকে অর্পণ করতে পারবেন। এই আইনের অধীনে কৃত সব কাজকে দায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সরল বিশ^াসকৃত কাজকর্ম শিরোনামে বিলের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীনে দায়িত্ব পালনকালে সরল বিশ^াসে কৃত কোনো কাজের ফলে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তজ্জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মচারী বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা বা অন্য কোনো আইনগত কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close