নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

একনেকে ১৪ প্রকল্প অনুমোদন

দেড় লাখ ইভিএম কিনছে সরকার

মাথাপিছু আয় ১৭৫১ ডলার, জিডিপি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ

বহুল আলোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার প্রকল্প পাস করেছে সরকার। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এটিসহ ১২ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ প্রকল্পও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৮ হাজার ৮৪২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ২৫৭ কোটি ১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৩ হাজার ৪৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা খরচ করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। এদিকে, একনেক সভায় মাথাপিছু আয় ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের বিষয়গুলো জানান পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ব্রিফিংয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ দত্ত উপস্থিত ছিলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন রেকর্ড হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশে। এছাড়া মাথাপিছু আয় হয়েছে ১ হাজার ৭৫১ ডলার। এছাড়া মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। যা প্রাথমিক হিসেবে ছিল ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

এদিকে, নির্বাচন আইনের সংস্কার, রাজনৈতিক দলের মতামতসহ সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সংসদ নির্বাচনে এক তৃতীয়াংশ আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে কিনা জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এটি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে হলে আরপিও সংশোধন করতে হবে।

ইসির পাঠানো প্রকল্প প্রস্তাবনায় দেখা গেছে, ইসি সচিবালয়ের ৩ হাজার ১১০ জন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সামগ্রিক দক্ষতা বৃদ্ধি ও এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের মূল দায়িত্ব হলো জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করা।

ইভিএম ব্যবহারের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের সিদ্ধান্তের কথা গত ৩০ আগস্ট জানায় ইসি। এরই মধ্যে তাদের পক্ষ থেকে প্রকল্প অনুমোদনের আগেই এসব যন্ত্রপাতি আনতে ব্যাংকে এলসিও (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মাত্র দেড় লাখ ইভিএম সিস্টেম এবং সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি কেনার জন্য প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮২১ কোটি ৭ লাখ টাকা। এতে প্রতি ইউনিট ইভিএমের দাম পড়বে প্রায় ২ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ কাল ধরা হয়েছে চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। যদিও বর্তমান সরকারের মেয়াদ ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শেষ হবে। তার আগে ডিসেম্বরে নতুন সরকার গঠনের জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে ভোটের বাকি আছে মাত্র কয়েক মাস।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি সম্পর্কে অনুশাসন দিয়েছেন যে ইভিএম ধীরে ধীরে প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যবহার করতে হবে। প্রাথমিকভাবে নগর এলাকায় ব্যবহার করা হবে, পরে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে ব্যবহার করা হবে।

প্রকল্প দলিল থেকে জানা গেছে, ইভিএম তৈরির জন্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্ব কারিগরি ও পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) নমুনা ইভিএম তৈরি করেছে।

২০১১ সালের পর কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে পুরোদমে ইভিএম ব্যবহার করতে হলে আরপিও সংশোধন করতে হবে। আরপিওতে শুধু স্থানীয় নির্বাচনে মেকানিক্যাল ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়েছে।

গতকাল একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো ৭৫০ কোটি টাকার মিরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল; ২৫৩ কোটি টাকার শেখ হাসিনা তাঁত পল্লী স্থাপন; ৫২৮ কোটি টাকার চট্টগ্রাম-রাঙামাটি জাতীয় মহাসড়কের হাটহাজারী থেকে রাউজান পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত করা; ১২৯ কোটি টাকার জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়ক প্রশস্ত ও মজবুত করা; ৪৬১ কোটি টাকার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন; ৮০ কোটি টাকার ভারতের সঙ্গে রেলসংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে চিলাহাটি এবং চিলাহাটি বর্ডারের মধ্যে রেলপথ নির্মাণ; ১৫৭ কোটি টাকার গোপালগঞ্জ জেলায় বিএআরআইয়ের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন এবং দেশের পশ্চিমাঞ্চলের পরিবেশ-প্রতিবেশ উপযোগী গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করার মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন; ১১২ কোটি টাকার বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, বরগুনা, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর কৃষি উন্নয়ন; ৮৩ কোটি টাকার গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা-পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন; ২৫৮ কোটি টাকার জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমি প্রতিষ্ঠা; ১১৩ কোটি টাকার শাহবাগের বাংলাদেশ বেতার কমপ্লেক্স আগারগাঁওয়ে স্থানান্তর, নির্মাণ ও আধুনিকায়ন; ৮২৪ কোটি টাকার খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূর করতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকার প্রোগ্রাম ফল সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেস প্রকল্প।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close